বাসায় বসে করা যায় এমন কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা

১. পঁচা ডিম খুঁজে বের করাঃ

প্রতিদিন আমাদের খাবারের তালিকায় ডিম বা ডিম দিয়ে তৈরি খাবার না থাকলে চলে না। প্রতিদিন যে ডিম কিনি তার সবগুলো ডিম ভালো নাও হতে পারে। কোনটা ভালো আর কোনটা পঁচা ডিম, আমরা কিভাবে বুঝবো?
যা যা লাগবে: কয়েকটি ডিম l পানি l একটি বড় বালতি।
যেভাবে করবে: প্রথমে বালতির অর্ধেক পানিতে পূর্ণ করি। এরপর ডিমগুলোকে আস্তে করে সেই পানিতে ছেড়ে দেই। কী, কোন ডিম ভাসছে?

যা ঘটল: হুম্‌, যদি ডিম পানিতে ডুবে না গিয়ে ভেসে থাকে। তখন সহজেই বুঝবো ডিমটি পঁচা। পঁচা ডিম পানিতে ভাসে। কিন্তু ভালো ডিম পানিতে ভাসে না। তলিয়ে যায়। কিন্তু কেন? আসলে ভালো ডিমের ভেতরে কোনও গ্যাস থাকে না। কিন্তু পঁচা ডিমের ভেতর হাইড্রেজেন সালফাইড গ্যাস থাকে। ভালো ডিমের গড় ঘনত্ব পানির ঘনত্বের চেয়ে বেশি। তাই ভালো ডিম পানিতে ছেড়ে দিলে সে যতটুকু পানি অপসারণ করে তার ভর ডিমের ভরের চেয়ে কম। সুতরাং ভালো ডিম পানিতে ডুবে যায়।

২. লবনের আয়োডিন পরীক্ষাঃ

বাজার থেকে আনা লবনে আয়োডিন আছে কিনা কি ভাবে জানবো? তাও বাসায় বসে।

যা যা লাগবে: এক চা চামচ পরিমান আয়োডিনযুক্ত লবন l কাটা লেবু l ভাতের মাড় l একটি প্লেট।
যেভাবে করবে: প্রথমে প্লেটে এক চা চামচ পরিমান আয়োডিনযুক্ত লবন ঢালবো। এবার লবনটুকুতে ভাতের মাড় ৫-৬ ফোঁটার মত নিব, যাতে লবনটুকু ভিজবে কিন্তু গলবে না। এরপর এ লবনে ৩-৪ ফোঁটা লেবুর রস ফেলবো। কী, পরিবর্তন চোখে পড়ে?

যা ঘটল: যদি লবনে আয়োডিন থাকে তবে লবনটিতে নীল-কালো রং চোখে পড়বে। কারন, স্টার্চ (ভাতের মাড়) এর উপস্থিতিতে আয়োডিন এই নীল-কালো রং সৃষ্টি করে।

৩. পানিতে ডিম ভাসানোঃ

একটা ডিমকে পানিতে ছেড়ে দিলে কী হবে বলো তো? অবশ্যই ডুবে যাবে পানিতে। যদি বলি একটা ডিমকে পানিতে ভাসিয়ে রাখতে, পারবে?
যা যা লাগবে: একটি ডিম l পানি l লবণ l একটি বড় গ্লাস
যেভাবে করবে: প্রথমে গ্লাসের অর্ধেক পানিতে পূর্ণ করো। এর মধ্যে ছয়-সাত চামচ লবণ মেশাও। লবণ পানিতে পুরোপুরি মিশে না যাওয়া পর্যন্ত চামচ দিয়ে নাড়তে থাকো। এরপর ডিমটিকে আস্তে করে সেই পানিতে ছেড়ে দাও। কী, ভাসছে তো?
যা ঘটল: হুম্‌, ডিম পানিতে ডুবে না গিয়ে ভেসে আছে। আসলে পানিতে লবণ মেশানোর ফলে পানির ঘনত্ব বেড়ে যায়। এভাবেই বেশি ঘনত্বের পানি সহজে কোনো বস্তুকে ভাসিয়ে রাখতে পারে।

