বুলেট প্রুফ পাসওয়ার্ড! পাসওয়ার্ড কি আসলেই বুলেট প্রুফ হয়? মূলত বুলেট প্রুফ বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড কে। একটি অ্যাকাউন্ট-এর প্রথম নিরাপত্তা ব্যবস্থা হলো পাসওয়ার্ড। আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড যদি দুর্বল হয়, তাহলে তা হ্যাকার সহজেই ক্র্যাক করতে পারবে, এবং অনায়াসেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে।
আজকের বিষয় হলো কিভাবে বুলেট প্রুফ অর্থাৎ শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করে হ্যাকারের হাত থেকে আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টকে রক্ষা করা সম্ভব।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড আসলে কি?
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বলতে অর্থবিহীন বড় পাসওয়ার্ডকে বোঝানো হয়। আমরা সাধারণত সহজেই মনে থাকে এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতেই অভ্যস্ত। এজন্য পাসওয়ার্ড তৈরির সময় আমরা বিভিন্ন পরিচিত শব্দ ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড তৈরি করি। আমরা ভুলটা এই জায়গাতেই করে বসি।
হ্যাকাররা বিশেষ কিছু সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করে। আপনি যদি বড় বড় অর্থপূর্ণ শব্দ দিয়েও পাসওয়ার্ড তৈরি করেন তাহলেও সেই সফটওয়্যার পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করতে পারবে। কারণ এই সফটওয়্যার গুলো ডিকশনারিতে আছে এমন সব শব্দ ব্যবহার করে আপনার পাসওয়ার্ডকে ক্র্যাক করার চেষ্টা করে।
তাই পাসওয়ার্ডকে যত হিজিবিজি করে তৈরি করা যায় পাসওয়ার্ড তত শক্তিশালী হয়। ধরুন আপনার পাসওয়ার্ড হলো, “iamhonest” কিন্তু এই পাসওয়ার্ডটির মধ্যে যদি কিছু বিশেষ চিহ্ন, সংখ্যা ও বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করা হয় ( !@M8hOn#e$6t? ) তাহলে কিন্তু পাসওয়ার্ডটি আরো বেশি হার্ড বা শক্ত হয়ে যাবে। এজন্য এই ধরনের এলোমেলো ও অর্থবিহীন পাসওয়ার্ড গুলো ক্র্যাক করা হ্যাকারের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
কিন্তু আপনি যদি শুধু “iamhonest” -ই ব্যাবহার করেন তবে হ্যাকারকে পাসওয়ার্ড ভাঙ্গতে বেশি কষ্ট করতে হবে না। অনায়াসেই পাসওয়ার্ডটি হ্যাক করতে পারবে হ্যাকার।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির প্রয়োজনীয়তা
তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। এখন ইন্টারনেটের সাহায্যেই ম্যানেজ করা যায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। শপিং করতে দোকানে নয় বরং ইন্টারনেটে ভিড় জমায় সবাই। প্রায় সকল ধরনের ব্যবস্থায় এখন অনলাইন ভিত্তিক। অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজ করতে হয় প্রতিনিয়তই। আর এসব অ্যাকাউন্ট-এ থাকে আমাদের সকলের ব্যক্তিগত তথ্যসহ বিভিন্ন বিষয়। যা অন্যের হাতে গেলে আমাদের বিপদ ঘটতে পারে। এজন্য এসব অ্যাকাউন্ট এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন।
যে ভুল গুলোর জন্য হ্যাক হয় পাসওয়ার্ড
- পাসওয়ার্ড মনে রাখার সুবিধার্থে ছোট ও কমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা
- একাধিক অ্যাকাউন্টের জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা
- পাসওয়ার্ডের মধ্যে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, জন্মসাল, ফোন নাম্বার ইত্যাদি) ব্যবহার করা
- নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই অন্যের ডিভাইস ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টে লগিন করা
- ভালো ও বিশ্বস্ত ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার না করা
- ডিকশনারিতে আছে এমন শব্দ ব্যবহার করা
- ফিশিং লিঙ্কে ক্লিক করা
- ভাইরাস যুক্ত সফটওয়্যার ডাউনলোড
এছাড়াও আরও বেশ কিছু কারণে পাসওয়ার্ড হ্যাক হতে পারে। পাসওয়ার্ডকে হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই উপরের বিষয় গুলো পরিত্যাগ করা জরুরী এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত।
পাসওয়ার্ড আপনি যত শক্তিশালীই করেন না কেন, তা অবশ্যই হ্যাক করা সম্ভব। হ্যাকার যদি আপনাকে সিরিয়াসভাবে টার্গেট করে তবে হ্যাকারের হাত থেকে বাঁচার উপায় আপনার পাসওয়ার্ডের নেই। কিন্তু একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করতে অবশ্যই হ্যাকারকে হিমশিম খেতে হবে। আপনার অ্যাকাউন্টকে হ্যাক হওয়ার থেকে বাঁচাতে শুধু একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ডই যথেষ্ট নয় বরং এর সাথে আরও বিশেষ কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে। নিচে ধাপে ধাপে বিষয় গুলো তুলে ধরা হলো।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির পদ্ধতি
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির জন্য আপনি বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি আপনার প্রিয় একটি গানের লাইনকে ব্যবহার করতে পারেন কিংবা প্রিয় কোনো উক্তি। এতে পাসওয়ার্ডটি মনে রাখতে সুবিধা হবে।
যেমন ধরুন এই উক্তিটিঃ “Jekhane Bagher Voy Sekhane Sondha Hoy” (যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়)
