ভণ্ডামি /প্রতিশব্দ/ কপটতা; ভান; মিথ্যা জাহির; দাবি; জুয়াচুরি; ধর্মধ্বজিতা; ছুতা; কাপট্য;
/noun/ hypocrisy; pretense; false pretenses; pretension; imposture; charlatanism; dissembling; pharisaism; pretence; insincerity;
এই যে কতগুলো শব্দ বাংলায় ইংরেজিতে লিখে আপনাদের জ্ঞান দিতে চেষ্টা করছি, এটাও একধরনের ভণ্ডামির বহিঃ প্রকাশ। কারন, এগুলো তো আপনাদের জানা কথা তাই না? তারপরেও নিজের জ্ঞান গরিমা প্রকাশের একটু সুযোগ পেতেই তার সদব্যবহারে উঠে পড়ে লেগে গেলাম! আপনাদের দৃষ্টিতে এটাকে কি বলা যায়?
চেহারায় এমন একটা গোবেচারা ভাব, যেন ভাজা মাছটি উলটে খেতে পারি না। অথচ, সুযোগ পেলে শুধু ভাজা মাছ নয়, মাছের বাজারসহ উধাও করে দিতে পারি!
বেস্টফ্রেন্ডের কাছে যৌন আকর্ষনটা সব সময় গোপন করে সুবোধবালক হয়ে থাকি। অথচ নিষিদ্ধ পল্লীতে নিশিকন্যাদের ছোঁয়া না পেলে আমার রাতে স্বপ্নদো* হয়। এটাকে আপনি কি বলবেন? ভন্ডামি!!
সমাজের উঁচু মহলে ভদ্র, বিনয়ী, মার্জিত রুচি সম্পন্ন আমি। সেই আমি রিক্সায় চড়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর পরে বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা ১০ টাকা বেশী দাবী করলে তার বাপ – দাদাসহ চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে একটুও পিছপা হই না!
রাস্তায় একজন ভিক্ষুক দুইটা টাকা চাইলেই; কেন ভিক্ষা করছিস? কাজ করে খেতে পারিস না? এমন জোয়ান তাজা শরীর নিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করছিস, লজ্জা করে না? ইত্যাদি ইত্যাদি সদুপদেশ দাতা আমি। যখন আমার কোন ফাইল বড় কোন অফিসার (শিক্ষিত, মার্জিত, সুদর্শন ও অবশ্যই নাদুস নুদুস) দিনের পর দিন বিনা কারনে আটকে রাখে বা রাখতে চায়, তখন তাকে সুন্দরভাবে বিনয়ের সাথে বলি, “স্যার, চিন্তা করবেন না, আপনি আমার দিকটা দেখবেন, আমি আপনার দিকটা।“
যখন কোন দিন মজুর বা খেটে খাওয়া মানুষ আমার রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষে বিল পরিশোধের সময় পকেটে টাকা কম আছে বলে দুই চার টাকা কম দেয়ার বাহানা করে, তখন “বেটা! পকেটে টাকা নাই তো রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছিস কেন?” বলা আমি। সেই আমি, এলাকার বড় ভাই, নামকরা লোক কিংবা বড় ব্যবসায়ী আমার রেস্টুরেন্টে মোরগ পোলাও, রোষ্ট, বিরিয়ানী, সফট ড্রিংক পান শেষে বিল দিতে গেলে, “স্যার, কি করেন কি করেন? এটা তো আপনারই প্রতিষ্ঠান। টাকা দিয়ে আমাকে পর করে দিবেন না স্যার!”
চুড়ান্ত ভন্ড আমি।
কয়েক বছর আগে, আমার এলাকায় সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহারের দাবীতে একটি সংগঠন তৈরী হয়। আর আমাকে করা হয় তার সভাপতি।
পায়জামা পাঞ্জাবী পড়ে, কাঁধে সাইড-ব্যাগ ঝুলিয়ে, এখানে ওখানে বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে, সভা-সমিতি, মিছিল মিটিং পরিচালনা করি। এলাকায় কেউ ইংরেজীতে কথা বলছেন, শুনলেই রে, রে, করে উঠি। তার ইংরেজির বঙ্গানুবাদ করে, তাকে বাংলায় সেটা বলতে বাধ্য করি। আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই উচ্চতায় পৌঁছে যায় যে, ইংরেজি হঠাও, বাংলা বাঁচাও অভিযানের কার্য-সূচী হিসেবে, ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড আলকাতরা দিয়ে মুছে দিয়ে, বাংলাভাষায় সাইনবোর্ড বানাতে বাধ্য করি।
আর, আর … …
রোজ কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে, মেয়েকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসি, আমি … !!!