অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির কারণে গত দুই বছরে অনেকেই শুরু করেছেন অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা। আবার লকডাউনে বাসায় বসে সময় কাটানোর জন্য ব্যবসায় নেমেছেন অনেকেই। আয়ের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। অনলাইনে যেমন বেড়েছে ব্যবসায়ীর সংখ্যা তেমনি বেড়েছে ক্রেতাও। মানুষ ঘরে বসেই পছন্দের ও প্রয়োজনীয় জিনিস পাচ্ছে তাই অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা এখন এত জনপ্রিয়।
অনলাইনভিত্তিক বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হিসেবে প্রধানত ফেসবুককেই মনে করে সবাই। বাংলাদেশে ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা যতটা জনপ্রিয় ততটা অন্য কোনো অনলাইন ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্ম এখনো হয়ে উঠেনি। ওয়েবসাইটভিত্তিক ব্যবসাগুলোর প্রচারণার জন্যও ফেসবুকই প্রধান মাধ্যম।
প্রোডাক্ট সোর্সিং এখন অনেকটাই সহজ হয়ে যাওয়ায় ইনভেস্ট ছাড়াই ব্যবসা শুরু করা যায়। আর ফেসবুকে বিজনেসের জন্য পেইজ খুলতেও কোনো অর্থের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে সময় কাটাতে বা অবসর সময় কাজে লাগাতে অনেকে শখের বশে শুরু করেছেন অনলাইন বিজনেস। যাদের কখনো ব্যবসা করার ইচ্ছাও ছিল না তারাও এখন বাসায় বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছেন।
এছাড়াও লকডাউনে দীর্ঘ সময় পড়াশোনা থেকে দূরে থাকায় ও মোবাইল ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সময় কাটানোর মাত্রা বেড়েছে অনেকটাই। এর মধ্যে অনেকে বিনোদন গ্রহণকে প্রাধান্য দিচ্ছে আবার কেউ কেউ ফেসবুককে ব্যবহার করছে আয়ের উৎস হিসেবে। ফেসবুকের ব্যবসাক্ষেত্রে এখন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগের পরিমাণ অনেক বেড়েছে।
ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানে ব্যবসাক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়া। আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট বা সোর্সিং থাকলেও টিকতে পারছেন না অনেকেই। এর পিছনে প্রধান কারণ হলো ব্যবসা ও পণ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা।
প্রয়োজনীয় পণ্য আছে, পেইজে প্রতিদিন আপডেট দিচ্ছেন, নতুন নতুন পণ্য আনছেন, মূল্যও কম দিচ্ছেন তবুও বিক্রি হচ্ছে না?
ফেসবুকে ব্যবসায়ীর সংখ্যা যত বেড়ে গিয়েছে তত ফেসবুকের অ্যালগরিদমও চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। যাদের পেইজে ক্রেতাদের এক্টিভিটি বেশি, যে বিক্রেতারা ইউনিকভাবে নিজেদের পণ্য প্রেজেন্ট করছেন তাদের রিচ হচ্ছে বেশি আর সেলও হচ্ছে বেশি।
বিক্রি বাড়ানোর জন্য যেসব কাজ করতে পারেন–
১. যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, প্রতিদিন পেইজে ৩-৪টি পোস্ট দিন। প্রয়োজন হলে ফেসবুকের বিজনেস স্যুইটের মাধ্যমে টাইম সেট করে শিডিউল করে পোস্ট দিয়ে রাখবেন। এতে করে আপনি পেইজে না থাকলেও পোস্ট হয়ে যাবে।
২. টানা সেল পোস্ট না দিয়ে চেষ্টা করবেন ব্যবসার বাইরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আকর্ষণীয় পোস্ট দিতে। তবে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শ নিয়ে পোস্ট দিবেন না। বায়াসড পোস্ট দিলে কাস্টমারদের মনে নেগেটিভ প্রভাব পড়ে। এতে কাস্টমাররা পণ্য পছন্দ হলেও বায়াসড বা বিতর্কিত বিষয় সাপোর্ট করে দেয়া পোস্ট দেখলে পেইজ এড়িয়ে যায়।
৩. বিশেষ কোনো দিবসের জন্য আগে থেকেই পোস্ট রেডি করে রাখবেন। সরকারি ছুটির দিনগুলো দেখে নিন ক্যালেন্ডারে। যেসব দিবস আছে সেগুলো মার্ক করে নিন। সেদিনগুলোর জন্য বানিয়ে ফেলুন কনটেন্ট। বেশি ভালো হয় ছবি নিজে বানিয়ে নিলে। এখন চাইলেই ফোনে বা ল্যাপটপে নিজে ছবি বানিয়ে ফেলা যায় বিভিন্ন অ্যাপসের এডিটর দিয়ে। যত বেশি আকর্ষণীয় ছবি আপলোড দিবেন তত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে।
৪. যে পণ্য নিয়ে পোস্ট দিবেন সে পণ্য নিয়ে ফেসবুক ও গুগলে সার্চ দিয়ে বিভিন্ন তথ্য জেনে নিন আর সেগুলো নিয়ে কনটেন্ট রেডি করে পোস্ট করুন। পণ্য সম্পর্কে আপনার জ্ঞান জাহির করুন। এতে কাস্টমার বুঝবে আপনি পণ্য সম্পর্কে ভালো করে জেনেই পণ্যটি বিক্রি করছেন এতে তারা কিনতে আগ্রহী হবে।
৫. ফেসবুকের ব্যবসার প্রধান প্রয়োজনই হলো পোস্ট রিচ হওয়া। শুধু প্রোডাক্টের ছবি দিয়ে আর পণ্যের নাম, দাম, অর্ডারের সিস্টেম লিখে পোস্ট দিলেই হবে না। বরং পোস্টটি যেন বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায় তার জন্য পোস্টে প্রশ্ন করতে পারেন কাস্টমারকে। পণ্য রিলেট করে যে কোনো প্রশ্ন লিখে দিন যা চোখে পড়লে কাস্টমার কমেন্টে রিপ্লাই দিবে। এতে করে কাস্টমারের সঙ্গে কানেকশন বাড়বে।
ফেসবুকে ব্যবসা করা অনেক সহজ তাই ব্যবসায়ী বেশি। এ জন্য টিকে থাকতে হলে শুধু ভালো পণ্য থাকলেই হবে না বরং পণ্য প্রেজেন্ট করতে হবে ইউনিকভাবে। নিজেকে প্রেজেন্ট করতে হবে বুদ্ধি খাটিয়ে। কাস্টমারের মন কাড়তে পারে এমনভাবে পেইজ সাজাবেন। আর ধৈর্য ও সময় নিয়ে লেগে থাকুন দেখবেন জয় হবে আপনারই!