প্রতিনিয়ত পৃথিবী যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে

প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের এই পৃথিবীকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি। যে যার যার মত এই পৃথিবীকে ব্যবহার করেই চলেছি। কিন্তু আমাদের এই পৃথিবীটা কতটা ভাল আছে তার খোজ নেয়ার খুব কম মানুষই এই পৃথিবীতে অবশিষ্ট আছে। গত ১০০ বছরে পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তনই আমরা দেখেছি, ২০২০ সাল জুড়েও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে পৃথিবীতে। চলুন জেনে নেই জলবায়ুর পরিবর্তনে কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের পৃথিবী। জলবায়ু যেন প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল, জলবায়ু সংক্রান্ত ব্যয় বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। জলবায়ুর কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণ। বৈশ্বিক ভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা। গত কয়েক দশকে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৬০ ভাগ। বেড়েছে আবাসন ব্যয়, বেড়েছে বন্যা, ঝড়, খরা, মহামারি আর অগ্নিকাণ্ডের মতো মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

প্রতিবছর প্রায় ৩.২ মিলিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রের পানির উচ্চতা। ২০২০ সালে মার্শাল দ্বীপে সামুদ্রিক উচ্চতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে প্রায় ৫৮ হাজার মানুষ। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সহ বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জলবায়ু শরণার্থী সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখযোগ্যহারে। গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। ফসিল জ্বালানী থেকে নিঃসরিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ৩০ ভাগ শুষে নেয় সমুদ্র, যার ফলে সামুদ্রিক মাছ ও জীব বৈচিত্রের পরিমাণ কমে আসছে দ্রুত। পৃথিবীর সার্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ, যার ফলে গ্রীষ্মকালে দাবদাহের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি, বাড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কারণে আমাদের খাদ্য শৃংখলের উপর প্রভাব পড়ছে মারাত্মকভাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে আমরা যে খাবার খাচ্ছি তার পুষ্টিমান।

গত কয়েক বছরে ধনী-গরীবের মধ্যে বৈষম্য বেড়েছে অনেকটা। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে আমেরিকা, প্রায় প্রতিটি দেশে জলবায়ু হুমকির কারণে ক্ষতিগ্রস্থরা আর্থিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সারা বিশ্বে প্রায় ৭১ ভাগ গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করে ১০০ টি কোম্পানি। পরিবেশবাদী আন্দোলনের মুখে কোনোভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গুলোর কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমানো সম্ভব হচ্ছেনা। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে কার্বন ট্যাক্স দেয়ার কথা থাকলেও তারা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না বিষয়টিকে। এভাবেই দিন দিন আমরা আমাদের পৃথিবী নামক বাসস্থানকে আমাদের বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি। এর কারণে মানবজাতিকে ভবিষ্যতে এই ভুলের মাশুল গুনতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আসুন আমরা সবাই সবার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব আমাদের বাসস্থানকে নিজেদের বসবাসের যোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। তাহলে আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই পৃথিবীতে ভালভাবে বসবাস করতে পারবো।

Related Posts

8 Comments

মন্তব্য করুন