” তুমি কি সত্যি আমার !! “অষ্টম পর্ব 

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয়ই ভালো। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আজকের এই পোস্টে ” তুমি কি সত্যি আমার !! ” গল্পের অষ্টম পর্ব লিখব। চলুন শুরু করা যাক।

সপ্তম পর্বের পর থেকে…….. নবীন বরণ এর পর প্রায় একমাস কলেজ বন্ধ ছিল। এরপর অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা। এর মধ্যে ঈতিশার সাথে মাঝে মধ্যে sms এ কথা হয়েছিল। কলেজ খুলেই পরীক্ষা শুরু। ঈতিশা ক্লাসের প্রথম। আমার ক্লাস রোল একটু দুরে ছিল। আর অনন্তর রোল ছিল ২। পরীক্ষায় সিটি প্লান না করে শিক্ষকরা রোল অনুযায়ী বসতে বলেছিল। আমার রোল পিছনে থাকায় আমার ছিট অন্য ক্লাসে পড়ল। আমার পরিচিত সবাই এই ক্লাসে শুধু আমি অন্য ক্লাসে। তাই একটু মন খারাপ করে অন্য ক্লাসে চলে যাচ্ছি এমন সময় ঈতিশা আমাকে ডাকল। সীয়াম। আমি পিছন ফিরে তাকালাম।

ঈতিশা: তোমার ছিট কোথায়?

আমি: আমার ছিট এই ক্লাসে নাই। অন্য ক্লাসে পড়ছে। তাই অন্য ক্লাসে যাচ্ছি।

ঈতিশা: ওও..  এই তো এখানে একটা ছিট খালি আছে ( অনন্তের ছিট টা দেখিয়ে দিয়ে বলল)।

আমি: এটা তো অনন্তের ছিট।

ঈতিশা: হুম। জানি। অনন্ত তো আর পরীক্ষা দিবে না। ওর ছিট টা ফাঁকা থাকবে।

আমি: তা ঠিক। তবে, স্যার যদি কিছু বলে।

ঈতিশা: আরে স্যার কিছু বলবে না। স্যার রা তো ছিট প্লান করে নাই। [ এই বলে টেনে নিয়ে গিয়ে আমাকে অনন্তের ছিট এ বসিয়ে দিল]

আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ও সেটা খেয়াল করে, আমাকে কয়েকবার ডেকে সাড়া না পেয়ে মাথায় একটা বারি দিয়ে বলল, কী হয়েছে? আমি বললাম, কিছু না।

তারপর স্যার আসল, পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। ঈতিশির পরের ছিটেই আমি বসেছি। স্যার কিছু বলল না। পরীক্ষার সময় মাঝে মাঝে পিছন ফিরে দেখতেছিল আমি কি লিখতেছি। আর আমার কিছু ভুল ধরিয়ে দিচ্ছিল। বাকি সময় ওর নিজের মত করে লিখে যাচ্ছিল। পরীক্ষার শেষের দিকে আমি আর লিখতে পাচ্ছি না। আমার আর কমন পড়ে নাই। তাই না লিখে বসে থেকে ঈতিশা কে দেখছি। ঈতিশা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আমি বসে আছি।

ঈতিশা: কী ব্যাপার? লেখা শেষ?

আমি: না।

ঈতিশা: তাহলে বসে আছ কেন?

আমি: আর লিখতে পাচ্ছি না। আমার আর কমন নাই। যা কমন পড়েছে তার সব লিখছি।

ঈতিশা: যেটা পারো না সেটা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেই তো হতো। দেখি কোনটা পারো না।

আমি: তোমাকে জিজ্ঞাসা করব! আমার তো লজ্জা লাগে।

ঈতিশা: আইছে আমার লজ্জাবতী রাজকুমার। বল কোনটা পারো না।

আমি: কয়েক টা সাধারণ প্রশ্ন। ( বলে দেখিয়ে দিলাম) ।

ঈতিশা: আচ্ছা, লেখ। আমি বলতেছি।

আমি: হুম বল।

ঈতিশা খুব সাবধানে আমার সাথে কথা বলতে ছিল। ঈতিশা প্রশ্নের উত্তর গুলো বলতেছিল। আর আমি ওর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম। ঈতিশা: কী দেখছ লেখো আগে।

আমি: তোমাকে দেখতেছি।

ঈতিশা: ওরে পাগল। আমাকে পরে দেখি ও। আগে লেখো।

আমি: এত আস্তে আস্তে বলতেছে যে আমি প্রশ্নের উত্তর গুলো ভালোভাবে বুঝতে পারছি না।

ঈতিশা: ও…

ঈতিশা আশে পাশে এক নজর তাকিয়ে ওর খাতাটা হার্ড বোর্ড থেকে খুলে একটু বাঁকা করে ধরল, যাতে আমি খুব সহজেই লিখতে পারি। এভাবেই পরীক্ষা শেষ হলো। ঈতিশা যখন ওর খাতা খুলে আমাকে দেখাচ্ছিল ভাগ্য ভালো তখন স্যার ক্লাস রুম এ ছিল না। না হলে আমার সাথে সাথে ওর ও খাতা নিয়ে স্যার রেখে দিত।