৪. না বেঁধে সুতা দিয়ে বরফ তোলোঃ

এক টুকরা বরফ একটি গ্লাসের পানিতে ছেড়ে দিলাম। কোনো চামচ বা কাঠি ছাড়াই সুতা দিয়ে তোমাকে বরফের টুকরা গ্লাস থেকে তুলে ফেলতে হবে। সুতা দিয়ে বরফের টুকরাকে বাঁধতে পারবে না কিন্তু। তাহলে তুলবে কীভাবে?
যা যা লাগবে: বরফের টুকরা l একটি গ্লাস l পানি l লবণ l সুতা
যেভাবে করবে: প্রথমে লম্বা এক টুকরা সুতা কেটে নাও। একটি গ্লাসের পুরোটা পানি দিয়ে পূর্ণ করে বরফের টুকরা ছেড়ে দাও। বরফ পানিতে ভেসে থাকবে। এবার বরফের ওপর সুতার একটি প্রান্ত আড়াআড়ি করে রেখে দিয়ে সুতা ও বরফের টুকরার ওপর অল্প একটু লবণ দিয়ে ঢেকে দাও। এক মিনিটে অপেক্ষা করে সুতার অপর প্রান্ত ধরে টান দাও। মজা দেখতে পাচ্ছ?

যা ঘটল: বরফ সুতার মাথায় ঝুলছে। লবণ ছিটিয়ে দেওয়ার ফলে বরফের হিমাঙ্ক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কিছুটা কমে আসে এবং তা গলতে শুরু করে। ফলে সুতাটি বরফের ভেতরে ঢুকতে শুরু করে। যখন লবণের ক্রিয়া শেষ হয়ে যায়, তখন আবার হিমাঙ্ক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চলে আসে এবং সুতার চারপাশের বরফ আবার জমতে শুরু করে। জমাট বেঁধে যাওয়ায় সুতাকে ওপরে তুললে বরফও সুতার সঙ্গে উঠে আসে।

৫. চার্জের ধর্ম জানাঃ

কীভাবে আধানের/চার্জের উৎপত্তি হয়। এবার আমরা দেখবো এই আধানগুলো (ধনাত্বক ও ঋণাত্বক) কিরূপ ধর্ম প্রদর্শন করে। এরজন্য আমরা নিচের কাজগুলো করবো।
যা যা লাগবে: দুটি চিরুনি। পশমী কাপড়।

যেভাবে করবে: একটি ছোট প্লাষ্টিকের চিরুনিকে সূতা দিয়ে বেধে একটি শুকনো কাঠির মাথায় ঝুলিয়ে দেই। এটি এমনভাবে ঝুলতে হবে যাতে আশেপাশে কোন কিছু স্পর্শ না করে। এবার আরেকটি শুকনো কাঠির মাথায় অন্য একটি প্লাষ্টিকের চিরুনি ঝুলাও যাতে এটা মুক্তভাবে ঝুলতে থাকে। এবার উভয় চিরুনিকে কিছুক্ষণ পশমী কাপড় দিয়ে ঘষ। এখন চিরুনি দুটিকে কাছাকাছি আন। কি লক্ষ্য করছ?

যা ঘটল: চিরুনি দুটি পরস্পরকে বিকর্ষণ করছে। এবার পশমী কাপড়টি চিরুনির কাছে এনে দেখ এটি চিরুনির কাছে চলে আসবে।

৬. চার্জের ধর্ম প্রদর্শনঃ

এবার আমরা দেখবো স্থির বিদ্যুতের পরীক্ষায় এই আধানগুলো (ধনাত্বক ও ঋণাত্বক) কিরূপ ধর্ম প্রদর্শন করে। এরজন্য আমরা নিচের কাজগুলো করবো।
যা যা লাগবে: দুটি বেলুন। সুতা। উলের কাপড় অথবা গায়ের সোয়েটার। কাগজের টুকরা

যেভাবে করবে: দুটি বেলুনকে ফুলিয়ে সুতো দিয়ে ভালভাবে বেধে নাও। এবার একটি বেলুনকে উলের কাপড় বা গায়ের সোয়েটার দিয়ে ঘর্ষে কাগজের টুকরারকাছে ধরলে দেখা যাবে বেলুন কাগজের টুকরোগুলো কাছে টেনে নিচ্ছে। পুনরায় দ্বিতীয় বেলুনটিকে উলের কাপড়বা গায়ের সোয়েটারর সাথে চেপে ধরলে দেখা যাবে বেলুনটি কাপড়ের গায়ে লেগে আছে। এর কারণ কী?

