“পড়তে বসতে ইচ্ছা করেনা” এর চেয়ে বড় সমস্যা হলো “যা পড়ি তা ভূলে যাই”। ছোটবেলায় আমাদের যে পরিমাণ তথ্য মনে থাকতো বড় হতে হতে তার পরিমাণ আরোও কমতে থাকে। এটি একটি সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু যত বড় হই ততই আমাদের পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ে অর্থাৎ কম্পিটিশন বাড়ে। তাই আমাদের বেশি বেশি পড়া মনে রাখতে হয়। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক বন্ধু থাকে যারা পড়াশুনার পাশাপাশি আরও নানাবিধ কাজ করে কিন্তু দিনশেষে পরীক্ষায় ঠিকই বেশি নাম্বার পায় কিন্তু আমাদের অনেকেরই সারাদিন পড়েও পড়া মনে থাকে না।
কাউকে এর সমাধান জিজ্ঞেস কী জিজ্ঞেস করলেই সবাই বলে “ডোন্ট ওয়ার্ক হার্ডার, ওয়ার্ক স্মার্টার”। কিন্ত আসলে এই হার্ড ওয়ার্ককে স্মার্ট ওয়ার্ক বানানোর উপায়টা কী ? পড়া মনে না থাকার পেছনে আমাদের পরিচিত অভ্যাসগুলো এজন্য অনেক বেশি দায়ি।
যেমনঃ ছোটবেলা থেকে যে মুখস্থবিদ্যার অভ্যাস আমাদের শেখানো এটা পুরোটাই বাজে একটা প্রক্রিয়া। মুখস্থ করতে থাকলে আমাদের সৃজনশীলতা কমে এটা আমরা সবাই জানি। এরকম আরেকটা বাজে প্রক্রিয়া হলো বারবার রিডিং পড়া। আমরা বেশিরভাগই পড়া মনে রাখার জন্য বারবার রিডিং পড়তে থাকি, এটি আসলে কোনো বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া না। আবার অনেকে উত্তরপত্র দেখে দেখে ম্যাথ সলভ করি। যার ফলে পরবর্তীতে আর আমাদের মাথায় অংকটি থাকে না। আবার অনেকে রিডিং পড়তে পড়তে নোট নেই যেটাও বিজ্ঞানসম্মত কোনো প্রক্রিয়া না।
আমাদের প্রচলিত ভূল পদ্ধতিগুলোর একটা লিস্ট করা যাক।
১। মুখস্থবিদ্যা
২। বারবার রিডিং পড়া
৩। সলভ দেখে দেখে অংক করা
৪। রিডিং পড়তে পড়তে নোট নেয়া
তাহলে এবার আসি এ থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে তা নিয়ে।
আপনাকে ভালো কাজ করতে হলে প্রথমে খারাপ কাজ বাদ দিতে হবে। তাই প্রথম কাজ হবে আপনার উপরের কোনো একটি অভ্যাস আপনার মধ্যে থাকলে তা বাদ দেয়া। এরপর নিম্নোক্ত দুইটি উপায় ফলো করতে হবে।
১। Active recall :
এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত উপায়। এক্টিভ রিকল মানে হচ্ছে একটি জিনিশ পড়ার পর তা আপনার মাথা থাকা অবস্থায় মনে করা। অর্থাৎ বারবার এক জিনিস রিডিং না পড়ে আপনি যদি একবার পড়ার পর সেখান থেকে কিছু কী ওয়ার্ড লিখে রাখেন তারপর বই বন্ধ করে কী ওয়ার্ড দেখে তা মনে করার চেষ্টা করা। এতে পড়া মনে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। একই কথা অংক করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নোট নেয়ার ক্ষেত্রেও বই দেখে নোট না নিয়ে আপনি যা পড়বেন তা মাথায় রেখে বই বন্ধ করে নোট নেয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার মস্তিষ্ক পড়াটি মনে রাখার জন্য বেশি কষ্ট করবে।
২। Repetition:
আপনি যা ই পড়ুন না কেন তা আবার কিছুদিন পর রিপিট করার চেষ্টা করুন। অবশ্যই বই দেখে না। বই না দেখে মস্তিষ্ক থেকে রিপিট করুন। কাজটা খুব একটা সহজ না। কিন্তু অভ্যাস হয়ে গেলে কাজটি করতে খুব বেশি কষ্ট হবে না। একটু কষ্ট না করলে আপনার ব্রেন আপনার পড়া মনেও রাখবে না।
উপরোক্ত ২ টি প্রক্রিয়াই বিজ্ঞানসম্মত এবং পরীক্ষালব্ধ। এই দুইটি প্রক্রিয়া আমি শিখেছি সিয়াম শাহিদ নূর ভাইয়ার কাছ থেকে। উনি একজন হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট এবং ইউটিউবার। তাই আপনিও এই দুইটি প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন।