গুণাবলী বন্ধু ও শত্রু উভয়কে আকর্ষণ করে

এক বনে এক টিয়া পাখি থাকতো। বেশ ভালো গলার আওয়াজ ছিল তার। সে দিনের বেলায় জেগে খুব সুন্দর করে গান গাইতো। তার আশেপাশে থাকা অন্য কোন টিয়া পাখি এমনকি অন্য কোন পাখি ও তার মত গান গাইতে পারতো না। টিয়া পাখিটা এই ভেবে বেশ আনন্দ পেত যে তার মত এত সুন্দর করে কেউ গাইতে জানেনা। সে বেশ ভালো আনন্দ বোধ করত তার এই গুণাবলীর কারণে। অন্য পাখিরাও তাকে দেখে বেশ হিংসা করত।

কিন্তু সে তাতে কিছু মনে করত না। সে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত। সবাইকেই সে নিজের বন্ধু ভাবতো।সে কখনো অহংকার করতো না। আর অন্য পাখিরাও তাকে হিংসা করলেও কেউ তাকে মন থেকে অপছন্দ করতো না। সবাই তাকে মন থেকে ভালোবাসতো। একদিন সেই বনে শিকার করতে আসে এক পাখি শিকারী।

শিকার করা পাখিগুলোকে বাজারে বিক্রি করে তার সংসার চলত। সেদিন সে এসেছিল একটি সুন্দর পাখি শিকার করতে কারণ রাজার মেয়ে তার ঘরে পোষার জন্য একটি পাখি খুজছিল। টিয়া পাখিটি প্রতিদিন তার খাবার খোঁজার জন্য সকালে তাঁর ঘর থেকে বের হতো এবং সারাদিন তার খাবার সংগ্রহ করে বিকেল বেলায় তার ঘরে ফিরে আসতো। সারাদিনে যেটুকু সে খাবার পেত তাতেই তার দিন আনন্দে কেটে যেত এবং সে মনের সুখে গান গাইতো। সেই দিন টিয়া পাখিটি বেশ ভালো খাবার সংগ্রহ করেছিল। যার ফলে সে মনের সুখে সুরেলা গলায় গান গাওয়া শুরু করলো। তার সুরেলা গানের আওয়াজ শিকারির কানে পৌঁছলো। শিকারি এত সুন্দর গলা কোন পাখির কন্ঠে কখনো শুনেনি। সে ভাবল এই পাখিকে ধরে রাজাকে উপহার দিলে সে ভারি খুশি হবে এবং তাকে চড়া দাম দিবে। যেই কথা সেই কাজ।

পাখিটিকে ধরার জন্য শিকারি ফাঁদ পাতলো। পাখিটিও শিকারির ফাঁদে ধরা পড়ল। শিকারি পাখিটিকে নিয়ে রাজ দরবারে হাজির হল। রাজার এবং রাজকন্যার পাখিটিকে দেখে বেশ পছন্দ হলো। রাজা সেই শিকারিকে একশত স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করল। শিকারি খুশি হয়ে চলে গেল। পাখিটিকে বন্দি করে রাখার জন্য তৈরি করা হলো একটি সুরক্ষিত খাঁচা। সেই খাঁচা এখন হলো তার নতুন বাসস্থান। খাঁচাটি রাজকন্যা তার ঘরে নিয়ে জানলার কাছে ঝুলিয়ে রাখল। পাখিটির যত্ন নিতে তারা কখনো গাফিলতি করত না।

যার ফলে পাখিটির তেমন কোনো অসুবিধা হতো না। শুধু এইটুকু ব্যাপার ছিল যে সে তার স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে। সে মনে মনে এইটুকু রাগ সব সময় পোষণ করতো। তাই সে কখনো আর দিনের বেলা গান গাইতো না। সে শুধু রাতের বেলায় গান গাইতো। তার গানের আওয়াজ এক বাদুড় শুনতে পেল। বাদুরের কাছে তার কন্ঠ অনেক ভালো লাগলো। বাদুরটি প্রায়ই সেই জানালার কাছে এসে টিয়া পাখির গলায় গান শুনতো।

সে একদিন পাখিটিকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কিভাবে এই খাঁচায় বন্দী হলে? সে বলল, এক শিকারী তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে ধরে নিয়ে আসে বনে থেকে এবং রাজার কাছে বিক্রি করে দেয়। তারপর থেকে সে এখানে বন্দি। বাদুর তাকে বলে, কেন তুমি নিজের গুণ প্রকাশ করতে গেলে। যদি সেই দিন তুমি গান গাইতে তাহলে আজকে তোমার এই বন্দী জীবন যাপন করতে হত না।

তুমি এক কাজ করো, আস্তে আস্তে খারাপ করে গান গাওয়া শুরু করে দাও এমনকি দিনের বেলাতেও শুরু করে দাও। টিয়া পাখিটি তাই করল। সে বেসুরো গলায় গান গাওয়া শুরু করে দিল। তার এই গান শুনে রাজকন্যা অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। তাই রাজকন্যা পাখিটিকে খাঁচা থেকে বের করে দিল এবং বলল দূর হয়ে যাও তোমার আর থাকার যোগ্যতা নেই এখানে। টিয়া পাখিটি তৎক্ষণাৎ বের হয়ে গেল এবং পরে বাদুড়কে ধন্যবাদ জানালো তার এই উপকার করার জন্য।

Related Posts

11 Comments

মন্তব্য করুন