চোর থেকে গ্রামের পাহারাদার হওয়ার গল্প

এক গ্রামে বাস করতো রামুলাল। সে গরু চোর ছিল। সে তার গ্রামে চুরি করতো না। সে আশে পাশের গ্রামে গরু চুরি করতো। আর সেই গরু তার বাড়িতে এনে রং বদলে দিতো। যেমনঃ কালো গরুকে সাদা বানিয়ে দিতো আর সাদা গরুকে লাল বানিয়ে দিতো।
তারপর গরুগুলোকে বাজারে বিক্রি করে দিতো। সেই গ্রামে কারো গরু হারিয়ে গেলে রামুলালের কাছে জরিমানা নিতো। কারণ, সবাই জানে যে রামুলাল সেই গ্রামের একমাত্র গরু চোর। আর অন্য কোন চোর সেই গ্রামে আসার সাহস পাবেনা। আসলেও আগে রামু লালের কাছে অনুমতি নিতে হতো।

আর অনুমতি না দিলে কেউই চুরি করতে পারবে না। কারণ সে সেই গ্রামের বড় চোর। তার মতো চোর আশে পাশের গ্রামে একটাও নেই। একদিন রামুলালের মারাত্মক জটিল রোগ ধরা পড়লো। এর ফলে রামুলাল বিছানা থেকে উঠতে পারে না। সে ভাবে চুরি করা ভালো না। সে আরও ভাবে যে এরপর আর চুরি করবে না। রামুলালের গ্রামের পাশের গ্রামে বাস করতো টুলিকাল। সেও ছিল একজন গরু চোর।

সে রামুলালের রোগের কথা শুনে অনেক খুশি হলো। কারণ, টুলিকালের মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছিল। সেই বুদ্ধিটা হচ্ছে, সে রামুলালের গ্রামে চুরি করবে। এর ফলে তাকে কেউই সন্দেহ করবে না। আর পুরো দোষ রামুলালের হবে।
তাই একদিন রাতে টুকিকাল গরু চুরি করতে রামুলালের গ্রামে ঢুকে পড়ল। আর সে ২ টি গরু চুরি করলো। এরপর সেই গরু ২ টিকে তার বাড়িতে এনে রং পালটে দিলো। যখন সকাল হলো গরুর মালিক তার গোয়াল ঘরে দেখে যে একটি গরুও নেই। এরপর গ্রামের লোকজনদের ডাকে। আর বলে আমার গরু রামুলাল চুরি করেছে।

সবাই তাই বিশ্বাস করলো। এরপর সবাই রামুলালের বাড়িতে গিয়ে তাকে ডাকাডাকি করলো। আর বলল, রামুলাল তুমি কাল রাতে যে ২ টি গরু চুরি করেছ, সেই গরুর দাম দিয়ে যাও। যখন রামুলাল ঘর থেকে বের হচ্ছিলো না, তখন উচ্চস্বরে গালাগালি করতে লাগলো যে, গরুর দাম দাও, নইলে তোমার বাড়ি ভাংচুর করব। আর তোমাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিব।
কিন্তু রামুলাল যে অসুস্থ, সেটা কেউই জানতো না। এরপর কয়েকজন ঘরে ঢুকে তাকে বের করতে গেলো। কিন্তু তারা ঘরে ঢুকে দেখে রামুলাল বিছানা থেকে উঠতে পারতেছে না। রামুলাল বলল, আমি কোন গরু চুরি করিনি। আমিতো কয়েকদিন বিছানা থেকে উঠতেই পারছি না।

একথা শুনে সবাই ভাবলো চুরি তো হয়েছে। তাহলে চুরি করলো কে? তারপর তারা রামুলালকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার মতে এই কাজটি কে করেছে?
রামুলাল বলল, আমার অসুস্থতার কারণে কেউ এর সুযোগ নিচ্ছে। যেন গরু চুরি হলে তোমরা আমাকে চোর বলে ধরো। কিন্তু সেই চোর জানে না যে, চুরি করার বুদ্ধি একই হয়। তোমরা যদি চোরকে ধরতে চাও, তাহলে আমি নিশ্চিত সে আবারো চুরি করতে আসবে।

তাই তোমরা সবাই আপন আপন গোয়াল ঘরে লুকিয়ে থাকবে। আর যেমনি চোর চুরি করতে আসবে তোমরা ধরে ফেলবে। আর সবাইকে ডাক দিবে। রামুলালের বুদ্ধি সবাই মেনে নিল।
রাত হলো। সবাই আপন আপন গোয়াল ঘরে লুকিয়ে থাকলো। টুলিকাল আবারো গরু চুরি করতে আসলো। একজনের গোয়াল ঘরে চুরি করতে ঢুকতেই সেই গোয়াল ঘরের মালিক তাকে ধরে ফেলে। আর সবাইকে ডাক দেয়। চোর ধরে ফেলেছি কৈই সবাই তারাতারি আসো।

এরপর সবাই দেখে চোর হচ্ছে পাশের গ্রামের টুলিকাল। তাকে মারতে মারতে মেরে ফেললো। আর রামুলালকে সবাই ধন্যবাদ দিলো। সবাই রামুলালকে গ্রামের পাহারাদার বানিয়ে দিলো। আর মাস শেষে তাকে তার প্রাপ্য টাকা দিয়ে দেয়।
তো বন্ধুরা কি বুঝলে চুরি করা ভালো না খারাপ? চুরির ফল ভয়ানক, তাই না?
সকলকে ধন্যবাদ।

Related Posts

12 Comments

মন্তব্য করুন