একতাই বল। মানুষের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। স্থানীয় সমস্যা সমাধানে দশের লাঠি – একের বোঝা নীতি অবলম্বন করে ক্রমাগত উন্নয়নে অবদান রাখছে আমাদের গ্রামীণ সমাজ। যেকোন কাজ সম্পাদন বা সমস্যার সমাধানে যৌথ উদ্যোগ বা মানুষের অংশগ্রহণ বেশ সুবিধার। আমাদের মাতৃভাষা আর মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। সে প্রেরণাই আমাদের গ্রামগুলোকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়ানো নীরব ঘাতকের নাম “করোনা ভাইরাস“। যা কোন একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দ্বারা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। চাই একতা – চাই যৌথ উদ্যোগ। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পাড়াশাওলী গ্রামের একতাবদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা। নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলাধীন নিরমইল ইউনিয়নের ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামটির করোনা জয়ে প্রধান ভূমিকায় রয়েছে এখানকার কয়েকটি সামাজিক সংগঠন। ২৫ সদস্য বিশিষ্ট পাড়াশাওলী গ্রাম উন্নয়ন দল। যারা গ্রামের প্রতিটি সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন। আর গ্রাম উন্নয়ন দলের সাথে রয়েছে এই গ্রামের দুটি গণগবেষণা সংগঠন। একটি গায়েনকুড়ি নারী উন্নয়ন গণগবেষণা সংগঠন এবং অপরটি প্রগতি যুব উন্নয়ন গণগবেষণা সংগঠন। এখানে স্থানীয় যাবতীয় সমস্যা সমাধানে গণগবেষণা করা হয় এবং সদস্যদের সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মাধ্যমে পুজি তৈরি হয়। এছাড়াও গ্রামের তরুণ–তরুণীদের নিয়ে রয়েছে একটি সক্রিয় ইয়ূথ ইউনিট। যারা নিজেদের মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশের পাশাপাশি গ্রামের সামাজিক সমস্যা সমাধানেও কার্যক্রম বাস্তবায়নে একতাবদ্ধ।
করোনা ভাইরাসে গোটা দেশ যখন আতঙ্কিত তখন পাড়াশাওলী গ্রামের সামাজিক সংগঠনগুলি গ্রহন করেছে নানান উদ্যোগ। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের শুরুতেই গ্রামের প্রতিটি মানুষকে এ ভাইরাস সম্পর্কে জানাতে লিফলেট বিতরন, গ্রামকে জীবানুমুক্ত রাখতে নিয়মিত জীবানুনাশক স্প্রে ও গ্রামের বসতবাড়ির অলিগলি আর রাস্তাঘাটে পরিচ্ছন্ন অভিযান। দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালে গ্রাম উন্নয়ন দলের সিদ্ধান্তক্রমে গোটা গ্রামকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এসময় কোন পরিবার যাতে খাদ্য সংকট বা অন্যান্য কোন সমস্যায় না পড়ে তা দেখাশোনার জন্য গ্রামের বিভিন্ন গ্রুপের ১১জনকে নিয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। তারা গ্রাম উন্নয়ন দলকে সার্বিক বিষয় জানায়।
গ্রামের সকল ব্যক্তির মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। এক্ষেত্রে গণগবেষনা সংগঠনের পক্ষ হতে অসহায় ব্যক্তিদের ৩০০টি মাস্ক প্রদান করা হয় এবং মাস্ক ছাড়া কেউ বাড়ির বাহিরে আসলে তার ৫০টাকা জরিমানার বিধান করা হয়। গ্রামের অতি–দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের তালিকা করা হয় এবং বিত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তায় ৩০টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে গ্রামের ২০টি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা ও ৫টি পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল হতে আর্থিক সহায়তা পাইয়ে দেন গ্রাম উন্নয়ন দল।
গ্রামের মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ২৫টি পরিবারে সবজি বীজ প্রদান করা হয় এবং ৩০টি পরিবারে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ বৃক্ষের চারা প্রদান করা হয়। গ্রামের বৃদ্ধ, অসুস্থ এবং নারী ও শিশুরা যাতে কোন সমস্যায় না পড়েন সে বিষয়ে নিয়মিত ফলো–্আপ করেন মনিটরিং টিমের সদস্যরা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক সংগঠনগুলিতে নিয়মিত সভা, উঠানবৈঠক ও গণগবেষণার চর্চা করা হয় এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পাড়াশাওলী গায়েনকুড়ি গ্রামের এমন সমন্বিত উদ্যোগ গ্রামের নারী–পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরেরর মানুষের একতারই ফল। এলাকার গুনীজনের নিকট বেশ প্রশংসিত হয়েছে তাদের এই করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম।
সকল উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহন এবং কার্যক্রম বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকাই রয়েছেন– দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উজ্জীবক– সরেশ চন্দ্র বর্মন, নিমাই চন্দ্র বর্মন, গনগবেষক– জোৎস্না রানী, অনিল চন্দ্র বর্মন, অতিবালা রানী, ইয়ূথ লিডার– জগেন্দ্র বর্মন ও নারায়ন চন্দ্রসহ গ্রামের তরুণ এবং উৎসাহি ব্যক্তিরা। এখানে সকল রাজনৈতিক দল. মত এবং শ্রেণী–পেশার মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় করোনা ভাইরাসের কথা শুনেছেন কিন্তু গ্রামে এখনও করোনা ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করতে পারেনি। এভাবে প্রতিটি গ্রাম এগিয়ে গেলে বাংলাদেশ অতি দ্রুত করোনার ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত হতে পারবে। গ্রামের মানুষের উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের লক্ষ্যার্জন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমাদের একতাবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক, এটাই হোক আগামির অনুপ্রেরণা।
আসুন সবাই এগিয়ে আসি
Nc
NC
nice post
nice