বিচিত্র ভাগ্য ( একটি ছোট গল্প)

তিন দিনের জন্য অফিসের একটি কাজের চট্টগ্রাম এসেছি ।নীলাকে রেখে এতদূর এসেছি তাও কয়েকদিনের জন্য এই প্রথম। দুশ্চিন্তা হচ্ছে ।সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে করতে পারবে তো ।কোনো সমস্যা হবে না তো। যদিও কাজের মেয়েটিকে বলে এসেছি নীলাকে দেখে রাখতে।

নীলার সাথে বিয়ে হয়েছে ১ বছর হলো। বিয়ের কিছুদিন আগে নীলার একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে নীলা আর হাঁটতে পারে না। দুর্ঘটনাটি ঘটার কয়েকদিন আগ থেকে আমাদের বিয়ের কথা চলছিল। তখন পর্যন্ত আমি নীলাকে দেখিনি ।নীলা আমার ছবিটি দেখেছিল কিনা তাও জানিনা। নীলা দূর্ঘটনাটি ঘটার পর আমার পরিবারের কেউ চাইছিল না বিয়েটি হোক। বিষয়টা স্বাভাবিক ছিল। কোনো মা চাইবেনা তার ছেলেকে এমন কোন মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে যে হাঁটতে পারে না। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করব। অনেক চিন্তা ভাবনা করলাম ।যদি দুর্ঘটনাটা আমার সাথে ঘুরত তাহলে নিলা কি করত।

পরিবারের অবাধ্য হয়ে অবশেষে নীলাকে বিয়ে করলাম। যদিও শুরুতে নীলা বিয়ে করতে রাজি ছিল না ।কারন নীলা ভাবছিল ওর ওপর করুণা করে বিয়ে করছি।

আশাকরি এখন ওর ভুলটা ভেঙেছে।গত এক বছরে আমি কখনো নীলাকে বুঝাতে চাইনি যে সেদিন আবেগের বষে কিংবা করুণা করে ওকে বিয়ে করেছিলাম। প্রতিটি দিনই নীলাকে আমার সাধ্যমত সব কাজে সাহায্য করেছি। কিন্তু এখন নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে। আমার দ্বারা এত ভয়াবহ কাজটি হলো কিভাবে। সারা জীবনেও মনে হয় এই কাজের মাশুল দেওয়া সম্ভব হবে না ।

এখানে আসার আগের দিন রাতে কিছু কাগজপত্র আর দুই-একটা শার্ট-প্যান্ট নেওয়ার জন্য একটা ব্যাগ খুজছিলাম। আলমারিতে একটি নীল রঙের তিন চেইনের ব্যাগ পেয়ে যাই। ব্যাগটি কিনেছিলাম অনেক আগে ।ব্যাগটা বের করে কাগজপত্র ঢুকাচ্ছিলাম তখন নীলা ব্যাগটা দেখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল। তারপর বলল যার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে তার কাঁধে এই রকমের একটি ব্যাগ ছিল। আসলে সেদিন নীলাকে কেউ একজন ধাক্কা দিয়েছিল। তাতে নীলা রাস্তায় পড়ে যায়। আর ওর পায়ের ওপর দিয়ে একটি বাস চলে যায় ।নীলা থেকে জানতেও পারলাম ঐদিন ও একটি হলুদ রঙের থ্রিপিস পরা ছিল।

যেদিন নীলার সাথে দুর্ঘটনাটি ঘটে সেদিন সকালে আমার অফিস ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায় ।আমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ।সেদিন কোন বাসস্ট্যান্ডে বাস থামছিল না ।কারণ পূর্ব থেকেই তা যাত্রিতে পূর্ণ ছিল ।এদিকে আমার অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছিলো। তাই একটি বাস আসতে দেখে কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার মাঝপথে গিয়ে কোনরকম চলন্ত বাসের গেইটটি ধরতে সক্ষম হই ।তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে বাসের সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে পিছনের দিকে ঝুঁকে যাই। সম্ভবত তখন আমার পিছনে কেউ একজন ছিল। সেও বাসের ওঠার প্রচেষ্টা ছিল। কিন্তু আমি পিছনের দিকে ঝুঁকতে থাকায় আমার সাথে ধাক্কা লেগে সে বাস থেকে পড়ে যায়। সেদিন বাস আর থামেনি আর কেউ বিষয়টি হয়তো লক্ষ্য করেনি। আমার যতদূর মনে পড়ে আমার পেছনে একটি মেয়ে বাসে উঠার চেষ্টা করছিল । হয়ত তার পরনে আমি একটি হলুদ ওরনা দেখেছিলাম।

আজ মনে হচ্ছে সেই মেয়েটির অন্য আর কেউ নয় নীলাই ছিল।

Related Posts

10 Comments

মন্তব্য করুন