- এখন এই উক্তিটির প্রথম অক্ষরগুলো একবার বসান, তারপর শেষের অক্ষরগুলো একবার বসান। যেমনঃ jbvssheryeay
- এবার এই অক্ষর গুলোর মধ্যে কয়েকটি অক্ষর বড় হাতের করে দিন। যেমনঃ JbVsSheRyEaY
- এবার কিছু সংখ্যা যুক্ত করুন। যেমনঃ J7bVsS4heRy9EaY
- তারপর এর মধ্যে কিছু বিশেষ চিহ্ন (!@*%#^$) ব্যবহার করুন। যেমনঃ J7bV^s$S4h#eR!y9Ea@Y
তৈরি হয়ে গেল একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড। লক্ষ্য করে দেখুন পাসওয়ার্ডটি সম্পূর্ণ র্যান্ডম একটি পাসওয়ার্ড, যার কোনো অর্থ নেই। এই ধরনের পাসওয়ার্ড কারোর পক্ষে অনুমান করা সম্ভব নয়।আপনি চাইলে সম্পূর্ণ উক্তিটিকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, তবে মনে রাখবেন উক্তিটি যেন কোনো অর্থ প্রকাশ না করে। উপরের উক্তিটি বাংলা কিন্তু লেখা হয়েছে ইংরেজি অক্ষরে, যার ফলে ডিকশনারিতে এমন কোনো শব্দই পাওয়া সম্ভব নয়।
উক্তিটিকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করলে মনে রাখতে বেশি সুবিধা হবে। যদিও পাসওয়ার্ডটি অনেক বেশি বড় হয়ে যাবে। কিন্তু মনে রাখবেন যত বড় পাসওয়ার্ড তৈরি করবেন তত বেশি শক্তিশালী হবে আপনার পাসওয়ার্ড এবং হ্যাক করতে বেশি কষ্টসাধ্য হবে। গান কিংবা উক্তি যেটাই পাসওয়ার্ড দেন না কেন অবশ্যই বিশেষ চিহ্ন, সংখ্যা ও বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করতে ভুলবেন না। যেমনঃ Jekhane3*B@gher#Voy
এবং কমপক্ষে 8-9 ক্যারেক্টারের নিচে পাসওয়ার্ড দেয়া উচিত নয়। তবে সবসময় 15 ক্যারেক্টারের উপরে পাসওয়ার্ড দেয়ার চেষ্টা করুন।
শুধু শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করলেই হবে না বরং পাসওয়ার্ডটি মনে রাখাও জরুরী। আপনি যদি পাসওয়ার্ড মনে রাখার জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে চান তবে ভালো মানের একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন। ভালো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার গুলোর মধ্যে Lastpass ও Dashlane দুটি কার্যকরী পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আপনাকে পাসওয়ার্ড মনে রাখতে ও ভিন্ন ভিন্ন সাইটের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড তৈরি করতে সাহায্য করবে। আপনাকে শুধু একটি মেইন পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে, যা দিয়ে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এক্সেস করতে হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আপনার পাসওয়ার্ড ম্যানেজারও কিন্তু হ্যাকার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বাড়তি কিছু টিপস
অনলাইন অ্যাকাউন্টের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য শুধু একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড-ই যথেষ্ট নয়। বরং এর সাথে আরো কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে যা ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকতে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। বিষয় গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
ব্যক্তিগত তথ্যের সঠিক ব্যবহার
ইন্টারনেটে সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাকাউন্টে আমরা অনেকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ভরে রাখি। যা আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে হ্যাকারকে সাহায্য করবে। এজন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে হ্যাকারকে সাহায্য করবেন না।
টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন
বর্তমানে ফেসবুক, জিমেইল ইত্যাদি অ্যাকাউন্টের এই ফিচারটি আপনাকে ইন্টারনেট নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেবে। আপনি এই ফিচারটি অন করার সময় আপনার মোবাইল নাম্বার চাওয়া হবে, এবং যেই নাম্বারটি আপনি সেখানে দেবেন সেই নাম্বারে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রতিবার লগইন করার সময় একটি কোড যাবে। সেই কোড না বসানো পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট এক্সেস করা সম্ভব নয়।
নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন
একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর আপনার সকল অ্যাকাউন্ট এর পাসওয়ার্ড গুলোর পরিবর্তন করুন (কমপক্ষে প্রতি ৫-৬ মাস পর পর) । এতে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন
ফোন অথবা কম্পিউটার যেটাই ব্যবহার করুন না কেন একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। কারণ আপনার ডিভাইসে যদি ভাইরাস অথবা ম্যালওয়্যারের অ্যাটাক হয় তবে পাসওয়ার্ড যত শক্তিশালীই হোক না কেন তা ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা পাবে না। অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট রাখুন।
আশা করি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি ও এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন। নিচে কমেন্ট করে জানান আর্টিকেলটি কেমন লাগলো ও এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার একটু হলে উপকারে এসেছে। আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানতে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ।