তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্মসংস্থান।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় এবিং অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট। আর এই ইন্টারনেটের কল্যাণে ককর্মসংস্থানের বিশাল বাজার উন্মুক্ত হয়েছে। মানুষ চাইলে এখন ঘরে বসে ই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন চাকুরী করা,বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞপ্তি দেয়া,ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ইত্যাদি সব আরো অনেক কিছু করতে পারে।তাছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিভিন্ন সেবাসমূহকে কাজে লাগিয়ে উঠতে পারে আর ঘরে বসে অর্থ উপার্জনও করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যেসব ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করে সেগুলো হলোঃ
১. ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং ২. উদ্যোক্তা উন্নয়ন ৩. অনলাইনের মাধ্যমে চাকুরীর সুযোগ।
১. ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংঃ প্রচলিত কর্মব্যস্ততায় একজন চাকুরিজীবীকে স্বশরীরে কর্মস্থলে উপস্তিত থকতে হয়। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে এখন মানুষকে আর বাইরে অফিসে গিয়ে কাজ করতে হয় না এবং নির্দিষ্ট সময় ধরেও কাজ করতে হয় না।মানুষ এখন ঘরে বসে ই তার সুবিধাজনক সময়ে তার কাজ করতে পারে।এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনও করতে পারে।আর এভাবে কাজ করার জন্য কোনো বাধা ধরা সময় মেনে কাজ করতে হয় না বিধায় একজন বাড়ির অন্যসব কাজেও অংশগ্রহণ করতে পারে এবং পরিবারকে যথেষ্ট সময় ও দিতে পারে।এভাবে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করে অনেক বেশি সফলতা অর্জন করা যায় এবং পেমেন্টও অনলাইনের মাধ্যমেই গ্রহণ করা যায়।অনলাইনে এরকম হাজার হাজার কাজ রয়েছে যার মাধ্যমে একজন স্বাবলম্বী হতে পারে এবং সমাজ ও দেশের কল্যাণে অংশ নিতে পারে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনলাইনের মাধ্যমে অন্যদেশের মানুষকে দিয়ে সস্তায় বিভিন্ন কাজ করিয়ে থাকেন। এগুলোই ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং নামে পরিচিত।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসের হাজার হাজার কাজের মধ্য থেকে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ খুজে নেয়া এবং সেটি সম্পাদন করে বায়ারের কাছ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করার মাধ্যমে যে উন্মুক্ত পেশা বা ফ্রিল্যান্সিং এর সৃষ্টি হয়েছে তাকে আউটসোর্সিং বলে।এর মাধ্যমে হাজার হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না দক্ষতা থাকলে ই সফলতা অর্জন করা যায়।আর এভাবে আয় হচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।যার ফলে দেশের অর্থনীতি উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে।এভাবে কজ করার ফলে কর্মীকে তার নির্দিষ্ট বেতনের উপর নির্ভর থাকতে হয় না।সে যত দক্ষতার সাথে কাজ করবে ততবেশি উপার্জন করতে পারবে এতে করে সে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বিতা অর্জন করতে পারবে এবং পাশাপাশি অন্যদের ও সহায়তা করতে পারবে।
আবার ফ্রিল্যান্সিং হলো কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে কাজ না করে মুক্তভাবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করা।
এই কাজও নির্দিষ্ট বেতনভুক্ত নয় তাদের কাজ এবং দক্ষতার উপর ভিত্তি করে উপার্জন করা যায় এবং কাজের ক্ষেত্রে সম্পুর্ন স্বাধীনতা রয়েছে।বর্তমানের বিভিন্ন চাকুরিজীবী, গৃহিনী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও এই ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করছে।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং একই শিল্পে পরিনত হয়েছে।পেশা হিসেবে অনেকেই এগুলো বেছে নিচ্ছেন এবং দেশ ও সমাজের উন্নতিতে অংশ রাখছে।বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ জনগণ ফ্রিল্যান্সিংকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।উন্নত দেশগুলোর মত বাংলাদেশও এই খাতে বিনিয়োগ করছে যার ফলে বহু লোক এই ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে অনেক নতুন নতুন ককর্মসংস্থান। গ্লোবাল মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফ্রিল্যান্সার ডট কম,আপওয়ার্ক, গুরু, ইল্যান্স,ভিউওয়ার্ক ইত্যাদি
আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর বিভিন্ন কাজের মধ্যে রয়েছে- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও তথ্য ব্যবস্থা,লেখা ও অনুবাদ, ডাটা প্রসেসিং, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা,বিক্রয় ও বিপণন, ব্যবসা,সেবা৷ ইত্যাদি
২. উদ্যোক্তা উন্নয়নঃ সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে পেশা নির্বাচনে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা। যাচ্ছে। তথাকথিত চাকুরী করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে নিজে কিছু করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠছে বর্তমানের যুবসমাজ।দেশের সব সরকারি – বেসরকারি মহলের কথা ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাত্রা লক্ষনীয়ভাবে বাড়ছে।উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে সর্বাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব।আর এক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ নতুন সম্ভাবনার দোয়ার খুলে দিয়েছে। সফল উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এখন তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে।
বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার ২০১০ সালে ৪ হাজার ৫৪৭ টি ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্রে ডিজিটাল সেন্টার চালু করেন।এখানে একজন পুরুষ ও একজন নারী উদ্যোক্তা কাজ করেন।২০১৫ সালে সরকার একই সেবা উপশহর ও শহরে চালু করেন।ফলে শিক্ষিত বেকারগণ সেখানে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেদের সৃজনশীল উদ্যোগ বা ব্যবসাকে সফল করতে পারছে।উদাহরণস্বরূপ বিকাশ,মোবিক্যাশ,কিউক্যাশ ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের যেকোনো স্থানে দ্রুত অর্থ আদান প্রদানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে ক্ষুদ্র উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বহুমুখী ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন