পারিবারিক বন্ধন কেন প্রয়োজন?

একটা মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার পরিবার। কিন্তু আজকাল পরিবারের মধ্যে এমন পারিবারিক বন্ধন দেখা যায় না। তার কারণ বর্তমান সমাজ অনেকটাই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হয়ে গেছে।

বর্তমানে পরিবারের বন্ধন এখন ব্যাপকহারে ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ কারণেই আমাদের সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে চলেছে দিন দিন। আগে এক সময় একান্নবর্তী পরিবার ছিলো কিন্তু সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে আস্তে আস্তে একপ্রকার চালু হতে থাকে। তখনই সমাজের বিশিষ্ট জন সামাজিক বিজ্ঞানীরা এর বিরুদ্ধে কথা বলেও,প্রতিবাদ করেও তেমন একটা সুফল বয়ে আনতে পারেনি।

যখন একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাচ্ছে তখন থেকেই স্বামী স্ত্রী তাদের মা বাবাকে ছেড়ে আলাদা বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করল। হয়তো স্বামী কোন একটা ব্যবসা করছে বা চাকরি করছে ওদিকে স্ত্রী বাসায় রান্নাবান্না কাজ,ঘরগুছানো নিয়েই দিন পার করতেছে। স্বামী দীর্ঘক্ষণ কর্মের মধ্যে ব্যস্ত থাকায় হয়তো স্ত্রীকে বেশি সময় দিতে পারে না বা কোন সময় রাগারাগি হয়ে যায় ঝগড়া-বিবাদ লেগে যায়। তখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের সম্পর্কের দ্বন্দ্ব লেগে যায়।

প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব না। আজকে আমি আলোচনা করব পারিবারিক বন্ধনের সুবিধা গুলো কি কি এবং কেন পারিবারিক বন্ধন প্রয়োজন?

মানুষের জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে নানা ধরনের শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে একটা সামাজিক বন্ধন গড়ে ওঠে। এবং জীবনে সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকতে হলে এসব সুনিবিড় ও দৃঢ় বন্ধন থাকা আবশ্যক। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সুসং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের যারা বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে পান, তারা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘায়ু হন।

পারিবারিক বন্ধনের সুফল : যদি একটি পরিবারে পারিবারিক বন্ধন থাকে সে সুফল আমরা জীবনের শুরু থেকেই জন্মলগ্ন থেকেই পেতে পারি। গবেষণায় উঠে এসে যারা পরিবারের মধ্যে সবাই মিলেমিশে থাকেন তাদের রোগব্যাধি এবং অন্যদের তুলনায় সুস্থ জীবন যাপন করেন। এসব পরিবারের শিশুরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং প্রতিভাবান হয়ে ওঠেন।

পারিবারিক বন্ধনে বাড়ে আয়ু : পারিবারিক বন্ধন মানুষের জীবনকে সুন্দর এবং অর্থবহ করে তোলে। একাধিকবার গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, পারিবারিক সম্প্রীতি সঙ্গে মানুষের দীর্ঘায়ু অর্জন এর সম্পর্ক। অর্থাৎ, যাদের পরিবারে মা বাবা সন্তান ও ভাইবোনের একসঙ্গে আনন্দময়ী মুহূর্ত কাঁটান তাদের অনেকটাই আয়ু বাড়াতে সহায়ক কাজ করে। কিন্তু পারিবারিক বন্ধন যাদের দুর্বল যাদের পরিবার ভাঙ্গনের মুখে, তাদের সে ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটে থাকে।

মৃত্যুঝুঁকি কমায় : বুড়া বয়সে দাদা-দাদী তারা তাদের পরিবারের সকল সদস্য এবং আপনজনদের সব সময় কাছে পেতে চান এবং সবাই মিলেমিশে থাকলে তাদের মনে একটা গভীর আনন্দ অনুভব করেন ফলে তাদের অনেকটাই মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায়। যাদের পরিবারে ঝগড়া, মারামারি কিংবা আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে তেমন মেলামেশা নেই তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেমস ইভেনুক বলেন,আমাদেরও সেই পরিবারের সদস্য স্বজনদের সঙ্গে আরও একাত্বতা বাড়ানো,একে অন্যকে এড়িয়ে চলা নয়।

পারিবারিক একাত্বতা দেয় সুখী জীবন : বিশ্বজুড়ে বড় বড় সমাজবিজ্ঞানী এবং সব গবেষকদের এখনো পর্যন্ত যতগুলো গবেষণা হয়েছে সবগুলোর মধ্যে প্রমাণিত সত্য যে, পারিবারিক ও সামাজিক একাত্মতা একজন মানুষকে সুস্থ সুখি সং জীবনের পথে পরিচালিত করে। তাই আমাদের সকলের উচিত প্রতিটি মানুষের মা-বাবা দাদা-দাদী আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে মিলেমিশে থাকার সাধ্যমত অভ্যস্ত করে তোলা।

প্রত্যক মানুষের জীবনে শান্তি উৎস পরিবার। তাই পারিবারিক সম্পর্ক গুলো আমরা যেন কোন ভাবেই গুরুত্বহীন মনে না করি। পরিবারে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় কিন্তু পারস্পরিক বোঝাপড়া যদি অক্ষুন্ন থাকে তবে জীবন চলার পথে কোন চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না

Related Posts

12 Comments

মন্তব্য করুন