কোন কাজ ছোট নয়

কাজ একটি ছোট শব্দ মাত্র দুই অক্ষরের। কাজ শব্দটির সাথে আমরা সকলে অবগত আছি। কাজ শব্দটি দুই অক্ষরের হলেও ইহা অনেক ব্যাপক অর্থ প্রকাশ কর থাকে। কাজের সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। তবুও কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো। আল্লাহর অশেষ কৃপায়।

কাজ হলো এমন একটি সত্তা যা পৃথিবীকে পরিচালিত করছে। পৃথিবীর এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না কাজ শব্দটি তার অপরিচিত। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন কাজের সাথে জড়িত। কেননা কাজ হলো জীবন বা জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে। মানুষ কাজ করে তার বিনিময়ে যে প্রদেয় অর্থাৎ যে অর্থ উপার্জন করে সেটা দিয়ে সাধারণত জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মানুষকে তার জীবিকা নির্বাহের জন্য অবশ্যই তাকে কোন না কোন কাজের শরণাপন্ন হতে হবে। এদিক থেকে বিবেচনা করে বলা যায় যে কাজের গুরুত্ব অতুলনীয়।

আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছে। তার বিভিন্ন শ্রেণির পেশা অর্থাৎ কাজের সাথে জড়িত। যেমন কেউ ডাক্তার, প্রকৌশলী, ঠিকাদার, শিক্ষক, পাইলট, কেরানি, কর্মচারী কৃষক কুলি মজুর শ্রমিক দারোয়ান ঝাড়ুদার ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবী পেশার মানুষ রয়েছে। সবাই কাজ করে থাকেন তাদের পেশা অনুযায়ী। এসব মানুষদের নিয়ে আমাদের সমাজ গঠিত হয়। প্রত্যেকে সমাজের উন্নয়নে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে থাকে।

আমাদের সমাজ প্রত্যেকের কাজের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকে যদি ডাক্তার হয় তাহলেও রোগী হবে কারা। সবাই প্রকৌশলী হলে বাড়ি নির্মাণ কারা করাবে আবার সবাই যদি ব্যবসায়ী হয় তাহলে চাকুরীজীবী কারা হবে এভাবে সমাজের গতিশীলতা থমকে যাবে। বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ তার বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করে সমাজর গতিশীলতা রক্ষা করে থাকে। আমাদের শিক্ষিত সমাজের মানুষেরা নিচু শ্রেণির কাজের মানুষগুলোকে অবহেলা করে থাকে।

যা মানব আদর্শের পরিপন্থী। আমরা কেন তাদের অবহেলা অবজ্ঞা, অবমাননা, করব আমরা তাদের প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শন করবো। তাদের নিচু শ্রেণীর মানুষ বলে ঘৃণা করব না, সদাচরণ সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার করব এটা তাদের কাজের অধিকার। তাহলে আসুন আমরা একটা উদাহরণ দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। আমাদের সমাজে যারা কৃষক আছে তারা যদি রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজি সোনার ফসল না ফলা তো তাহলে কীভাবে আমরা সোনার ফসল পেতাম। আমাদের না খেয়ে থাকতে হতো। কৃষকেরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে নানা রকম খাদ্য উৎপাদন করে আমরা ব্যবহার করে থাকি যা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে থাকে।

মুচি যদি জুতো সেলাই না করতো তাহলে জুতো সেলাই আমাদের করতে হতো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মীরা যদি ময়লা পরিষ্কার না করতো এটা আমাদের করতে হতো। যদি দারোয়ান ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি অফিস পাহারা না দিত তাহলে আমাদের কোটি টাকার বাড়ি নিজেদেরই পাহারা দেওয়া লাগতো। ছোট শ্রেণির মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা সুখে বসবাস করছি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের সুখের আবাস হয়েছে।

কাজ একটি চিরন্তন সত্য। আমরা বিশ্বে বরেণ্য মনীষীদের মনীষীদের দিকে তাকায় তাহলে দেখতে পারি তারা কাজকে ছোট মনে করতেন না। তারা সকল কাজকে সমান মনে করতেন এবং সকল শ্রেণীর মানুষকে সম্মান করতেন।

