পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং(প্রকৌশল) বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে করনীয়

ইঞ্জিনিয়ার শব্দের মূল অর্থ ছিল যে ইঞ্জিন চালায়। ইঞ্জিন বলতে বোঝানো হতো সামরিক কোনো যন্ত্র। ইঞ্জিনিয়ার মানে ছিল সামরিক যন্ত্রবিদ্। পূর্বে সামরিক যন্ত্রকৌশল হিসেবেই ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দ ব্যবহার করা হতো  কিন্তু এরপর প্রতিতুলনায়, ভবন ও সেতুর মতো বেসামরিক নির্মাণের জন্য পরিচিতি পায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বলে , যারা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র নিয়ে কাজ করে তারা যন্ত্রকৌশল হিসেবে ,যারা কম্পিউটার এর যাবতীয় সকল কাজ নিয়ে যারা গবেষনা করে তারা কম্পিউটার প্রকৌশল হিসেবে। তাছাড়া আরো অনেক প্রকৌশলবিদ্যা রয়েছে ।

ছোট থেকেই আমাদের অনেক স্বপ্ন থাকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার বা অনেকেই বিজ্ঞান বিভাগকে ভালোবেসে ফেলে এবং বড় এক ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে ।।আমাদের দেশে মূলত এইচ এস সি পাস করার পর ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে  ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে হয়। অনেকেই মনে করে ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পাওয়া খুব কঠিন বা অনেকেই মনে করে তাকে দিয়ে হয়ত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াটাই হবে না। কিন্তু আমি মনে করি আমরা যদি এইচ এস সি তে কিছু বিষয় খুব ভালমত পড়ি তাহলেই চান্স পাওয়া সম্ভব।  আমি সেসব বিষয় গুলোই  বলব যেগুলো আমি করেছিলাম এবং আল্লাহর রহমতে আমি পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।।

বাংলাদেশে পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গুলো-

১) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BUET)
২) রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (RUET)
৩) খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (KUET)
৪) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (CUET)

৫)ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET)

প্রকৌশল কলেজঃ
১) ময়মনসিংহ প্রকৌশল কলেজ (MEC)
২) সিলেট প্রকৌশল কলেজ (SEC)

৩) ফরিদপুর প্রকৌশল কলেজ (FEC)

উক্ত ইউনিভার্সিটি গুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন একটু আলাদা।।

কি ভাবে প্রস্তুতি নিলে সব গুলো ইউনিভার্সিটিতে সহায়তা পাওয়া যাবে তা সকল বিষয় অনুযায়ী বলব-

সাধারনত ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থ,রসায়ন,গণিত এবং ইংলিশ উক্ত বিষয় থেকে লিখিত বা নৈব্যত্তিক প্রশ্ন হয়।

গণিতের প্রস্তুতি কিভাবে সম্পূর্ন করব-

এইচএসসি তে গণিত দুইটা পার্ট থাকে। গণিত এর প্রস্তুতির জন্য যে কোন এক লেখক এর বই ভালমত অবশ্যই শেষ করতে হবে।। অক্ষরপত্র প্রকাশনী এর উচ্চতর গণিত পত্র ১এবং২,লেখক-আসীম কুমার গুহ স্যার এর বই আমার কাছে মনে হয়েছে সবচেয়ে সহজভাষায় লেখা একটি বই।। তাছাড়া গিয়াস উদ্দিন স্যার এবং এস ইউ আহমেদ স্যার এর বই অনেক ভাল।।যে কোন একটি লেখকের বই ভালমত শেষ করে বাকি বই গুলোর ম্যাথ প্রাক্টিস করলে গণিতের প্রস্ততি হবে।।

বই এর ম্যাথ গুলো ভালমত শেষ করতে হবে কারন প্রশ্ন যেকোন বই থেকেই হবে।।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো-সরলরেখা, বৃত্ত,কনিক,অন্তরীকরন,যোগজীকরন,ত্রিকোনমিতিক অনুপাত , সংযুক্ত কোণের ত্রিকোনমিতিক অনুপাত,বহুপদী ও সমীকরণ,বিপরীত ফাংশনের ত্রিকোনমিতিক অনুপাত,স্থিতিবিদ্যা,সমতলে বস্তু কনার গতি, দ্বিপদী বিস্তৃতি।

 

 সাধারনত ভর্তি পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে লিখিত প্রশ্ন হয় কিন্তু নৈব্যত্তিক এর জন্য সব অধ্যায় এর ধারনা ও ম্যাথ করার অভিজ্ঞতা ভাল থাকতে হবে।।

 

