বাবা মায়ের প্রথম সন্তান গুলো সব সময় কল্পিত সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্মায়। তেমনি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো এক রাজকন্যা জন্মের ছয় বছর পরে একটা বোন পেল।অন্য কোন কিছু না বুঝলে ও এটুকু বুঝল যে এ শিশুটি এ সংসারে আসার পর মা বাবা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। দুই বোনের মাঝখানে আরেকটা সন্তান আল্লাহ্ দিয়ে আবার নিয়ে গেছেন তাই এই তৃতীয় সন্তানটি পেয়ে বাবা মা এত খুশি। যে যাই বুঝুক বড় বোনটা বুঝে নিল সে একটা খেলার সাথী পেয়েছে।
অল্প বয়সি মাতৃত্বের প্রথম সন্তান ছেলে হওয়া আর প্রথম দুইটা মেয়ে হওয়ার মধ্যে কত যে পার্থক্য আমাদের সমাজে তা হয়তো বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। যে মা নিজের মনে কোন কষ্ট নেই কিন্তু মানুষের তৈরি ব্যবধানের কষ্ট সহ্য করেছে সে মা ই বোঝে এটা যে কি বেদনাদায়ক অনুভূতি। যে বোনের একটা বড় ভাই নেই সে বোঝে বড় ভাই না থাকা বোনদের যে কি কষ্ট। এমন অবস্থায় মা বাবা আর দুই বোনকে খুশি করার জন্য একটা ভাই পাঠালেন এ সংসারে। বড় বোনটা এবার বুঝে নিলেন দায়িত্ব কাকে বলে।সহযোগিতা করার জন্য কোন মানুষ থাকুক বা না থাকুক বোনের দায়িত্ব সব সময় থাকেই। সবাইকে খুশি করে আল্লাহ্ আরও দুই ভাই দিলেন। আর বোন টাকে বানিয়ে দিলেন এক বোন আর তিন ভাইয়ের একজন দূরদর্শী প্রহরী। কোলে পিঠে করে মানুষ করার পাশাপাশি কড়া একজন অভিভাবকের যেন সব দিকে তীক্ষ্ম খেয়াল।
সব বড় বোনদের থেকে এ বড় বোনটা যেন একটু আলাদা। শুধু আলাদা নয় আল্লাহ্ পাক এমন একটা ঘরে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন যে ঘরে বোনের Husband এর মা বাবা ছিলেন না বলে এ বোনটার মা বাবাই হয়ে গেল Husband এর ও বাবা মা।তাই সব মেয়েদের মতো এই বোনটি শশুর বাড়ি যায়নি। রয়ে গেল বাবার বাড়ি।
বোনটির Husband একটা সময় সব কিছু ঠিক করে বোনটিকে নিয়ে গেল সৌদি আরব। এবার বোনটির নিজের কোলে একটি সন্তান আসবে। খুশি যেন আর ধরেনা।মা বাবার এত আদরের মেয়েটি,ভাই বোনদের আপুনিটা এত দূরে চলে গেল ভাবতেই কষ্ট হতো প্রতিদিন। তারপরও একটাই আশা ছিল বোনটি ভালো আছে,শান্তিতে আছে। বাংলাদেশে বসে সবাই সৌদি আরবের ছবি দেখতো। বোনটি হজ্ব করছে দেখতো। দেখে কি যে শান্তি সবার মনে।
হঠাৎ একদিন খবর এল প্রথম সন্তান মায়ের কাছে দেশের মাটিতে জন্মাবে বলে বোনটি দেশে আসবে। খুশিতে সবাই আত্মহারা। দেশে আসল বোনটি কিন্তু বড় অসময়ে দুনিয়ায় চলে আসল বোনের রাজকন্যাটি। খুব তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে পাঠিয়ে আল্লাহ্ পাক নিয়ে গেলেন রাজকন্যাটিকে।
আর বিদেশ যাওয়া হলনা। সব কিছু যেন ওলটপালট হয়ে গেল।একটা নতুন মুখের শোকে বোনটি পাগলপ্রায়। হাজার চেষ্টার পর ঘর আলো করে আরেক রাজকন্যার আগমন হল। ভূবন ভুলানো হাসি নেমে আসল সংসারে,তারপর আসল এক রাজপুত্র। খুশির যেন বন্যা বয়ে গেল।
সন্তান আর সংসার সামলাতে দুই সন্তানের বাবা ও চলে আসলেন দেশে। নিজের সংসার বলতে একটা কিছু হয়ে ও হলনা। ভাইদের দায়িত্ব রাখতেই হবে। ভাইদের সব দায়িত্ব পালন আর সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য এখন পর্যন্ত এ দায়িত্ব আর শেষ হলইনা। দায়িত্বে নেই কোন অবহেলা। রোগ শোক আর শত কষ্ট ও হার মেনে গেল সন্তানদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনায়।
হ্যাঁ এ বোনটিই আমার একমাত্র বোন ,তোমাদের মা। তুমি তিথি , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণী পেয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছ। তালহা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে চতুর্থ হয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছ। সবাই হয়তো বলবে তোমাদের লেখাপড়া শেষ হয়েছে কিন্তু আমি বলব শেষ হয়নি , আরেকটা অধ্যায় শুরু হয়েছে। এ সময় নিজেকে সত্যিকার ভাবে গড়ে তোলার সময়। মা বাবার কথা শুনে নিজেদের কে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোল। ভালো মানুষ হয়ে মা বাবার পাশে থাকবে সব সময় এই শুভকামনায় তোমাদের খালামনি —
নাজমুন নাহার অপর্ণা।
শৈশবে আমাদের বৃষ্টিময় দিনগুলি…
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। বৃষ্টিময় দিয়ে শৈশবের বৃষ্টির দিনে আমরা যা যা করতাম...