দুঃখের দিনের বন্ধুকে সুদিনে দূরে ঠেলে দিলে সুখ মিলবে না!

অনেকদিন আগের কথা। গ্রামের নাম শিতলপুর। এখানে বাস করতো এক বুদ্ধিমান লোক। তার নাম পরেশ। সে সেখানকার রাজার খুব প্রিয়পাত্র ছিল। কারণ, রাজার কোনো সমস্যা হলে তার বুদ্ধিতেই রাজা সে সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতেন। ফলে তার কদরও ছিল খুব। কিন্তু, সে ছিল খুব গরিব। তার কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। সে ও তার বউ মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকতো।

তার বউ তাকে প্রায় বলে, “দেখ তুমি রাজার কত উপকার করো, আর তোমাকে রাজা এই সামান্য বেতন দেন। এই সামান্য বেতনে সংসারই তো ভালো করে চলে না, আমরা নিজেদের বাড়ি কবে বানাবো? রাজাকে বলে তোমার বেতন বাড়ানোর ব্যাবস্থা কর দেখি।”

প্রতিদিন বউয়ের এরকম বাহানা শুনতে থাকে বুদ্ধিমান পরেশ। একদিন সে ঠিক করে, সে রাজাকে বেতন বাড়াবার কথা বলবে। কিন্তু সে যখন রাজসভায় কথাটা তুলে, তখন রাজার মন্ত্রী রাজাকে কু-পরামর্শ দেয়। মন্ত্রী বলে, “রাজামশাই! আপনি যদি পরেশের বেতন বাড়ান, তবে বাকিরাও একদিন তাদের বেতন বাড়াবার কথা তুলবে। এভাবে প্রত্যেকের বেতন বাড়াতে থাকলে, দেখবেন একদিন আপনার রাজ কোষাগার ফাঁকা হয়ে যাবে।”
রাজা ভেবে দেখলেন মন্ত্রী কথাটা ভুল বলে নি। তাই তিনি পরেশকে বললেন, “আমি তোমার বেতন বাড়াতে পারব না।”

পরেশ রাজাকে তার বাড়ি উঠানোর কথা বললে, রাজা আরও ক্ষেপে যান। তিনি বলেন, “বাড়ি উঠাবে তো নিজের টাকায় উঠাও। আমি কি তোমাকে বেতন দিই না নাকি?
পরেশ বলে, “আপনি আমাকে যে বেতন দেন, তাতে আমার সংসারই চলে না। ঘর উঠাবো কি দিয়ে?” রাজা এবার রেগেমেগে বলে উঠলেন, “তাহলে তুমি চাকুরি ছেড়ে দাও। অন্য কাজ করে রোজগার কর। আমি তোমাকে বরখাস্ত করে দিচ্ছি।” এই কথা শুনে পরেশ বলে, “আমি আপনার দুঃখের দিনের বন্ধু ছিলাম। এখন আপনার সুখের দিন। আমার মতো ভিকারির কি আর দরকার হবে!” আর মনের দুঃখে রাজসভা থেকে চলে গেলো।

বাড়িতে এসে তার বউ এসব শুনে ওই রাজাকে অভিশাপ দিতে লাগে। আর পরেশকে বলে অন্য কোনো রাজ্যে চলে যেতে চায় সে। পরেশও তার বউয়ের সাথে অন্য রাজ্যে চলে যায়। সেখানে পরেশ যাওয়ার পথে অন্ধকার নেমে আসে। এটা ছিল একটা জঙ্গল। রাতে এখানে চলাচল করলে বন্য পশু পাখির শিকার হতে পারে, এই ভেবে একটা গাছের ডালে তারা দুজনে বসে রাত পার করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ওই পথ দিয়ে মহেশপুর রাজ্যের রাজা তার দলবল নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে ওত পেতে ছিল ডাকাত দল। তারা রাজার উপর হামলা করে সব জিনিসপাতি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। রাজার সেনারা প্রত্যেকেই ঘায়েল হয়ে গেছে। গাছের ডাল থেকে এসব দেখতেছিল পরেশ ও তার বউ। পরেশ রাজাকে সাহায্য করার কথা ভাবে।

তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। সে তাদের পোটলা থেকে একটা সাদা কাপড় জড়িয়ে নেয়। এরপর গাছের ডাল ধরে ঝুলতে থাকে। আর বলতে থাকে, “কি মজা! (ভুতের মতো আওয়াজ করে) আজ আমি ডাকাইতের মুণ্ডু খামু রে! ডাকাইতের সর্দারের কইলজে খুব টেস্টি। তরকে তরকে ভেজে খামু! হাঁ হাঁ হাঁ!”

ডাকাত দল এসব কথা শুনে গাছের ডালে তাকিয়ে দেখে সেখানে একটা ভুত ঝুলে আছে। তারা খুব ভয় পেয়ে যায়। আর রাজাকে সব দিয়ে পালিয়ে যায়। রাজা রানীও খুব ভয় পেয়ে গেছেন। পরেশ তাড়াতাড়ি তার কাপড় ফেলে, তার বউসহ নিচে নেমে আসে এবং রাজাকে তার বুদ্ধির কথা বলে।

পরেশের বুদ্ধির প্রমাণ পেয়ে রাজা তাকে তার রাজ্যের পরামর্শদাতার চাকুরি দেন আর তার রাজ্যের কিছু জমি দেন। সাথে তাকে সুন্দর একটা বাড়ি তুলে দেন। সেই রাজ্যে পরেশ ও তার বউ খুব সুখে শান্তিতে বাস করতে শুরু করে।
অন্যদিকে শিতলপুরের রাজার মন্ত্রী কৌশলে রাজাকে বন্দি করে সেই রাজ্যের রাজা হয়ে যায়।

আর রাজার ঠায় হয় ওই অন্ধকার কুঠরিতে!

Related Posts