বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কোন মোবাইল কোম্পানি/অপারেটর সেবা দেওয়া শুরু করে এবং সে সময় কলরেট কত ছিল?
দেশের ১ম মোবাইল অপারেটর সিটিসেল ১৯৯৩ সালে যখন যাত্রা শুরু করে তখন একেবারে ছোট ছিলাম। তবে একটু বড় হওয়ার পর লোকমুখে শুনেছি ১৮ টাকা/মিনিট কলরেট ছিল। আমার বাবা ২০০১ সালের দিকে সিটিসেল কিনেন। তখনকার সেটে আলাদা রিমকার্ড ছিল না।
পরবর্তীতে সেটগুলোতে রিমকার্ড প্রযুক্তি নিয়ে আসা হয়। সর্বনিম্ন ২৭৫ টাকার কার্ড রিচার্জ করা যেত যার মেয়াদ ছিল ২১ দিন। ভ্যাট ছাড়া যেকোন মোবাইলে ৭ টাকা/মিনিট কলরেট ছিল। এক্সট্রা কলরেটে টিএন্ডটি নাম্বারে দৈনিক ১২ ঘণ্টা আউটগোয়িং কল করা যেত এবং ২৪ ঘণ্টা টিএন্ডটি ইনকামিংয়ের জন্য ২টাকা/মিনিট চার্জ কাটতো। (২০০২ সালের দিকে)
২০০৫-২০০৬ সালের দিকে রাত ১১ টা থেকে সকাল ৮ টা, দুপুর ১টা থেকে ৩টা সময়গুলোতে সিটিসেল টু সিটিসেল একেবারে ফ্রি কথা বলা যেত। একটা সময়ে এই অফারের ইতি ঘটে। সর্বনিম্ন ১৪৯৯/- টাকাতে Huawei এর হ্যান্ডসেট এনেছিল তারা। তখন গ্রাহক কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
সিটিসেলের কলরেট অন্য অপারেটরের চাইতে কম ছিল। দীর্ঘদিন একই অপারেটরে ২৫ পয়সা/মিনিট কলরেট সিটিসেলেই কার্যকর ছিল (শর্তহীন)
সিটিসেলের মডেমভিত্তিক মোবাইল ইন্টারনেট সেবা ‘জুম’ বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
তবে কৌশলগত ভুলের কারণে সিটিসেল মার্কেট থেকে ছিটকে পড়ে। বাংলাদেশের মোবাইল গ্রাহক যখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছিল, সিটিসেলের গ্রাহক তখন গাণিতিক হারে কমছিল। এর কারণ হিসেবে আমার মনে হয়-
*অন্য অপারেটর থেকে শুধুমাত্র সংযোগ পরিবর্তন করে সিটিসেলে আসার সুযোগ ছিল না। যেহেতু জিএসএম সেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা তখন অনেক বেশি ছিল। সিটিসেল রিম কার্ডের পরিবর্তে সিম কার্ড প্রযুক্তি নির্ভর হলে, গ্রাহক অপারেটর সুইচ করার সুযোগ পেত।
*সিডিএমএ সেটের অপ্রতুলতা: সিটিসেলের নির্দিষ্ট কয়েকটা হ্যান্ডসেট ছাড়া বাজারে অন্য কোন হ্যান্ডসেট পাওয়া যেত না। (৫/৬ টা হ্যান্ডসেট থেকে ১টা হ্যান্ডসেট ক্রয় করা ছাড়া কোনো অপশান ছিল না) কিন্তু বাজারে তখন জিএসএম প্রযুক্তির নতুন নতুন হ্যান্ডসেটের অভাব ছিল না। আর সিটিসেল সেটগুলো মোটেও মানসম্মত ছিল না।
*নেটওয়ার্ক কাভারেজ: সিটিসেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ শুধুমাত্র উপজেলা কিংবা জেলা শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল। প্রত্যন্ত গ্রামে সেবা পৌঁছিয়ে দেবার মানসিকতা তাদের ছিল না। তাই মোক্ষম সময়ে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে তারা ব্যর্থ হয়।
*প্রতিযোগিতামূলক বাজার: সূচনালগ্নে সিটিসেল একচেটিয়া ব্যবসা করেছে। পরবর্তীকালে বাকি অপারেটরদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহন না করা।
*মোবাইল টেলিকম সেবায় পিছিয়ে থাকলেও মোবাইল ইন্টারনেট সেবাদানে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। সেই সুযোগকে সিটিসেল বিশেষভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।
*সিংগাপুরভিত্তিক SingTel যখন সিটিসেলের শেয়ার কিনে তৎপরবর্তীকালে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা উচিত ছিল, সেরকম কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি।
*এর বাইরেও আরো বেশ কিছু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ আছে -প্রথম মোবাইল অপারেটর হয়েও বাজার থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার জন্য।