ভারতের রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম পড়ালেখার খরচ বহনের জন্য খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। তিনি সে ছেলে যে কিনা পরে ভারতের মিসাইলম্যান ও রাষ্ট্রপতি পদে ভূষিত হয়েছিলেন।

আমরা তার কাজ সম্পর্কে উক্তি জানি,
“তুমি যদি তোমার কাজ অসম্মান করো অবহেলা করো,
ফাকি দাও, তাহলে তোমার সবাইকে স্যালুট করতে হবে।
আর তুমি যদি তোমার কাজকে সম্মান করো, তাহলে
তোমাকে কাউকে স্যালুট করতে হবে না। ”

এ কথার সারমর্ম হল আমরা যে কাজ করিনা কেন সেই কাজকে সম্মান করতে হবে। নিজের কাজ নিয়ে নিজেকে ছোট মনে করা যাবে না। নিজেকে হেয় বা ছোট ভাবা করা যাবে না।

আমরা যদি বিজ্ঞানী আলবাট আইনস্টাইনের জীবনে থাকায়। তাহলে দেখি যে তিনি প্রথমে একটি অফিসের কেরানি ছিলেন। কেরানি হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞান হিসেবে নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটান। কিন্তু তিনিও তার জীবনের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ছোট কাজের মাধ্যমে।

আমেরিকার বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের নাম সকলেই শুনেছি তিনি ছিলেন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি তার প্রথম জীবনে মুচি ছিলেন। তিনি মানুষের জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি তার কাজকে কখনো ছোট মনে করেননি, তিনি তার কাজ নিয়ে হীনমন্যতা প্রকাশ করেননি। তিনি সম্মান প্রদর্শন করতেন, এবং নিজের চেষ্টায় ১৪তম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।

আমাদের সমাজে এরকম হাজার উদাহরণের দৃষ্টান্ত রয়েছে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মুখ নিঃসৃত একটি উদ্ধৃতি হল এরকম
” হীন থেকে হীন পেশা
অবলম্বন করো, যা কারো
কাছে হাত পাতা থেকে উত্তম। ”

এই উদ্ধৃতি থেকে আমরা লাভ করি যে কাজ যত ছোট হোক না কেন নিজে কাজ করে উপার্জন করা অনেক অনেক উত্তম। অন্যের উপর নির্ভর আমরা লজ্জাতে করে যা কাজ পাই তা আমরা করতে পারি। যে কোন কাজ ছোট কিংবা বড় কাজ সম্মান ও সততার সহিত একনিষ্ঠ ভাবে করব। তাহলে আমাদের অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে না।

আমরা উপরোক্ত আলোচনা বুঝতে পারলাম যে কাজ একটি চিরন্তন সত্য। কাজ ব্যতীত সমাজ গঠিত হয় না। মানুষ ও সমাজ কাজ যারা সম্পূর্ণ অচল। যে মানুষ সমাজে কর্মক্ষম তার কোন মূল্য নেই। সে সমাজ ও দেশের বোঝা ব্যতীত আর কিছুই নই।
আপনি যদি শত তার সহিত কোন কাজ করেন তাহলে আপনি দেশের একজন সু নাগরিক হিসেবে উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছেন। কাজ হল একান্ত প্রয়োজন।

পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে মানুষকে হলে কোন না কোন কাজ করতে হবে। আমরা যদি ছোট শ্রেণীর কাজগুলো করা মানুষদের অবহেলা হেয় ছোট বলে ঘৃনা না করে। তাদের কাজের সম্মান দিয়ে তাদের প্রতি একটু আন্তরিক হই। তাহলে আমাদের জন্য পৃথিবী বসবাসের জন্য আরও উপযোগী হবে।

আমরা প্রত্যেক কাজ ও ছোট শ্রেণির কাজের মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করবো।

Related Posts