চীন তৈরি করলো কৃত্রিম সূর্য | কিভাবে কাজ করে এই সূর্য?

বর্তমান সময়ে যেকোনো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট অথবা নিউজ চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি এটি অবশ্য শুনেছেন যে চীন একটি আর্টিফিশিয়াল সূর্য তৈরি করে নিয়েছে। যার তাপমাত্রা আসল সূর্যের থেকেও অনেক গুণে অধিক। তাহলে এখন কি পৃথিবীতে একের পরিবর্তে দুইটি সূর্য হবে? এটা কি সত্যি কোনো কৃত্রিম সূর্য? নাকি অন্যকিছু? আর যদি সূর্যই হয়ে থাকে তাহলে এটা তৈরির পেছনে চীনের কি উদ্দেশ্য আছে? আজকে এইসব প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

সত্য বলতে বর্তমান পৃথিবীর এনার্জির সাপ্লাই এর জন্য বিভিন্ন সোর্স থেকে এনার্জি প্রডিউস করা হয়। যেমন সোলার পাওয়ার প্লান্ট, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট আর থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট। এর মধ্যে শুধু সোলার পাওয়ার প্লান্ট পরিবেশ বান্ধব হয়ে থাকে যার থেকে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু এই সোলার প্যানেলের সাহায্যে সম্পূর্ণ পৃথিবীর চাহিদাকে বর্তমান সময়ে পূরণ করে সম্ভব নয়। অপরদিকে থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট যেখান থেকে রেডিয়েশনের ভয় অধিক থাকে এবং এটা পরমাণু বোমের থেকে কোনো অংশে কম নয়। এ জন্য বিজ্ঞানীরা এমন একটি এনার্জি সোর্সের খোঁজ করছেন যার থেকে আমরা ক্লিন এনার্জি পাবো এবং এটা সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব হবে। আর বিজ্ঞানীদের এই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমাদের সূর্য। আর বিজ্ঞানীরা অনেক বছর থেকেই কৃত্রিমভাবে নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে এনার্জি তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন, কিন্তু এমনটা করা ভীষণ কঠিন একটি কাজ।

কারণ এর জন্য লাখো ডিগ্রি তাপমাত্রাকে সহ্য করার মতো কোনো ম্যাটেরিয়ালসের প্রয়োজন হবে, যেখানে নিউক্লিয়ার ফিউশন করা যাবে। নিউক্লিয়ার রিয়াক্টার নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে লিখলে এনার্জি তৈরি করে। অপরদিকে নিউ ফিউশন দ্বারা এনার্জি তৈরি করার জন্য একটি নিউক্লিয়ার ফিউশন রিয়্যাক্টরের প্রয়োজন হবে, যেটা চীন তৈরি করার চেষ্টা করছে এবং এটাতে কিছুটা সফলতাও এসেছে। এই রিয়্যাক্টর তৈরির পরিকল্পনা ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয়। যার জন্য একটি সংস্থা আইটিইআর এর গঠন হয়, যার মানে হল ইন্টারন্যাশনাল থার্মো নিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিয়্যাক্টর। এর মধ্যে মোট ৩৫টি দেশ যুক্ত আছে। কিন্তু চীন সবাইকে পেছনে ফেলে এই নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরে ১৫০ মিলিয়ন ডিগ্রীর হাই টেম্পারেচারকে সাসটেন্স করেছে, যেটা সূর্যের কোরের থেকেও দশগুণ অধিক তাপমাত্রা। এটাই প্রথমবার নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরকে স্টার্ট করা হয়েছে, এটা ঠিক যে এই প্রজেক্ট এখনো সম্পূর্ণভাবে কমপ্লিট হয়নি।

এবার জানা যাক কি এই রিয়্যাক্টর? আর কিভাবে এতো অধিক টেম্পারেচারকে সহ্য করা গেছে? সূর্যের মতো পৃথিবীতে নিউক্লিয়ার ফিউশন করার জন্য একটি টোকামাক নামের একটি রিয়্যাক্টরকে বা চুল্লি তৈরি করা হয়েছে, যেটার মোট ওজন ২৩ হাজার টন। যার মধ্যে হাইড্রোজেনের আইসোটোপকে ভরা হয়। আর তারপর ইলেকট্রিক কারেন্টের মাধ্যমে আইসোটোপকে গরম করা হয়, যার থেকে হাইড্রোজেনের ইলেকট্রন তার এটম থেকে আলাদা হয়ে যায়। যার থেকে ওখানে হাইড্রোজেন আয়নের চার্জট প্লাজমাকে হাই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ব্যবহার করে হট প্লাজমাকে একটি সেন্ট্রাল এরিয়াতে কমপ্রেস করা হয়। আর এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারণে হট প্লাজমা রিয়্যাক্টারের সার্ফেসকে স্পর্শ করতে পারে না, যার জন্য রিয়্যাক্টারের সার্ফেস গলে নষ্ট হয় না। সেই সাথে রেডিয়েশন থেকে আসা হিট থেকে বাঁচানোর জন্য রিয়্যাক্টারে একটি কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ওই কুলিং সিস্টেমের সাহায্যে রিয়্যাক্টারকে সমসময় ঠাণ্ডা করা হয়। এই ভাবেই হাইড্রোজেন প্লাজমাকে একে অপরের সাথে ফিউশন করে সূর্যের মতই এনার্জির তৈরি করা হচ্ছে। আর এ কারণেই এটাকে কৃত্রিম সূর্য বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে এটা কোনো সূর্য নয়। এই প্রজেক্ট সম্পন্ন হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন