সুন্দর এ পৃথিবী মনোহর!তার চেয়ে বেশী সুন্দর এতে বসত করে যে মানুষ মোহময়। কারণ মানুষের মধ্যে যে জন্তু লুকিয়ে আছে তা মনোহরী পৃথিবী ও তাঁর ভেতর বিচরণকারী অন্য সবের থেকে আশ্চর্যজনকভাবেই মহিমান্বিত – বৈচিত্র্যময়। কোন এক পাড়া-গাঁয়ের , রবিন এর খায়েরখা বন্ধু মাহিন। খ্যাতনামা ধনাঢ্য পরিবারের মাহিন,বাবা মায়ের একমাত্র আদরের ছেলে হওয়া সত্তেও একি গাঁয়ের এক রিক্সা চালকের ছেলে রবিন এর সাথে তার বেশ বন্ধুত্ব।
রবিন রিক্সা চালকের ছেলে বলে তার সাথে মাহিন এর সম্পর্ক তার পরিবারের কেউ মেনে নিতে না পারলে ও তাদের মধ্যে ছিল গলায় গলায় খাতির। একদা প্রভাতে মাহিন দাত ঘষতে ঘষতে বাড়ির দরজার দিকে এগুতেই দেখে রবিনের প্রতিদিনের দেখা মলিন মুখটিতে আজ হাসিল ঝলক আর ধরছে না। আবার সুর সুরে গেয়ে আসছে –
পদ্মপাতার জলে টলমল
পূবে জ্বলে ওকি লাল ,
মন বলে উজ্জ্বল ও ঝলমল
গোলাপী সাজ বিকাল।
গানের কথা গুলো শুনে মাহিনের অফুরন্ত কৌতুহল! আশ্চর্য ! আমি কী ভুল শোনতেছি না তো! না! রবিনের মুখ থেকেই তো শোনা যাচ্ছে। তবে রবিনের নিত্যদিনের মলিন মুখে আকস্মিক এমন কী সুখ আলিঙ্গন করলো ? কেননা হাসনাহেনা ফুলের মত রবিনের সারা অঙ্গ থেকে যেভাবে সুখের সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে মনেই হয় না যে চির চেনা সেই মন ভাঙা মানুষটি এই ! ব্যপারটা কী জানতে হবে।
মাহিন : কিরে দোস্ত! আকাশের চাঁদ পেলে না কী?
অপূর্ব দৃশ্যবলীলায় ফোটা পূর্বাকাশের রক্তরাঙা সূর্যটাকে ইশারা করে যেভাবে যৌবনের গান জুড়ে দিলে, তাতে তো মনে হয়, চাঁদ সূর্য অপেক্ষা মহা মূল্যবান অলৌকিক কিছু পেয়েছ, ঘটনা একটু খুলে বলোনা দেখি!
রবিন : দোস্ত! আসলেই তাই! আমি ও যে কারো মনের মণি কোঠায় কল্পলোকে জীবন্ত গল্প হয়ে আছি আজও ! আমার জীবনের জন্য সে এক অলৌকিক ও বিচিত্রকর বর্ণনার অবর্ণনীয় ঘটনারই অবতারণা।
ঋতুরাজ বসন্তের রঙ বদল দেখেছি।আগুন রাঙা রক্ত গোলাপের বর্ণিয় অপূর্ব রূপ ঝরা অনুভূতি শোকেছি কত! যাতে মুগ্ধতা রেখে গেছে অপরিমেয় তা তো বর্ণনার বাহির।
তুমি জানো যে,
ফুলের পরাগধানীর ওপর
প্রজাপতি রোমাঞ্চকর বাহারি রঙের ঝলমল ডানা মেলে জুড়ে বসে যখন গোলাপ স্বাদের অপূর্ব রূপ সাগরে হারিয়ে যায়! এবং নিরব ভালোবাসার প্রেম প্রণয় পেখম ধরে মুগ্ধ আলিঙ্গনে বিলাপ করে সে দৃশ্যও কতই না মুগ্ধতা ছড়ায়। আবার এই জীবনেই দেখেছি, যখন প্রকৃতির ভরা যৌবনে বসন্তের সুবর্ণীয় জোয়ার ফানা তুলতো তখন মানব মন বলতে যে কারোরই, ফুলে ফুলে ভোমর আর প্রজাপতির মধুর সংস্রবের মিলনের মত মধুর মিলন মেলায় শরীর ও মন সাধিত করার অদম্য ইচ্ছা তো সবেরই সৃষ্টি করতো।
করণ মানুষের বৈচিত্র্যময় মন, বর্ণাঢ্য রোমাঞ্চকর এবং আকর্ষণীয় কোন কিছু দেখা মাত্র রাতের নির্জন তারার মত নিরবে জেগে থেকে কতোই না অনুভূতি সৃষ্টি করে রঙ ঢঙে টালমাটাল হয়! মানুষের মনের অবস্থাটা তো এই যে, যখন কোন স্নিগ্ধময় উথালা হাওয়ায় তরঙ্গায়িত হয়ে ভেসে আসে তখন তার জল্পনা কল্পনার রণাঙ্গনে কতো না কী ঘটে! আজ রবিবেন হৃদয় জুড়ে তেমনই ফাগুনের উথালা ঢেউ দোলা খেলছে। যার নব নব সুর সরবের স্বরূপ, বসন্ত আকাশের কোকিল পাপিয়ার ভরা যৌবনের নেশা লাগা গান আর কলোকাকোলির সে সব আয়োজন থেকেও আরেক অসাধারণ সাধের আয়োজন মনের মধ্যে সৃষ্টি করে বলতে, আকাশ ছোঁয়া রঙিন স্বপ্ন এঁকে যে বেলা প্রকৃতি ও তাঁর বুকের আলতো পাঁজর মেলে আত্ম প্রকাশ করে পুরো পৃথিবীটাই লাগে অন্য রকম।
প্রকৃতির হাজার রঙ বদল তো দেখেছি-ই, কিন্তু মানব মনে আসা বসন্তের প্রতিফলন যে কতটা ভয়ঙ্কর প্রলয়ঙ্করী ঝড় সৃষ্টি করতে পারে ! তার কোন অন্ত নেই। কারণ বসন্ত আসা মাত্র ,কানন গুল্মের অবুঝ শাখায় শাখায় ঘুমন্ত কুড়ি মুকুলগুলো ফোটে প্রস্ফুটিত ফুলে ফুলে ভরে দোল খেলে অপূর্ব ও মনোরঞ্জন সুগন্ধি হাওয়ার ঝড় তুলতে পারে, সে দৃশ্যের কিছুটা ছায়া প্রতিচ্ছবি সবার নয়ন কাড়ে। দৃশ্যত সন্ধ্যা তারার মত বসন্তের ডালে বসে থাকা নির্জন অরণ্যে যৌবনের চাওয়া সেই বাসন্তী।
যার মুখ স্মৃতি প্রস্ফুটিত গোলাপের অনুভূতির মত অনুভব করার মত।
যে স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন বৈকি ফলপ্রসূ হতে পারে না , কোন অযোগ্য লোকের জীবনে সে যদি বাস্তবেই দেখা দেয় সেতো ধূলায় স্বর্গ নেমে আসার মতোই।
প্রেমের নকশী হতে স্বচ্ছ অন্তর ব্যতীত অন্য কোন দক্ষতা ও যোগ্যতার ততোটা প্রয়োজন পরে না। দৃশ্যত সত্য এটাই যে, ফুলে এসে বসা ভ্রমরের কোমলতা স্বর্গীয় কোমলতার এক প্রতিচ্ছবি। ভালোবাসার হৃদয় অনুরূপ ভাবে পূর্ণ ভালোবাসারই বিশেষ এক কোমল রূপ। যেটা বাসন্তীর কোমল কমল স্মৃতিতে ধারণ করে আছে।
ভাবিনি কোনদিন স্বপ্নেও এমন, কতটা আবেগী ইমেজ!দেখলে মনে হবে সত্যিকারেই সে হাজার বছরের তৃষ্ণার্ত রূপের কোন এক রাক্ষসী রাজ কুমারী।রূপ শিকারের উদ্বেল উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত হয়ে আগুন রাঙা রক্ত জবার মত হেলে দুলে ঢলে বসে আছে।
অথচ! সে নাকি আমারই প্রতীক্ষিত মমতাময়ী মুহূর্ত পার করছে! বেশ কয়েক বিঘা জমি জুড়ে জুঁই চামেলি গোলাপ, চম্পা ভেলী, চামেলি, প্রভৃতিসহ হরেক রঙে মাখা উজ্জ্বল ফুল বাগিচা খানা বাসন্তীর ঝলসে পড়া অভূতপূর্বভাবে চমকে দেয়ার মত রূপে হরণ করে ফেলেছে অকৃত্রিমভাবে! অসাধারণ তো শুনেছি মাত্র আজ গোলাপীর রূপ নয়ন তারা ভেদ করে হৃদয় আলিঙ্গন করতে আর বাকি রইলো না।
মানুষ এতটা অসাধারণ কী করে হয়? যে, একজন রাজ কুমারী হয়ে, তার জীবনের যৌবন উজাড় করে সামান্য একটা রিক্সা চালকের ছেলের জন্য! জীবন সৌন্দর্যতা নিয়ে কাল ক্ষেপণ করে!
কিছু বাস্তবতাও অবিশ্বাস যোগ্য তবুও বিশ্বাস না করলেই নয়। অন্তর নিড়ানো কোমল কমল সুগন্ধি মেশা কথাগুলো চরমভাবে আপ্লুত করে যখন আটকে রাখা চোখের জল ছেড়ে দেয় , তখন পৃথিবীতে কে আছ এমন যে, প্রেমের জলে পাথর হয়ে না গলে পারে? মন বলে, জীবনের যৌবন হারিয়ে জমাট বাঁধা মেঘের অন্তরালে থাকা বাদলের মত দীর্ঘকাল আটকে রেখেছিল উজার করা আজকের সবটুকু জলখানি। তাই তাঁর সৌন্দর্য থেকে এখনও যৌবন চলে যায়নি। পৃথিবীও তার হাত বাড়িয়ে দিল এ হৃদয়ে আলিঙ্গন করতে। প্রেম হল আগুনের নদী যা দূরত্ব নিভিয়ে দেয় এবং মুখ থেকে মদের শব্দ সঞ্চারিত করে আনন্দ সমৃদ্ধ এবং কস্তুরী তার অ্যাম্বার অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধময় ভালোবাসার কথা বলে।
দোস্ত! প্রাপ্তির প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হয়, কেননা অকৃতজ্ঞের ঠাঁই কোন কালে স্রষ্টার কাছেও ভালো রয়নি। তাই প্রাপ্তি স্বীকার করেই বলি যে, আজ বুঝলাম মানুষ সৃষ্টিতে যেমন জাতপাত নেই প্রেম ভালোবাসার এ সম্পর্কের তেমনি কোন জাতপাত ও উঁচু নীচু বয়স বংশ পদবী নেই।
মাহিন! হ্যাঁ দোস্ত? একদম সঠিক, যথার্থই সত্য কথা বলেছ। আজ তোর কাছে আমার এখানও পর্যন্ত বিবাহ না করার রহস্য খুলে বলছি শোন! অত্র মহল্লায় বাসন্তী আর আমরা বংশগত দিক দিয়ে ওরা মিরা আমরা চৌকিদার, হলেও অর্থনৈতিক ভাবে
কেউ কারও থেকে দুর্বল নয়।
বাবা মা বাসন্তীকে আমার জন্য খুব পছন্দ করতো এবং তার পর থেকে আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে, জীবনে বিয়ে করলে সে কেবলমাত্র বাসন্তীকেই করবো।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ! চৌকিদার বংশে জন্ম নিয়ে আজ ধরে রাখা মহৎ চরিত্রের মূল্যবোধই যেন স্ববংশের চার দেয়ালের গণ্ডিদেশে নাশ করে চলেছে জীবন যৌবনের প্রাণ। তাই তোমার মত রবিনদের ভালোবাসতে শুরু করি ।
অথচ! সে তোমাকে! জানে তো তোমার পদ পদবী? না! বলছি, সে তোমাকে এতটা ভালোবাসে !
রবিন! না দোস্ত ! সে ভালবাসে নি বরং সে আমাকে “ফাগুন দোলা সেই মন”এর বিনিময়ে মনটাকে কেড়ে নিয়েছে।