আসসালামু আলাইকুম
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করা হয়েছে। আমার এই লেখা সেইসব অ্যাসাইনমেন্ট এর সহায়ক উদ্দেশ্যে লেখা।
আজ ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে লিখছি। বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট এর কাজ হিসেবে নিচের সৃজনশীল প্রশ্নটি দেয়া হয়েছে। প্রশ্নের নিচে সহায়ক উত্তর দেয়া হল।
নিধিতাদের বাগানে পেয়ারা গাছে পানি দিতে গিয়ে দেখল, ছোট পেয়ারা গাছটি ছয় মাসে অনেক লম্বা হয়েছে। সে তার মায়ের কাছে জানল, কোষ বিচাজনের কারনে এমন হয়েছে। পরে মা গাছটিতে কিছু জৈব সার প্রয়োগ করলেন। মেয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, “মা, তুমি মাটিতে সার দিচ্ছ, কিন্ত তা পৌছাবে কি করে?” মা জানালেন “এক বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে” ।
১।
ক) কোষ বিভাজন কাকে বলে?
খ) মিয়োসিস কোষ বিভাজন কে হ্রাস মূলক বিভাজন বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভাজন প্রক্রিয়ার দীর্ঘস্থায়ী ধাপটি উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে কিভাবে ভূমিকা রাখে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ) মায়ের উত্তরে বলা বিশেষ প্রক্রিয়াটির গুরুত্ব উদ্ভিদের জীবনে কতখানি- তা বিশ্লেষন কর।
উত্তরঃ
ক) কোষ বিভাজনঃ
যে পদ্ধতিতে মাতৃ কোষ বিভাজ়িত হয়ে অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে।
খ)
মিয়োসিস কোষ বিভাজন কে হ্রাস মূলক বিভাজন বলার কারনঃ
মিয়োসিস কোষ বিভাজন কে হ্রাস মূলক বিভাজন বলা হয় কারন, এ বিভাজনে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজ়োম সংখ্যার অর্ধেক হয়।
যৌন জননের জন্য মিয়োসিস কোষ বিভাজন ঘটে। যদি জননকোষগুলোর ক্রোমোজোম সংখ্যা দেহকোষের সমান থেকে যায় তাহলে জাইগোট কোষে জ়ীবটির ক্রোমোজোম দেহকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার দ্বিগুন হয়ে যাবে। যেটা কাম্য নয়। মিয়োসিস কোষ বিভাজনে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজ়োম সংখ্যার অর্ধেক হইয়ে যায়। ফলে জ়াইগোটের ক্রোমোজোম সংখ্যা প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যার অনুরুপ থাকে। এতে প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যার ধ্রুবতা বজায় থাকে।
গ)
উদ্দীপকে যে বিভাজন প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে সেটি মাইটোসিস বিভাজন প্রক্রিয়া। মাইটোসিস বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদের বৃদ্ধি হয়ে থাকে। মাইটোসিস বিভাজন প্রক্রিয়ার দীর্ঘস্থায়ী ধাপটির নাম প্রফেজ ধাপ।
মাইটোসিস বিভাজন ২টি পর্যায়ে ঘটে। প্রথম পর্যায়ে নিউক্লিয়াসে ও দ্বিতীয় পর্যায়ে সাইটোপ্লাজমে বিভাজন হয়। নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে ক্যারিওকাইনেসিস বলে। এই ক্যারিওকাইনেসিসের প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রফেজ।
প্রফেজ ধাপে নিম্নলিখিত ঘটনাবলি ঘটে –
১, কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয়।
২, পানি বিয়োজনের ফলে নিউক্লিয়াস জালিকা ভেঙ্গে গিয়ে কতগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক আকাবাকা সুতার মত অংশের সৃষ্টি হয়। এগুলোকে ক্রোমোজ়োম বলে। এরপর প্রতিটি ক্রোমোজ়োম লম্বলম্বি বিভক্ত হয়ে দুটী ক্রোমাটিড গঠন করে। এগুলো সেন্ট্রোমিয়ার নামক একটি বিন্দুতে যুক্ত থাকে।
এই প্রফেজ ধাপের মাধ্যমে উদ্ভিদের ভাজক টিস্যুর বিভাজন শুরু হয়। এই ভাজক টীস্যুর বিভাজনের মাধ্যমে উদ্ভিদের বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
ঘ)
মায়ের উত্তরে বলা বিশেষ প্রক্রিয়াটি হচ্ছে অভিস্রবন, প্রস্বেদন ও শোষনের মাধ্যম। এই প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে মাটিতে প্র্য়োগকৃত সার উদ্ভিদের পাতায় পৌছে।
উদ্ভিদ মূলের সাহায্যে মাটি থেকে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবন শোষন করে এবং সেই পানি ও রস কান্ডের ভিতর দিয়ে পাতায় পৌছায়। মায়ের উত্তরে এই প্রক্রিয়ায় কথা বলা হয়েছে।
মায়ের উত্তরে বলা বিশেষ প্রক্রিয়াটির গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হল –
১) কোষের মধ্যে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোকে সচল রাখার জন্যে অভিস্রবন খুওই গুরুত্বপুর্ন।
২) এ প্রক্রিয়ার দ্বারা সৃস্ট উদ্ভিদের কোষের রসস্ফীতি কান্ড ও পাতাকে সতেজ ও খাড়া রাখতে সাহায্য করে।
৩) প্রস্বেদনের ফলে কোষ্রসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, যা উদ্ভিদকে পানি অ খনিজ লবণ শোষনে সহায়তা করে।
৪) উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ লবন শোষন প্রক্রিয়ার মাধমে গ্রহন করে থাকে।
উদ্দীপকে মাটিতে যা সার দেয়া হয়, তা উপরের প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে উদ্ভিদ গ্রহন করে ও নিজের প্রয়োজনীয় কাজ গুলো করে থাকে।
আজ এ পর্যন্তই, ধন্যবাদ।