“টাইম ম্যানেজমেন্ট হ্যাকস- ৯৯.৯৯% কার্যকরী” (Effective Time Management Hacks)

টাইম ম্যানেজমেন্ট কী?

টাইম ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে একটি স্কিল বা দক্ষতা। যে স্কিল বা দক্ষতাটিকে গুরুত্বপূর্ণ কিংবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাধিটি দেওয়া যায়। কারন একমাত্র টাইম ম্যানেজমেন্ট এর দ্বারাই সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়। আপনার আশেপাশে আপনি এমন কিছু মানুষ দেখবেন যারা কি-না খুবই প্রোডাক্টিভ, অনেক অনেক ব্যস্ততার পরেও তাদের মাঝে কোনো ক্লান্তি দেখা যায় না, খুবই কম সময়ের মধ্যে তারা অনেক কাজই গুছিয়ে ফেলতে পারে। আবার কিছু মানুষ দেখবেন খুবই ডিপ্রেসড থাকে, কাজ অল্প থাকলেও তাদের মধ্যে কেমন যেন একটা ঘোলাটে ভাব থাকে, দিনের পর দিন চলে গেলেও দেখা যায় কোনো একটা কাজও তারা সম্পূর্ণরূপে শেষ করতে পারে না ইত্যাদি। এই পার্থক্যের অন্যতম একটা কারন হচ্ছে টাইম ম্যানেজমেন্ট। যে সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্ট হ্যাকসগুলো অনুসরণ করতে পারে দিনশেষে

  • সে-ই প্রোডাক্টিভ থাকে,
  • সে-ই সতেজ থাকে আর
  • সে-ই সফল হয়ে যায়।

অন্যথায়, প্রোডাক্টিভিটি কিংবা সফলতা আসবে না আর এটাই সত্য।

টাইম ম্যানেজমেন্ট কেন?

টাইম ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে এমন একটি দক্ষতা যার মাধ্যমে আপনি আপনার কাজগুলোকে সময়ের মধ্যে ভাগ করতে পারবেন। শুধুই কি তা? নাহ! টাইম ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি পাবে যা কি না আপনার জীবনের গোল অর্জনে সাহায্য করবে। প্রোডাক্টিভিটির গুরত্ব এখানে লিখা যথেষ্ট নয়, তার জন্য আলাদা আর্টিকেলের প্রয়োজন! সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া আপনার চাপ, ডিপ্রেশন ইত্যাদি নিচে টেনে নিয়ে আসবে আর আপনার দৈনন্দিন কাজের ক্ষমতা ও সংখ্যা উঁচুতে টেনে নিয়ে যাবে। আপনি কি সেটা বিশ্বাস করেন? রেসপন্স পজিটিভ হলে ভালোবাসা নিন আর নেগেটিভ হলে ভালোবাসা নিয়ে টাইম ম্যানেজমেন্ট হ্যাকসগুলো অনুসরণ করুন। J

#কাজের তালিকা বা টু-ডু লিস্ট– (গুরুত্ব অনুসারে)

আপনাকে আপনার আপকামিং কিংবা আগামীকালকের কাজগুলো নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবতে বলা হলো।

  • আপনার অনেক কাজ কিংবা অনেক পড়াশোনা!
  • ঐ কাজগুলো কিংবা ঐ পড়াগুলো দুপুরের আগে শেষ করতে হবে!
  • হায়! ক্লাস কিংবা অফিস ১০টা থেকে বিকাল ৪টা, মাঝখানে বিরতি মাত্র একবার।
  • ইশশশ! সকালে বাজার করতে হবে।
  • ওফফফ! ফেইসবুকে একটা পোস্ট আর টুইটারে একটা টুইট দেওয়া লাগবে।
  • হায়, হায়! ১০০০ শব্দের ৩টা আর্টিকেল লিখতে হবে!

ইত্যাদি ইত্যাদি!

