উপর থেকে নীচে কিছু পরেছে শুনলেই মাথায় আসে গাছ থেকে আপেল পরার কথা। আর গাছ থেকে আপেল পরার কথা শুনলেই মাথায় আসে বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের কথা যাঁর একটি প্রশ্নের উত্তর খুজতে আবিষ্কৃত হয় মাধ্যাকর্ষন শক্তি। আজ আমরা বিজ্ঞানী নিউটন সম্পর্কেকিছু জানব। কিছু কথা থাকবে যা সবার জানা আর কিছু কথা থাকবে না অনেকেরই অজানা। তো! শুরু করা যাক।
১৬৪২ সালের বড়দিনে জন্মগ্রহন করেন নিউটন। কিন্তু জন্মের পর তাঁর শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে অনেকেই ভেবেছিলেন যে তিনি বাঁচবেন না। কিন্তু পৃথীবির হয়ত তাঁকে দরকার ছিল তাই হয়ত বিধাতার কাছে আবেদন করেছিল নিউটনকে নিয়ে না যেতে যার কারন বিধাতা নিউটনকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়ে মা এর কাছেই বড় হতে থাকেন তিনি। কিন্তু মা এর সাথেও বেশীদিন থাকা হলনা তাঁর। কারন তিন বছর পর তাঁর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং তাঁকে তাঁর দাদীর কাছে রেখে চলে যান। এভাবেই বাবা মা ছাড়া দাদীর কাছে বড় হতে শুরু করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। বার বছর বয়সে একটি স্কুলে তাঁকে ভর্তি করে দেয়া হয়। সেখানে তার মেধার কারনে শিক্ষকদের ভালোবাসার পাত্র হয়ে উঠেন তিনি। স্কুলে থাকতে তিনি একবার এক আবিষ্কারের মাধ্যমে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষককে প্রায়ই ক্লাসে দেরি করে আসতে দেখে তিনি একদিন শিক্ষককে বলেছিলেন যে তিনি তার প্রধান শিক্ষককে একটি ঘড়ি তৈরি করে দিবেন যাতে শিক্ষক সময় মত স্কুলে আসতে পারেন। প্রাথমিকভাবে শিক্ষক বিশ্বাস করতে রাজি না হয়েও পরবর্তীতে রাজি না হয়ে থাকার তাঁর উপায় ছিলনা। আবিষ্কারের নেশা নিউটনকে এমনভাবে মাতাল করে দিয়েছিল যে তিনি সত্যি সত্যি একটি ঘড়ি আবিষ্কার করে ফেলেন। ঘরিটি এমন ছিল যে এটার উপর একটি পানির পাত্র থাকতো যেখানে প্রতিদিন নিয়ম মেনে পানি দেয়া হতো। পানির ফোঁটা সেখান থেকে ঘড়ির কাঁটার উপর পরলে ঘড়ির কাঁটা নিজস্ব গতিতে চলতে শুরু করতো। এই আবিষ্কারের দরুন তিনি স্কুলের সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছিলেন। স্কুলে থাকাকালীন অবস্থায় তাঁর সৎ বাবা মারা যান এবং তখন তাঁর মা তাঁকে ওই স্কুল থেকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান। এরপর তাঁর কাকা উইলিয়াম তাঁকে আবার স্কুলে ভর্তি করান এবং এর এক বছর পর তাঁকে টৃনিটি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। এখান থেকে শুরু হয় নিউটনের জিবনের এক নতুন অধ্যায়।
যেকোন জটিল অংক খুব সহজে সমাধান করে ফেলতেন নিউটন। কিন্তু অংকের চেয়ে প্রকৃতির রহস্যের দিকে তাঁর আগ্রহ ছিল অনেক বেশী। বিজ্ঞান যে প্রকৃতির এসব গোপন রহস্য আবিষ্কারের একমাত্র মাধ্যম তা তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। ১৬৬৫ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৬৬৬ সাল যখন তাঁর বয়স যখন মাত্র ২৮ বছর তখন তিনি এক চিঠিতে লিখেছিলেন যে তিনি পদ্ধতি উদ্ভাবনের সাথে সাথেই মাধ্যাকর্ষন শক্তি নিয়ে চিন্তা শুরু করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ মৌলিক তত্ত্বের জন্য কম বয়সেই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পরে বিশ্বব্যাপী। ১৬৬৭ সালে ট্রিনিটি কলেজ থেকে তিনি দুর্লভ সম্মাননা ফেলোশীপ ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে যে টেলিস্কোপ যন্ত্রটি মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষনার কাজে অগ্রগামী হিসেবে কাজ করছে তার আবিষ্কারক নিউটন নিজেই। টেলিস্কোপ আবিষ্কারের মাধ্যমেই তিনি পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন। ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজের গণিতে অধ্যাপনাও করাকালীন সময়ে তিনি আলোর বর্ণোচ্ছটা নিয়ে গবেষনা শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি একের পর একেক সাফল্যের স্বিকৃতি লাভ করতে থাকেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিশ্ব সেরা বিজ্ঞানীদের পাশে জায়গা হয়ে যায় তাঁর। তাঁদের সামনে তাঁর আলোক তত্ত্ব নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেও তাঁদের প্রশংসা অর্জন করেন তিনি।
একদিন এক ভদ্রলোক নিউটনের বাড়িতে গিয়ে একটা তিনকোণা কাচ দেখিয়ে তাঁর কাছে এর মূল্য জানতে চাইলে নিউটন তাঁকে বলেছিলেন যে ওইটার মূল্য নির্ধারণ করা তাঁর সাধ্যের বাহিরে ছিল এবং পরে তিনি অনেক বেশী দামে তিনকোনা কাচ বা প্রিজমটি কিনে নিয়েছিলেন। যদিও নিউটন তাঁর এমন একটি কাজের জন্যে লোকজনের কাছে বোকা বলে হাসির পাত্র হয়েছিলেন, পরবর্তীতে তিনি এই প্রিজম থেকেই উদ্ভাবন করেছিলেন “বর্ণতত্ত্ব” বা “থিওরি অব কালার”।
দিনের বেশিরভাগ সময়ই বাগানের মধ্যে সময় কাটাতেন নিউটন। একদিন বাগানের মধ্যে গাছ থেকে হঠাত একটি আপেল তাঁর সামনে পরার পর চিন্তা করতে লাগলেন কেন আপেলটি আকাশে না উঠে মাটিতে পরলো। তার এই প্রশ্ন ও চিন্তার মাধ্যমেই সৃষ্টি হল মাধ্যাকর্ষন তত্ত্ব যার মাধ্যমে গ্রহ, নক্ষত্র ও পৃথিবী একসূত্রে বেধে আছে।
নিউটনের এক দার্শনিক বন্ধু একদিন তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে কীভাবে নিউটনের লেখার অর্থ বোঝা সম্ভব। উত্তর দেয়ার আগে নিউটন তাঁর বন্ধুটিকে কিছু বইয়ের তালিকা দিয়ে বলেছিলেন আগে বইগুলা পড়তে তাহলেই উত্তর খুজে পাওা যাবে। তখন সেই লোক নিউটুনের তালিকা দেখে বলেছিলেন যে তাঁর এই আবিষ্কারের তত্ত্ব বোঝা লোকটির পক্ষে সম্ভব নয়। নিউটন বলেছিলেন যে এই বিশ্বপ্রকৃত এমন এক সুশৃঙ্খল ভাবে সৃষ্টি হয়েছে যার পেছনে কোন ঐশ্বরিক শক্তি বা স্রষ্টা রয়েছেন।
নিউটন এত বড় একজন বিজ্ঞানী হলেও তাঁর এই বিচিত্র চিন্তা ভাবনার বিষয়গুলো না বুঝে অনেকেই তাঁকে উপলব্ধি করতে পারেননি। তাঁর এই বৈজ্ঞানিক জীবনে সফল ছিলেন কিন্তু বাস্তব জীবনে ছিলেন অসুখী। ভালোবাসার মানুষটিও একসময় না বুঝে ছেড়ে গিয়েছিল তাঁকে।
১৭২৭ সালের শুরুর দিকে গুরুতর অসুস্থ হন নিউটন। নানাবিধ চিকিৎসার পরেও তিনি সুস্থতা অর্জন করেননি। কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেওয়ার আগে তিনি লিখেছিলেন-“মানুষ আমাকে কিভাবে জানে, আমার তা জানা নেই। কিন্তু আমি জানি, আমি ছোট্ট একটি বালকের মতো সাগরের তীরে ঘুরে পাথরের নুড়ি বা ঝিনুকের খোলা খুঁজেছি। কিন্তু সামনে পরে রয়েছে জ্ঞানের অনাবিষ্কৃত বিশাল মহাসাগর।”
১৭২৭ সালের ২০ মার্চ মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গোটা বিশ্ববাসী শ্রধা নিবেদিত মস্তকে বিদায় জানান এই মহাবিজ্ঞানীকে। তিনি চলে গেছেন ঠিক ই কিন্তু তার অসাধারন আবিষ্কারের জন্যে তার নাম বিশ্বের বুকে চির অমর হয়ে বেঁচে আছে আজও, থাকবে আগামীতেও।
Hmm
g
Thanks for the post.
welcome
Onk kichu janlam
thnx
👍👍👍
Gd
gd
Nice
Amazing
❤️