যা ঘটল: কারণ ঘর্ষর্ণের ফলে উলের কাপড় ও বেলুনে বিপরীত ধর্মী আধানের সৃষ্টি হয়েছে। এবার যখন দ্বিতীয় বেলুনকে প্রথম বেলুনের কাছেনেওয়া হবে তখন কি দেখবে? দেখবে যে দুটি বেলুন পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কারণ ঘর্ষণের ফলে দুটি বেলুনেই একই ধরণের আধানের সৃষ্টি হয়েছে।

৭. ডিমের খোসা অদৃশ্য করে আবার ফিরিয়ে আনাঃ

সবার বাসায় ডিম ও ভিনেগার থাকে। ডিমের খোসা অদৃশ্য করা আবার ফিরিয়ে আনা বিজ্ঞানের একটি মজার খেলা। এটি দেখিয়ে আমরা ছোটদের অবাক করে দিতে পারি।

যা যা লাগবে: একটি সিদ্ধ ডিম। ভিনেগার। একটি বড় গ্লাস।

যেভাবে করবে: ডিমটি হাতে নেই। কী অনুভব করছি? খোসাটা বা খোলসটা শক্ত অনুভূত হবে। এবার গ্লাসের উপরদিক কিছু খালি রেখে বাকি অংশে ভিনেগার পূর্ণ করি। এরপর ডিমটি ভিনেগার পূর্ণ গ্লাসে ছেড়ে দেই। দেখবো ডিমটি তলিয়ে গেছে। কতক্ষণ অপেক্ষা করলেই দেখতে পাব পানিতে বুদ বুদ দেখা যাচ্ছে। একদিন ডিমটি এভাবে গ্লাসে রেখে দেব। পরদিন ডিমটি হাতে নেই। কী অনুভব করছি? সবাই দেখি। এখন আবার ডিমটি খোলা জায়গায় একদিন রেখে দেই। পরদিন হাতে নেই। কী অনুভব করছি?

যা ঘটল: ডিমের খোসায় ক্যালসিয়াম কার্বনেট থাকে। ফলে আমরা ডিমটি শক্ত অনুভূব করেছিলাম। ভিনেগারের মধ্যে ডিমটি রেখে দিয়ে আমরা বুদ বুদ দেখেছিলাম। তা হচ্ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস। এ গ্যাস পানি অপেক্ষা হালকা বলে বুদ বুদ আকারে বের হচ্ছিল। একদিন ভিনেগারে ডিমটি রাখার পর পাত্র থেকে ডিম বের করে এনে কী অনুভব করেছিলাম? ডিমটার খোসা নেই। কারন খোসা ক্যালসিয়াম কার্বনেটের তৈরি আর ভিনেগার হল অ্যাসিটিক এসিড। অ্যাসিটিক এসিড, ক্যালসিয়াম কার্বনেটের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে উড়ে যায়। ক্যালসিয়াম কার্বনেট না থাকার ফলে খোসাটা নরম অনুভূত হয়েছিল। আবার একদিন যে খোলা জায়গায় ডিমটি রেখেছিলাম। পরদিন কী অনুভব করেছিলাম? শক্ত। কারণ কী? কারন ডিমটি বাতাস থেকে পুনরায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস শুষে নিয়ে ক্যালসিয়াম কার্বনেট তৈরি করে ফেলেছে। তাই ডিমটি শক্ত অনুভূত হয়েছিল।

Related Posts

18 Comments

মন্তব্য করুন