ওয়েট, থামেন। এভাবে আপনি ডিপ্রেশানে চলে যাবেন। তারপর আপনার একটা কাজও আর করা হয়ে উঠবে না। তার চাইতে বরং ভালো –

  • “ইশশশশ, ওফফফ, হায়” এই শব্দগুলো বাদ দিয়ে শুধু কাজগুলোর তালিকা করুন।
  • গুরুত্বপূর্ণ এবং আগে শেষ করতে হবে- এমন কাজগুলোকে তালিকার শীর্ষে স্থান দিন।

#টু-ডু লিস্টে ডান লিস্ট যুক্ত করুন-

আপনার কাজের তালিকার প্রত্যেকটার একেবারে শুরুতে কিংবা শেষে একটা ডান লিস্ট (ছোট্ট খালি বক্স) যুক্ত করতে পারেন। উদাহরণস্বরুপ-

q১- কফির মগ পরিষ্কার করা।

প্রত্যেকটা কাজ শেষে আপনি ঐ ডান লিস্টে ডান মার্ক দিতে পারেন। এইটা আপনার কাজে সুবিন্যাস বজায় রাখার পাশাপাশি আপনাকে মোটিভেটও করবে।

#মাল্টিট্যাস্কিং পরিহার করুন-

ক্লাস এইট থেকে নিউ টেন অবধি আমার একটি বিশেষ অভ্যাস ছিলো। পড়ার সময় হেডফোনে গান শুনতাম আর পড়তাম। যা কি না আমাকে সাময়িক আনন্দ দিতো। আনন্দটা ছিল গানের দ্বারা, পড়াশোনার দ্বারা না। কিন্তু আমার ধারনা ছিলো আমি পড়া এনজয় করতাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই পড়ার কনসেপ্ট আমি ভুলে যেতাম।

অনেকে দেখবেন টাইপিং করছে, একই সাথে কিছু একটা খাচ্ছে আবার কানে হেডফোন। এটাই মাল্টিট্যাস্কিং।

অনেকেই মনে করেন একসাথে অনেকগুলো কাজ শেষ করার জন্য এবং সঠিকভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট করার জন্য মাল্টিট্যাস্কিং চমৎকার একটি উপায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, একই সময়ে একাধিক কাজ আপনার প্রোডাক্টিভিটি কমিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ ঐ একাধিক কাজের কোনো কিছুই আপনার মনোযোগের ১০০% পাবেনা।

আপনার ১০০% মনোযোগই ঐ কাজগুলোতে ভাগ হয়ে যাবে।

তাছাড়া এক গভেষণায় পাওয়া গেছে, “ শতকরা মাত্র ২.৫% লোক মাল্টিটাস্কিং সঠিকভাবে করতে পারে” বুঝতেই পারছেন সংখ্যা অতি নগণ্য।

  • মনোযোগের ১০০% একাধিক কাজে একটু একটু করে বিলিয়ে না দিয়ে যেকোনো একটি কাজে ফোকাস করুন।
  • পড়া কিংবা কাজের মাঝে একঘেয়েমি আসলে গান কিংবা অন্য কোনো কাজ সাথে যুক্ত করবেন না। বরং বিরতি নিন।

  #কোথায় এবং কীভাবে সময় নষ্ট করছেন? (খুঁজে বের করুন)

সময় মূল্যবান এবং তাই এটা চুরি হয়। আপনি কি এই কথাটি বিশ্বাস করেন?

ধরুন, আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ নিয়ে বসলেন। কাজ করার একটু পরেই আপনার একঘেয়েমি চলে এলো এবং আপনি ফোনে ফেইসবুক স্ক্রল কিংবা ইউটিউভের জগতে ঢুকে গেলেন। হঠাৎ সময়ের দিকে তাকিয়ে খেয়াল হলো এক ঘণ্টা চলে গেছে।

চুরি! হ্যাঁ। আপনার ঐ এক ঘণ্টা চুরি হয়েছে। তাই এখনই সাবধান হতে হবে। নয়তোবা সময় চুরি হতে হতে একটা সময়ে দেখবেন আপনার সমস্ত সময় চুরি হয়ে গেছে। আর তখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

