ঘুরতে ঘুরতে খাগড়াছড়ি……… সংক্ষিপ্ত একটি ভ্রমণ

অসংখ্য ঝর্ণা আর বুনো পাহাড় মিলিয়ে এক জানা-অজানা রহস্যের নাম খাগড়াছড়িতে একটা চক্কর দিয়ে আসার ইচ্ছাটা বহুদিনের। আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে পর্যটনের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে এই জেলাটিই, কারণ জানি না। যাওয়ার পথে বাসে আলাপ হলো এক ত্রিপুরা তরুণের সাথে, কিংবা শহরের বাঙ্গালী দোকানদার, চাকমা ট্যাক্সিচালক বা সাধারণ পথচারী……… সবাই একটা কথাই বলছিলো বার বার, এখানে কোন ভয় নাই, কোন সমস্যা নাই !!! আরে বাবা ভয়ের কি আছে ? অবশ্য দেয়ালে দেয়ালে রাইটিংগুলো কিঞ্চিত ইয়ে…… “সংঘাত নয়, শান্তি চাই, পাহাড়ী বাঙ্গালী ভাই ভাই” এইসব আরকি। সম্ভবত পার্বত্য সংঘাতের কিছু দিক এখানে এখনো রয়ে গেছে। শান্তিবাহিনীর আত্নসমর্পণ হয়েছিলো এই খাগড়াছড়ির জেলা স্টেডিয়ামেই।

২০ ফেব্রুয়ারির রাতে শান্তি পরিবহনের টিকেট কেটে আমরা পাঁচজন দাঁড়িয়ে আছি কমলাপুরে। সাড়ে দশটার গাড়ি এসে কাউন্টারে দাড়ালো পৌনে একটার সময়। ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙ্গে দেখি, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ !! যাত্রাপথের মহাকাব্যিক বর্ণনা আর নাই বা দিলাম, ২১শে ফেব্রুয়ারী বিকেল তিনটার দিকে কুমিল্লা আর রাত সাড়ে আটটায় আমরা নামলাম খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ডে।

খাগড়াছড়ি – ম্যাপ

আমাদের প্ল্যান ছিলো মূলত সাজেক যাওয়ার, সেই মোতাবেক রওনা দিয়ে প্রথমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে রাঙ্গামাটির বাঘাইহাট এসে পৌছাতেই ধরা খেয়ে গেলাম। আগামীকাল সাজেকে প্রধাণমন্ত্রী আসছেন, সর্বসাধারণের চলাচল একেবারেই নিষিদ্ধ। যাক, কপাল যে খারাপ সেটা ঢাকাতেই টের পেয়েছিলাম……… চাঁদের গাড়ীর ছাঁদে বসে বসে ফিরে আসলাম খাগড়াছড়ি শহরে, বাঘাইহাট চেকপোস্টের মিলিটারীদের ভাষায় যার ডাকনাম – কে সি !

সময় নষ্ট করে লাভ নেই, দ্রুত এইবার রিসাং ঝর্ণার দিকে। মেইন রোড থেকে কিঃমিঃ দুয়েক ভেতরে ঢুকে খাড়া পাহাড় বেয়ে নামা। কিছুদূর গিয়ে সিড়িও পাওয়া গেল…… নেমে গিয়ে পাওয়া গেল রিসাং ঝর্ণা। অবশ্য শীতের শেষ, বসন্তের শুরুতে ঝর্ণায় পানি খুব কম……… যে জায়গাটা দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে, প্রায় ৬০ ডিগ্রী খাড়া ঢাল আর অসম্ভব পিচ্ছিল। মানুষজন স্লিপারের মত স্লিপ কেটে যাচ্ছে সমানে, যার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল আমরা আমাদের চারপাশেই দেখছি…… অসংখ্য তলা ফাটা জিন্স ! কারা যেন একেবারে ঝর্নার গোড়ায় কাঠকয়লা দিয়ে পিকনিকের রান্না করে গেছে……… আমরা বাঙ্গালীরা কোন জায়গা পেলে সেটাকে পচিয়ে দিতে খুবই সুদক্ষ।

রিসাং ঝর্ণা

আলুটিলা – প্রধাণ ফটক

এরপর আলুটিলা ! খাগড়াছড়ির ট্যুরিস্ট স্পট বলতে মূলত এই আলুটিলাই বোঝানো হয়। পাঁচ টাকায় টিকেট আর দশ টাকায় মশাল কিনে আমরা আলুটিলা পাহাড় (টিলা আবার পাহাড় হয় কেমনে ?) বেয়ে নামা শুরু করলাম। এইটা নাকি খাগড়াছড়ির উচ্চতম পাহাড়। তবে টপ থেকে শহরের একটা দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায়। আমরা সিড়ি বেয়ে পৌছালাম গুহার মুখে। ভিতর থেকে ধোয়া বেরিয়ে আসছে। মশালের ধোয়া। মশালগুলো জ্বালিয়ে প্যান্ট গুটিয়ে আমরা ঢুকে গেলাম ভেতরে। হাটু পানি, উচু নিচু পাথুরে বোল্ডার আর ঘুটঘুটে অন্ধকার।

Related Posts

12 Comments

মন্তব্য করুন