বিকেলে বারান্দায় বসে ঈতিশার কথা ভাবছি। পৃথিবীতে এমন মেয়ে আছে? যে কিনা পরীক্ষায় নিজে না লিখলে অন্য কাউকে খাতা খুলে দেখায়! আমি যতটুকু জানি, মেয়েরা যথেষ্ট হিংসুক হয়। আর পরীক্ষার সময় তো আরো বেশি হিংসুক হয় নিজের সবচেয়ে ভালো বান্ধবী কেও নাকি বলে দিতে চায় না। ঈতিশার আজকের কান্ড দেখে আমার ধারণা একদম পাল্টে গেছে। ঈতিশাকে না দেখলে কখন এটা বিশ্বাস করতে পারতাম না যে একটা মেয়েও এমন হতে পারে। কি অদ্ভুত সাহসী মেয়ে যে বাবা!!  আচ্ছা ঈতিশা ও কি আমাকে পছন্দ করে? ঈতিশা কি বুঝতে পেরে গেছে আমি ওকে ভালবাসি!! ও কি আমার আচরনে একটুও বুঝতে পারে না যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি। নাকি বুঝেও না বোঝার অভিনয় করে। ও নিশ্চয়ই বুঝে গেছে নাহলে পরীক্ষায় আমাকে এভাবে সাহায্য করবে কেন। ( আমি  এসব বসে বসে ভাবছি। মা আমাকে ডাকতে ডাকতে কখন যে বারান্দায় চলে এসেছে বুঝতে পারি নাই।)

মা: কি রে, কি হয়েছে তোর?

আমি: তেমন কিছু না, মা।

মা: বেশ কয়েক দিন ধরে দেখছি তুই কেমন জানি আনমনা হয়ে গেছিস। আমার সাথে আগের মতো কথাও বলিস না। কি এত ভাবছিস? খুলে বল আমাকে।

আমি: হুম বলবো মা বলবো। সব খুলে বলবো। তোমাকে ছাড়া আর কাকেই বা বলব। আসো আগে নাস্তা করি।

নাস্তা খেতে খেতে ফোনটা বের করে সবার ছবিগুলো দেখতেছি। ও আপনাদের কে বলাই হয় নাই। ভাইয়া আমাকে নতুন একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিছে। আর এটা আমার নতুন ফোন। নবীন বরণ এর সব ছবি এই ফোনে নিয়েছি। যখন ঈতিশার ছবি আসল তখনই মা এসে আমার পাশে বসল। ঈতিশার ছবিটা দেখিয়ে বলল, মেয়েটা কে? ভারি সুন্দর তো। হুম খুব সুন্দর দেখতে। তোমার ছেলের বউ হলে কেমন হবে মা? বলে একটু হাসলাম। মা বলল, হুম ভালোই হবে। তারমানে, এই মেয়েটার ভাবনায় আমার ছেলেটা ডুবে থাকে সারাদিন!  [ওহহ্ ধরা খেয়ে গেলাম]

আমি: মা…আ। একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?

মা: মোটেও না। এখন আমাকে বল, এতদিন আমাকে বল নাই কেন? আমার অপরাধ কি ছিল? যার জন্য আমাকে বলো নাই।

আমি: আমি তো বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তূ লজ্জা আর ভয়ে বলতে পারি নাই।

মা: ভয়! আমাকে ভয় পাবে কেন। আমি কি অন্যদের মত রাক্ষসি ধরনের মহিলা?

আমি: না মা। তা হবে কেন। তুমি তো আমার লক্ষী মা। লজ্জায় বলতে পারি নাই।

মা: ওরে বাবারে, আমার ছেলেটা এত লজ্জাবতী হয়ে গেছে। জানতাম না তো। তাও আবার আমার কাছে লজ্জা পাচ্ছে।

তা বাবা, তোমার এই লজ্জা কাটিয়ে মেয়েটা কে বলেছো যে তুমি ওকে ভালবাস?

আমি: না, মা। এখনো বলতে পারি নাই।

মা: জানতাম, এটাই হবে। যে লাজুক স্বভাবের আমার ছেলে ও বলবেই বা কি করে! তাহলে কবে বলবে শুনি?

আমি: পরীক্ষা টা শেষ হোক। তারপর সময় করে একদিন বলব।

মা: আচ্ছা, আচ্ছা দেখব কত দিনে বলতে পারো। আর শোন বউমাকে খুব তাড়াতাড়ি দেখতে চাই।

আমি: আচ্ছা। আমার লক্ষী মা। ( বলে মাকে জড়িয়ে ধরলাম)।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে আমি আর কলেজে যাচ্ছি না।

গল্পের আজকের পর্ব টা সম্পুর্ন পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। নিয়মিত গল্প পড়তে চাইলে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

Related Posts

17 Comments

মন্তব্য করুন