বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র।

প্রাকৃতিক গ্যাস: ভূপৃষ্ঠ হতে বিভিন্ন গভীরতায় শীলা স্তর এর মধ্যে সঞ্চিত পেট্রোলিয়াম খনিজ তেলের উপরি ভাগে যে মিশ্রণ পাওয়া যায় ,তাকে প্রাকৃতিক গ্যাস বলে।

গ্যাস ক্ষেত্রের অবস্থান: বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল যেমন – বৃহত্তর সিলেট,কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।২৪/১০/১৭ তারিখের প্রকাশিত সংবাদ মতে ভোলা জেলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে বোরহানউদ্দিন উপজেলার টগরি ইউনিয়নে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।এটিতে প্রাথমিক ভাবে ৭০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আছে জানা গেছে।সুতরাং ২০১৭ সাল পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র হলো মোট ২৭ টি।এছাড়া দেশের সমুদ্র সীমায় কিছু গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।তবে এসব প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রে মজুদ গ্যাসের পরিমাণ নিশ্চিত করা যায়নি।বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান এবং বিভিন্ন গ্যাস ক্ষেত্রের গ্যাসের সম্ভাব্য মোট পরিমাণ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত উত্তোলিত গ্যাসের পরিমাণ ও অবশিষ্ট উত্তোলন যোগ্য গ্যাসের পরিমাণ বিলিয়ন কিউবিক ফিট, বি.সি.এফ এককে দেখানো আছে।তবে এরপর প্রায় প্রতি বছর কোনো না কোনো নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে।ফলে উল্লেখযোগ্য রিজার্ভ গ্যাসের পরিমাণ এবং উত্তোলনের পরিমাণ প্রতি বছর বাড়ছে।গ্যাস উৎপাদন এর জন্য বাংলাদেশকে মোট ২৩ টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের উপাদান :- প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান হচ্ছে বিভিন্ন হাইড্রোকার্বন।এছাড়া উচ্চতর কিছু হাইড্রোকার্বন বাষ্প এতে থাকে।পৃথিবীর কোনো কোনো গ্যাস ক্ষেত্রের গ্যাসে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস থাকে।এটি খুবই দুর্গন্ধ যুক্ত এবং এর উপস্থিতি গ্যাসের মান নিম্নমুখী করে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় শতকরা (আয়তনে) ৯৩.৬৮% – ৯৮% মিথেন থাকে;এবং এতে হাইড্রোজেন সালফাইড প্রায় অনুপস্থিত।সুতরাং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস অত্যন্ত উচ্চমানের।

প্রাকৃতিক গ্যাসের শ্রেণীবিভাগ : প্রাকৃতিক গ্যাসের তরল হাইড্রোকার্বন বা উচ্চতর হাইড্রোকার্বনের { সি৫ – সি১৬ } বাষ্পের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে প্রাকৃতিক গ্যাস ২ প্রকার।যেমন :-
(১) শুষ্ক প্রাকৃতিক গ্যাস ও
(২) আদ্র প্রাকৃতিক গ্যাস।

*শুষ্ক প্রকৃতি গ্যাস : শুষ্ক প্রকৃতি গ্যাসের নলকূপে তরল পেট্রোলিয়াম থাকেনা । এতে সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস থাকে।সিলেটের রশিদপুর এর প্রাকৃতিক গ্যাসের ৯৮%
“সি-এইচ ৪” আছে ।

*আদ্র প্রাকৃতিক গ্যাস : আদ্র প্রকৃতি গ্যাসের নলকূপে তরল পেট্রোলিয়াম থাকে।তাই আদ্র প্রাকৃতিক গ্যাসের তরল উচ্চতর হাইড্রোকার্বন ।যেমন :- পেন্টেন্,হেক্সেন,
হেপ্টেন ইত্যাদির বাস্প মিথেনের সাথে থাকে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যাবহার : প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রোকার্বন হাওয়ায় একে কাঁচামাল হিসেবে ব্যাবহার করে রসায়নিক শিল্পে অনেক অজৈব যৌগ উৎপাদন করা হয়। উন্নত দেশ সমূহে পেট্রো কেমিক্যাল একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত,যেখানে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল হতে অনেক যৌগ উৎপাদন করা হয়।তবে বাংলাদেশে এধরনের শিল্প এখনো গোড়ে উঠে নি।

∆(১) শিল্পক্ষেত্রে শুধু ইউরিয়া সার তৈরিতে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়। চট্টগ্রামে এবং সিলেট এর ফেঞ্চুগঞ্জে স্থাপিত মোট ৭ টি কারখানায় প্রাকৃতিক গ্যাস হতে ইউরিয়া সার উৎপদিত হয়।বাংলাদেশে কৃষি ক্ষেত্রে এ ইউরিয়া ব্যবহার অধিক ফসল উৎপাদনে প্রচুর সাফল্য এনে দিয়েছে।
২০১৬ সালের জানয়ারিতে ১৩.৬০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ আছে।

∆(২) জ্বালানিদ ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন ২৭৩৩.৬ মিলিয়ন ঘনফুট [এম .সি .এফ ] গ্যাস উত্তোলন এবং ৪৯ টি স্থান থেকে এ প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।দেশের গ্যাস চাহিদা ৩১% পূরণ করছে তিতাস গ্যাস ফিল্ড।

∆(২) বর্তমানে প্রতিদিন ১২৪৯.১ বি.বি.এল
তরল কনডেন্সেট উৎপাদন করা হচ্ছে। এ কনডেন্সেট পরিশোধন করে পেট্রোল,কেরোসিন,ফার্নেস অয়েল,লুব্রিকেন্ট অয়েল ইত্যাদি উৎপন্ন করা হয়।বিভিন্ন শিল্প খাতে এসব জ্বালানি রূপে ও মেশিনের লুব্রিকেন্ট রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে।

Related Posts