গ্রামের নাম হলো স্বরগ্রাম। গ্রাম বলবো নাকি শহর বলব ঠাহর করতে পারছি না। কারন গ্রামের মধ্যে শহরের আধুনিকতা ঢুকে পরেছে। গ্রাম মানেই যে সবুজের লীলাভূমি এ আর আপনাদের আলাদা করে বোঝাতে হবে না।
গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফ। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার। বড় ছেলের নাম শামীম-আল-হাসান ডাক নাম হাসান। আমাদের গল্পের এটাই হিরো আবার এটাই ভিলেন।
ছোট বেলা থেকেই হাসান অত্যন্ত বাস্তব ভিত্তিক ও মেয়েদের প্রতি একটু বিরক্তকর ছিল। তবুও সে একবার তার ক্লাসের একটি মেয়েকে চোখ মেরেছিল। “টিট ফর ট্যাট” প্রবাদ অনুযায়ী তার বাবার কাছে নালিশ যায়। বরাবর সেদিনের বকুনি খাওয়ার পর থেকেই তার মেয়েদের বিষয়ে মনের মাঝে একটা ক্ষোভের জন্ম নেয়। তবে সেই ক্ষোভ তার মনের মাঝে মাত্র সাত বছরেই যায়গা করে রাখতে পেরেছিল। ক্লাস নাইন এ পড়ার সমায় মনের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে একটি মেয়েকে প্রস্তাব করে । কিন্ত এই মেয়েটি ছিল একটু বোয়াল মাছ প্রকৃতির।
যথাগতভাবে, প্রস্তাব এর সাথে সাথেই মেয়েও রাজি। হাসান আবার পড়ল কিছুদিনেরজন্য বিপদে কারন এইবারের মেয়েকে সে নিয়ন্ত্রন করতে পারছিলোনা কারন মেয়েটি অত্যন্ত চঞ্চল ছিলো। হাসান বাস্তব ভিত্তিক ছিলো তাই তার চঞ্চলতা সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তারপর আরকি হাসান মেয়েটির সাথে বর্তমান সময়ের প্রেমিক প্রেমিকাদের কমন একটি বাক্য ব্যবহার করল। “Let’s break up”
তবে মেয়েটি চঞ্চল ছিলো বলে তার পক্ষে এই বিরহ সহ্য হচ্ছিলো না। সে অনেক চেষ্টা করে হাসানের সাথে গ্রামের একটি অনুষ্ঠানে হাসান আসে। তাকে দেখে মেয়েটি অনেক খুশি হয়। কিন্ত হাসান মেয়েটিকে দেখে ভেতরে ভেতরে ভয় পেতে থাকে। সে ভাবে এত পরিচিত মানুষের মাঝে মেয়েটি যদি শুধু তাকে ডাক দেয় তাহলেই তার মান সম্মান যাবে। অনূষ্ঠান শেষে মেয়েটি একজনের দ্বারা হাসানকে ডাক দেয়। কিন্ত হাসান কোনো রকমে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ( এতে আমরা সবােই নিন্দা জানাই ) যাইহোক বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেল। আর মেয়েটি হাসানের কথা একবারও মনে করলো না। রাস্তায় দেখলে তাকে পাত্তাই দেয় না। তারপর আবার হাসানের মনে কিছুদিন প্রেম ক্ষোভ জেগে রইলো। দেখতে দেখতে দুই বছর কেটে গেল। সামনে হাসানের এইচএসসি পড়িক্ষা ছিল।
করোন নামক মহামারি ভাইরাসের কারনে পড়িক্ষা হলো না। মনে হলো যেন পৃথীবি থমকে গেছে। কিন্ত মন তো আর থমকে নেই। কথাপূর্বক ক্ষোভ আবার কেটেগেল। গ্রামেরই একটা মেয়ে এবার। তার নাম ছিল শায়লা আক্তার তুলি। মেয়েটি আমাদের গল্পের হিরোর থেকেও একটু বেশি বাস্তব ভিত্তিক। অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের এবং শান্ত মেজাজের মেয়ে তুলি। হাসান তাকে পছন্দ করতে শুরু করে করোনা কলীন সময় সারাদিন ঘরে বসে আর বিকাল হলেই তুলিদের বাড়ীর সামনে ঘোরাঘুরি। বেশিদিন কাটল না তুলির চাচাতো এক বড় বোনের মাধ্যমে হাসান প্রস্তাব পাঠালো ভেতরের কথা আর বলবো না শুধু এটাই বলবো এবারও মেয়ে রাজিই হয়ে গেলো। কিন্ত এবারে প্রেমের প্রথমদিকে হাসানের আগ্রহটা একটু বেশি ছিল।
কারন এবারের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে তুলি হাসানের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ে। সময় যায় আর হাসানের প্রতি তুলির যত্ন এবং ভালোবাসা বাড়তেই থাকে। তাছাড়া তুলি অনেক বাধ্যনুগত ছিল। হাসানের সবকথা সে শুনতো সবসময়। এভাবে আরো কিছুদিন চলার পর হাসান এইচএসসি তে অটোপাশ হয়ে গেলো। এভাবে আরো কিছুদিন চলার পর এবার এডমিশনের পালা। হাসান সময়ের ধাক্কায় চলে গেল এডমিশন যুদ্ধে। যাওয়ার আগে সে তুলির কাছে বাংলা ছবির মতো কষ্টের বিদায় নিল। প্রায় দুজনকে থাকতে হবে ১০০ কি.মি. দুরে। তুলির মনের ঘড়ের ঘনঘটা কিন্ত হাসান অতটা মনে করছে না। কারন হাসানের মনে তখন পরিক্ষার ভয়টা ঢুকে গিয়েছিল। বিদায়ের পালা শেষ। হাসান চলে গেলো শহরে। তুলির কষ্টটা শুধু সেই বুঝতে পারলো। কিন্ত তাতে কি সে তো বাস্তবভিত্তিক।