পদার্থবিজ্ঞান এর প্রস্তুতি কিভাবে সম্পূর্ন করব-

পদার্থবিজ্ঞান এর দুইটি পার্ট।। গণিত এর মত পদার্থবিজ্ঞান এর প্রস্তুতির জন্য যে কোন এক লেখক এর বই ভালমত অবশ্যই শেষ করতে হবে।।প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের জন্য তপন স্যার এর বইটি সবচেয়ে সহজ ভাষায় লিখা।।তাছাড়া ইশহাক স্যার ও অক্ষরপত্রের গোলাম স্যার এর বইটি সবচেয়ে ভাল। অক্ষরপত্র প্রকাশনীর বই এর সকল বিষয় এর ব্যাখ্যা খুব ভালমত আছে।।

তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হলে অবশ্যই উক্ত তিন বই এর সকল ম্যাথ(পদার্থবিজ্ঞান এর) খুব ভালমত আয়ত্ত করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ন বিষয়ঃ ১ম পত্রে (ভেক্টর,গতিবিদ্যা,কাজ ক্ষমতা শক্তি,নিউটনীয় বলবিদ্যা) এই অধ্যায় থেকে এইচ এস সি তে ৩ টা সৃজনশীল আসবে আর  ভর্তি পরীক্ষায় অবশ্যই ম্যাথ আসবে। মহাকর্ষ অভিকর্ষ , তরংগ ,পর্যাবৃত্তিক গতি ও আদর্শ গ্যাস এই অধ্যায় এর ম্যাথ ও থিওরি ভাল মত আয়ত্ত করতে হবে।

২য় পত্রের তাপ গতিবিদ্যা , চল এবং স্থির তড়িৎ, আলোর প্রতিসরন,ভৌত আলোক বিজ্ঞান , তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া সাধারনত এই অধ্যায় গুলো থেকে লিখিত প্রশ্ন আসে।।নৈব্যত্তিক এর জন্য সকল অধ্যায় সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকতে হবে।

রসায়নের  প্রস্তুতি কিভাবে সম্পূর্ন করব-

রসায়নের এর দুইটি পার্ট। বাকি বিষয় গুলোর মতই রসায়নের প্রস্তুতির জন্য যে কোন এক লেখক এর বই ভালমত অবশ্যই শেষ করতে হবে।।প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের জন্য অক্ষরপত্রের লিংকন স্যার এর বইটি সবচেয়ে সহজ ভাষায় লিখা।।তাছাড়া আহসানুল কবির স্যার এর বইটি সবচেয়ে ভাল। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হলে অবশ্যই উক্ত বই এর সকল ম্যাথ(রসায়ন এর) খুব ভালমত আয়ত্ত করতে হবে।

 

গুরুত্বপূর্ন বিষয়  লিখিত পরীক্ষার জন্য ১ম পত্রের ২য়,৪র্থ অধ্যায়। ২য় পত্রের জন্য ২য়,৩য়,৪র্থ অধ্যায় খুব গুরুত্বপূর্ন ।।বিশেষ করে পরিমানগত রসায়ন,তড়িত রসায়ন এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া অধ্যায় এর সব ম্যাথ ভালমত পরতে হবে ।।

 

যে কোন পরীক্ষায় ভাল করতে হলে অবশ্যই বেশি বেশি বিগত বছরের প্রশ্ন এর সমাধান নিজে করার অভ্যাস গড়তে হবে।।বই এর দোকানগুলোতে বিগত বছরের বুয়েট, রুয়েট , কুয়েট , চুয়েট এর সমাধান সহ প্রশ্ন ব্যাংক পাওয়া যায় যা পূরন করলে অভিজ্ঞতা বাড়বে কারন প্রতি বছর কিছু বিষয় এর প্রশ্ন গুলো একই ধরনের  হয়।।

আমরা অনেকেই মনে করি এইচ এস সি এর এই ২বছর এ সব শেষ  করা সম্ভব নয়।কিন্তু এই ২বছর প্রতিটা সময় ভাল মত কাজে লাগালে অবশ্য অবশ্যই চান্স পাওয়া সম্ভব।। বর্তমানে ইউটিউব এ টপিক ভিত্তিক টিউটোরিয়াল ভিডিও পাওয়া যায়।।সেগুলো দেখলে পড়াটা অনেক সহজ হয়।। আপনি যদি এইচ এস সি এর কোর্স ভালমত পূরণ করতে পারেন তাহলে আপনার ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি সম্পূর্নটুকু হয়ে যাবে।

আশা করি আমার লেখা গুলো আপনার কাজে আসবে।।

ধন্যবাদ

 

Related Posts