এখানে সময় চুরি হওয়া বলতে অযথা কাজে সময় নষ্ট হওয়া বোঝাচ্ছি।

  • আপনার সময় কোথায় নষ্ট হচ্ছে খুঁজে বের করুন।
  • আপনার সময় কেন নষ্ট হচ্ছে সেটাও খুঁজে বের করুন।
  • সময় নষ্ট করার করার ক্ষতিকর দিকগুলো নিজেকে নিজেই রিমাইন্ড দিন।
  • সময় নষ্ট করা জিনিসগুলো থেকে বিরত থাকতে না পারলে সেগুলো থেকে বেনিফাইট নেয়ার চেষ্টা করুন।

#টাইম ম্যানেজমেন্ট টুলস ব্যবহার করুন

টাইম ম্যানেজমেন্ট এর ক্ষেত্রে বর্তমান আধুনিক টেকনোলোজির কথা না বললে চলেই না! আপনার কী মতামত? J

ইন্টারনেট কর্তৃক বিভিন্ন এপস আর সফটওয়্যার অন্যান্য জিনিসপাতির পাশাপাশি টাইম ম্যানেজমেন্ট ব্যপারটাকে যেন আরও সহজ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আপনি পড়াশোনা, বিজনেস, অফিসের কাজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে টাইম ম্যানেজমেন্ট এর জন্য আলাদা আলাদা এপস কিংবা সফটওয়্যার পেতে পারেন।

একটা নোট খাতায় টাইম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম লিখতে গেলে অনেকে অনেক সময় কী টাইটেলে, কোন হেডলাইনে কিংবা এরকম ধরনের হাবিজাবি নিয়ে ভাবতে ভাবতে অনেক সময় নষ্ট করে ফেলে, সেক্ষেত্রে তাদের জন্য ইন্টারনেট ভিত্তিক টাইম ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন এপস কিংবা সফটওয়্যার খুবই উপকারী এবং মজাদার হতে পারে।

  • টাইম ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত এপস আপনার কাজে আপনাকে ফোকাস রাখতে সাহায্য করবে।
  • আপনাকে আপনার কাজের সিগন্যাল কিংবা রিমাইন্ডার দিয়ে আপনার ব্রেইনকে সেই কাজের প্রতি মনোযোগী রাখবে।

#কাজ উপযোগী সময় বের করুন

কোন সময়টাতে আপনি সবচাইতে বেশি সতেজ, প্রোডাক্টিভ, ফোকাসড কিংবা ইফেক্টিভ থাকুন তা খুঁজে বের করুন। আপনার কাজের তালিকা থেকে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, কঠিন এবং আপকামিং কাজগুলো এই সময়টাতে করুন। হতে পারে ভোর সকাল কিংবা মাঝ রাত!

কোন সময়টাতে আপনি ফোকাসড থাকার পাশাপাশি একটু-আধটু ঢিলেমিতে থাকুন সেটাও খুঁজে বের করুন। তারপর ঐ ঢিলেমিটাকে একটু টাইট দিয়ে বাকি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে ফেলুন।

এমন কিছু সময় আছে, যেই সময়গুলোতে আপনি ইচ্ছে করলেও ফোকাসড হতে পারেন না কিংবা অনেক বোরিং এ থাকেন। তখন হয়তোবা ফেসবুক স্ক্রল কিংবা ইন্টারনেট দুনিয়াতে আটকে যান কয়েক ঘণ্টার জন্য।  বিশ্বাস করুন, এইগুলো আপনাকে আরো ঘোলাটে বানিয়ে দেবে। তার চাইতে বরং

  • ২০টা পুশ- আপ দিন
  • একটু হাটাহাটি করে আসুন
  • বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমি কিংবা খেলাধুলা ইত্যাদি।

দেখবেন এইগুলো আপনার একঘেয়েমি ভাবটা দূর করে দিতে পারবে আর আপনি অনেকটাই প্রোডাক্টিভ হতে পারবেন। এবং আরো বেশি কাজ করতে পারবেন এবং সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্ট এ আরো একধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন।

Extra

#অপ্রয়োজনীয় কাজ দূর করুন

#টাইম ম্যানেজমেন্ট গোল তৈরি করুন

#গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সকালে শেষ করুন

#কাজ অনুসারে সময় নির্দিষ্ট করুন

#আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করুন

#ফলাফলে ফোকাস করুন

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন