জিএসএম/(GSM বা Global System for Mobile communication):
১৯৮২ সালে প্রথম নামকরণ করা হয় Group Specially Mobile (GSM)। এরপর নামের ডেফিনেশন পরিবর্তন করে রাখা হয় Global System for Mobile communication (GSM)। জিএসএম প্রযুক্তির তৃতীয় প্রজন্মের (Third Generation) ভার্সনকে Universal Mobile Telecom System (UMTS) দ্বারা প্রমিতকরণ করা হয়। বাংলাদেশে গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, টেলিটক ও এয়ারটেল জিএসএম প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
জিএসএম হচ্ছে FDMA (Frequency Division Multiple Access) এবং TDMA (Time Division Multiple Access) এর সম্মিলিত একটি চ্যানেল অ্যাকসেস পদ্ধতি। FDMA এর সর্বমোট চ্যানেল সংখ্যা হচ্ছে ১২৪ এবং প্রতিটি চ্যানেল হচ্ছে ২০০ KHz। ৯৩৫-৯৬০ MHz আপলিংক (Uplink) এবং ৯৩৫-৯৬০ MHz ডাউনলিংক (Downlink) উভয়ের জন্যই ২৫ MHz বরাদ্দ থাকে। দ্বৈত পৃথকীকরণ (Duplex separation) হচ্ছে ৪৫ MHz। যদি ২০০ KHz চ্যানেলের মধ্যে TDMA ব্যবহৃত হয় তবে একটি ফ্রেমে (Frame) পরিণত হতে ৮ টাইম স্লট (Time Slot) দরকার। ফ্রেম সময়কাল হচ্ছে ৪.৬১৫ মিলিসেকেন্ড। জিএসএম সর্বপ্রথম মোবাইল রেডিও সিস্টেমের জন্য TDMA এর উন্নয়ন সাধন করে।
জিএসএম মোবাইল প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্যঃ
- ইউরোপিয়ান দেশসমূহে রোমিং (Roaming) করা যায়। অন্যান্য অনেক দেশেই অর্থের বিনিময়ে এই সেবা পাওয়া যায়।
- সিম (SIM) কার্ডের সহজ ব্যবহার।
- ফ্রিকোয়েন্সি হপিং (Hopping) সুবিধা; কম ফ্রিকোয়েন্সিতে অসুবিধা হলে ফ্রিকোয়েন্সি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যায়।
- RA বক্সের মাধ্যমে ISDN এর সাথে সংযুক্ত হওয়া যায়।
- উচ্চ গুণগত মান সম্পন্ন অবিচ্ছিন্ন ট্রান্সমিশন।
- GPRS ও EDGE সুবিধা প্রদান করে। ট্রান্সমিশন পাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
- GSM এ মূলতঃ চার ধরণের ফ্রিকোয়েন্সি (Frequency) ব্যবহৃত হয়। এদেরকে GSM 400, GSM 900, GSM 1800, GSM 1900 দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
জিএসএম সার্ভিসঃ
জিএসএম এর প্রাথমিক সার্ভিসের লক্ষ্য হচ্ছে উঁচু মানের ডিজিটাল ভয়েস ট্রান্সমিশন নিশ্চিত করা। তাছাড়া জিএসএম এর একটি অন্যতম সার্ভিসের নাম হলো এসএমএস (SMS বা Short Message Service)। রোমিং সুবিধা থাকলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় এসএমএস করা যায়। মেসেজ ট্রান্সফার সার্ভিসে সর্বোচ্চ ১৬০টি অক্ষর ব্যবহার করা যায়। সম্প্রতি আমাদের দেশে এমএমএস (MMS বা Multimedia Message Service) চালু হয়েছে। এমএমএস দ্বারা ছবি বা ইমেজ পাঠানো যায়। নিচে জিএসএম সার্ভিসের অন্যান্য বিভিন্ন সুবিধা উল্লেখ করা হলো।
জিএসএম এর সুবিধা সমূহঃ
- বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় মোবাইল নেটওয়ার্ক যা ২১৮টি দেশে ব্যবহার হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা বেশি পাওয়া যেতে পারে।
- সারা বিশ্বের গ্রাহকদের এক বিরাট অংশ জিএসএম ব্যবহারকারী বিধায় হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক, সরবরাহকারী এবং প্রান্তিক ব্যবহারকারীদের জন্য বৈশ্বিকভাবে অপেক্ষাকৃত ভালো নেটওয়ার্ক ও সেবা পাওয়া সহজ হয়।
- অধিক দক্ষ ও কার্যকর ফ্রিকোয়েন্সী। ফলে ভবনের ভিতরেও সিগন্যালের অবনতি অপেক্ষাকৃত কম হয়।
- সিম সহজলভ্যতার কারণে ব্যবহারকারীগণ ইচ্ছামত নেটওয়ার্ক এবং হ্যান্ডসেট বা মোবাইল সেট পরিবর্তন করতে পারেন।
- GPRS ও EDGE সুবিধা প্রদান করে।
- তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল টেকনোলজির উপযোগী করে ডিজাইন করা।
- নিরাপদ ডাটা এনক্রিপশন ও উচ্চমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জিএসএম এর অসুবিধাঃ
- কিছু ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র বিশেষতঃ অডিও এমপ্লিফায়ারে হস্তক্ষেপ করে ইন্টারফারেন্স তৈরি করে।
- অংশগ্রহনকারী নির্দিষ্ট কিছু শিল্প উদ্যোগতার মাঝেই মেধা সম্পদ সীমাবদ্ধ যা নতুনদের অনুপ্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করেছে এবং ফোন প্রস্তুতকারীদের মধ্যেকার প্রতিযোগিতা সীমাবদ্ধ করে তুলেছে।
- প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে জিএসএম এ ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে সর্বোচ্চ সেল লাইট নির্দিষ্ট করা থাকে। এটা অবশ্য পূর্বে ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
- বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। গড়ে প্রায় ২ ওয়াট; যেখানে সিডিএমএ টেকনোলজির ক্ষেত্রে গড়ে মাত্র ২০০ মাইক্রোওয়াট।