কিছুদিন গত হলো। হাসান পড়াশোনায় ব্যাস্ত হয়ে গেল। কখনো লকডাউন পড়ে আবার কখনো ছাড়ে। তবুও হাসান তীব্রগতিতে তার পড়াশোনা চালু রাখলো। শহরেরে এক ব্যচেলর মেসে পরিচয় হলো তার রুমমেটদের সাথে। তার রুমমেট এর নাম নুর মোহাম্মদ নবীন। সে আবার আলাদা মানুষ। তার কোনো ফিলিংস নেই। কয়েকদিন তার সাথে মেলামেশা করে হাসান নিজের মাঝে পরিবর্তন খুজে পেল। নবীন সিঙ্গেল ছিল আর নবীন এর খুশি দেখে হাসান বুঝতে পারলো যে জীবনে রিলেশন কতটা যন্ত্রনাদায়ক আর বিরক্তিকর। হাসান তার সকল গল্প নবীনের সাথে শেয়ার করলো এবং কিভাবে রিলেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তার পরামর্শ চাইলো। নবীনের পরামর্শ অনুযায়ী তুলিকে এবার একটু একটু করে এভোইড করতে শুরু করলো হাসান। আসলে হাসান বুঝতে পেরেছিল যে সে এতদিন যাদের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছিল আসলে তাদরে কউকেই সে ভালোবসতে না সেগুলা ছিল বয়ঃসন্ধিকালের বিকৃত মস্তিষ্কের চিন্তাধারার এক বিকৃত মস্তিষ্ক এর চিন্তাধারর এক সম্মিলিত রুপ। হাসান তখন জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে বুঝে গিয়েছিল।
যাইহোক তুলি অনেক বাধ্যনুগত ছিল তাই সে এগুলোকে খুব সহজেই মেনে নিল। কিছুদিন পর হাসান তার সাথে অফিসিয়ালি ব্রেক আপ করে। এবং সে তাকে বোঝায় যে সে যতদিন প্রতিষ্ঠিত হয়ে ফিরে আসবে ততদিন তুলির অপেক্ষা করা অসম্ভব। তাই তাদের ভালোবাসা পরিনতি পাবে না। হাসানের কথা শুনে তুলি বুঝতে পাড়লো যে আসলেই তাদের ভাালোবাসার কোন পরিনতি নেই। তাই সেও ব্রেক আপ করলো।
ব্রেকআপের পর হাসান আনন্দিত হলো এই ভেবে যে সে এখন থেকে সিঙ্গেল। কিছুদিন হাসান একাকিত্ব অনুভূতি গ্রহন করলো। তারপর এডমিশনের চাপে হাসান ব্যাস্ত। হাসানের এডমিশন শেষ হলো এবং রেজাল্ট আসার পর সে ভালো একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হলো। এদিকে তুলিরও এসএসসি পরিক্ষা। বেশকিছুদিন পর তুলির পরিক্ষা শেষ হলো। তারপর এভাবেই চলতে থাকে কিছুদিন। তুলির রেজাল্ট বের হলো এবং তুলি জিপিএ ৫.০০ পেল। হাসান তখন গ্রামে ছিল। সে তুলির ফলাফলে খুশি হবে নাকি কষ্ট পাবে। কিছুই বুঝল না তখন হাসান উপলব্ধি করলো যে তুলি তার ভালোলাগা ছিল, ভালোবাসা ছিল না। বর্তমান জীবনে ভালোবাসা বলতে মানুষ যা বোঝে সে সবগুলো আসলো ভালোবাসা নয়। হাসান জীবনের এই সর্বসেরা সত্যটুকু জানার পর আবারো রিলেশনের প্রতি তার মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করলো। আসলে হাসান উপলব্ধি করল যে ভালোবাসা সম্পর্কে বুঝতে এবং বস্তবতা বুঝতে তার আরো সময় লাগবে।
তুলিরও এই অবস্থা। তুলি বুঝল যে তাকেও পড়াশোনা করে ভালো কিছু করতে হবে। আসলে হাসানের সাথে তার ভালোলাগার সম্পর্ক ছিল তা সে বুঝতে পারলো এবং জীবন নিয়ে সে নিজের মতো ব্যস্ত হয়ে পরলো।
এই গল্পটি মূলত সেইসব কিশোরদের জন্য যারা অপরিপক্ব বয়সে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। আসলে কিশোর বয়সে ভালো লাগবেই তারা ভালোবাসা হিসেবে গন্য করে। যারা বাস্তবতা বুঝতে পারে তারা রিলেশন থেকে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। আর যারা বোঝেনা তারা বিভিন্ন ঝামেলা, বিপদজনক সময় এবং আত্যহত্যা পর্যন্ত অতিবাহিত করে। তাই কিশোরদের উদ্দেশ্যে আমাদের গল্পের হিরো হাসানের বক্তব্য-
“ আগে জীবনের বাস্তবতা বুঝতে শিখো,
তাহলে আসল ভালোবাসার সন্ধান পাবে।”
গল্পটির লেখক – মোঃ ইমন হোসেন।
প্রচারনায় – মোঃ রিপন হোসেন।
ওয়াও✌️
ধন্যবাদ
gd
ধন্যবাদ
Ok
So nice post
ধন্যবাদ
চিন্তাধারাটা অনেক ক্রিটিক্যাল
ধন্যবাদ
great…
ধন্যবাদ
nice
ধন্যবাদ
Nice
ধন্যবাদ
Nice
nice post
Nice
❤️