নিয়তি ( একটি ছোট গল্প)

গত তিন মাসের বাড়ি ভাড়া জমে গেছে। আর গ্রামের বাড়িতে তো দুই মাস ধরে টাকা দিচ্ছি না। জমানো টাকা যা ছিল তাও শেষ ।গত রাতে মা ফোন করেছিল বাবার ওষুধ শেষ, চলতে বড় সমস্যা হচ্ছে ।মাকে তো বললাম দুই-একদিনের মধ্যে টাকা পাঠাবো। কিন্তু টাকা পাব কোথায়? কিভাবে জোগাড় করবো? কিছুই বুঝতে পারছি না টাকা ।ধার করাও এখন আর সম্ভব না। ইতিমধ্যে ২০-২৫ হাজার টাকা ধার করেছি।

চাকরি হারিয়েছি ৬ মাস হলো। এর মধ্যে যে কত জায়গা চেষ্টা করেছি তা না বলাই ভাল। মাকে এখনো বলিনি আমার চাকরি নেই ।শুনলে দুশ্চিন্তা করবে। তবে আমার বড় দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাবাকে নিয়ে। মাসে ৪-৫ হাজার টাকার ওষুধ লাগে ।

ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতাম বড় ব্যবসায়ী হওয়ার। অনেক টাকা থাকবে আমার কিন্তু এখন চাই কোনো রকম খেয়ে বেঁচে থাকতে। প্রকৃত অর্থে মানুষের বয়স যত বাড়তে থাকে তার স্বপ্ন ততই ছোট হতে থাকে ।বাস্তবতার সাথে পথ চলাই মানুষের অভ্যাস ।এখন তো সময় পার করি কল্পনা করে ।কারণ কল্পনার জগৎ আমার ইচ্ছে মত তৈরী করতে পারি। কল্পনাতে খুব সহজেই সুখী মানুষ হওয়া যায়। কল্পনাতে দেখি হার্টের চিকিৎসাটা করে বাবাকে সুস্থ করেছি ।মা-কে ভাল একটা চোখের ডাক্তার দেখিয়েছি ।ছোটভাইটাকে বড় একটা স্কুলে ভর্তি করিয়েছি।

আজ একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে আসলাম। প্রত্যেকবার আশা করি চাকরিটা হয়ে যাবে কিন্তু আর হয় না। কড়া রোদের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছি ।দূরে কোট- টাই পরা এক লোকের কাছে একটা ভিক্ষুক হাত পাতল কিছু পাওয়ার আশায়। কিন্তু লোকটি তাতে সাড়া দিল না। হেঁটে হেঁটে ভিক্ষুকটি আমার কাছে এসে একই ভাবে হাত পাতল। পকেটে ১০ টাকা আছে যদি দিয়ে দেই তাহলে আমার আজকে না খেয়ে থাকতে হবে। আমি টাকাটা না দিলে যে ভিক্ষুকটিও না খেয়ে থাকবে এমনটাতো নয় তাই আর দিলাম না।

মা ফোন দিয়েছিল। বাবার অসুস্থতা বেড়েছে। গত কয়েক দিন আগেই ঔষুধ শেষ হয়েছে। গ্রামের বাজারে ওষুধের দোকানটিতে বাবার ওষুধগুলো নাকি নেই। শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি জানি ওষুধগুলো আছে। কিন্তু দেবে না। কারণ তার থেকেও বাকিতে ৩-৪ হাজার টাকার ওষুধ আনা হয়েছে।

নিজেকে বড়ই অধম মনে হচ্ছে ।মা-কে কথা দিলাম কালকে টাকা পাঠাবো। কিন্তু আমার কাছে এটা কথা দেওয়া নয় বরং আশা দেওয়া। আশায় আশায় মানুষ বহু সময় পার করতে পারে। যা অন্য কিছু দ্বারা সম্ভব নয় ।হঠাৎ করে একটি চাকরি চলে যাওয়া যে কি ভয়ানক তা আমি তিলে তিলে বুঝতে পারছি ।গত ছয় মাস ধরে জীবনের সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। মানুসিক যন্ত্রণা যে কি ভয়ানক তা বুঝতে পারছি। ছেলে হওয়ায় জোরে চিৎকার করে কান্না করতে পারি না ।করতে পারলে হয়তো মনটা হালকা হতো।

মাকে গতকাল যে আশার বাণী শুনিয়ে ছিলাম তা ভেঙে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো । সকালে বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল । বাবা আর নেই। হঠাৎ একটি চাকরি হারানো যে প্রিয় মানুষদের কেড়ে নিতে পারে সেই বাস্তবতা এখন আমি উপলব্ধি করছি। বাসে করে গ্রামে যাচ্ছি শেষবার বাবাকে দেখার জন্য ।হঠাৎ একটি ফোন আসলো জানতে পারলাম শেষ যে চাকরির ইন্টারভিউটা দিয়েছিলাম সেই চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি।

Related Posts

11 Comments

মন্তব্য করুন