ভাইরাস কি, ভাইরাস কিভাবে আক্রমন করে, ভাইরাস আবিষ্কারের ইতিহাস জেনে নিন

ভাইরাস কি?

ভাইরাস ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ হলো বিষ। এদের সত্তা বলা হয় কারন এরা অকোষীয়। ভাইরাস হলো রোগ সৃষ্টিকারী আনুবীক্ষনিক বস্তু। এর আকার অনেক ছোট। ইলেকট্রন অনুবীক্ষন যন্ত্র ছাড়া এদের দেখা যায় না। ভাইরাসের গড় ব্যাস ৮ -৩০০ ন্যানো মিটার ( ১ ন্যানো মিটার = .০০০০০০০০০১ মিটার)। ভাইরাস বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। এরা দন্ডাকার, গোলাকার, বহুভুজাকৃতি প্রভৃতি আকৃতির হয়।

ভাইরাস কি নিয়ে গঠিত?

ভাইরাসের কেন্দ্রিয় বস্তু হলো নিউক্লিক অ্যাসিড যা DNA বা RNA দিয়ে গঠিত। আর কেন্দ্রীয় বস্তুকে ঘিরে থাকে ক্যাপসিড বা প্রোটিন অাবরন। ভাইরাসকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিউক্লিক এসিডের ধরন অনুযায়ী ভাইরাসকে ২ ভাগে ভাগ করা হয় – ১.DNA ভাইরাস
২.RNA ভাইরাস

ভাইরাস কিভাবে আক্রমণ করে?

প্রকৃতপক্ষে ভাইরাসের প্রোটিন আবরন কাকে আক্রমন করবে তা বের করে। পোষক কোষে
কোনো ভাইরাস-প্রোটিন এর জন্য রিসেপ্টার সাইট থাকলে ভাইরাস ওই পোষক কোষকে আক্রমন করে। এজন্য চিকেন পক্স ভাইরাস তক কোষকে আক্রমন করে। চিকেন পক্স ভাইরাস অন্য কোনো কোষকে আক্রমন করে না। কারন অন্য কোনো কোষে এর জন্য রিসেপ্টর সাইট নাই।

ভাইরাস যেহেতু জীব নয় তাই নতুন ভাইরাস সৃষ্টি প্রক্রিয়া কে সংখ্যাবৃদ্ধি প্রক্রিয়া বলা হয়। নতুন ভাইরাস গুলো দেখতে একই রকম হয়।
এরা দুই ভাবে সংখ্যাবৃদ্ধি করে।
১.লাইটিক চক্র –
ভাইরাস প্রথমে পোষক কোষে বসে এবং এর DNA টি প্রবেশ করিয়ে দেয়। DNA টি কোষ এর RNA এর মাধ্যমে অনেক ভাইরাস-DNA তৈরি করে নেয় এবং নতুন ভাইরাস তৈরি করে নেয়। এরপর কোষাটিকে ভেঙে বেরিয়ে যায়।

২.লাইসোজেনিক চক্র-
ভাইরাস এখানেও কোষে বসে ও DNA প্রবেশ করিয়ে দেয়। এরপর ভাইরাসের DNA টি কোষের DNA এর সাথে সংযুক্ত হয়ে বিভাজন প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো ভাইরাস তৈরি করে।

ভাইরাস আবিষ্কারের ইতিহাস

বিজ্ঞানী Edward Jenner ১৭৯৬ সালে প্রথম ভাইরাসঘটিত বসন্ত রোগের কথা উল্লেখ করেন। এরপর Adolf Mayer ১৮৮৬ সালে তামাক পাতা দাগবিশিষ্ট রোগের কারন হিসেবে টোবাকো মোজাইক ভাইরাসকে আবিষ্কার করেন। আমেরিকান বিজ্ঞানী Wendel Meredith Stamley TMV কে পৃথক করে কেলাসিত করেন। এজন্য তিনি ১৯৪৬ সালে নোবেল পুরষ্কার পান। ১৯৩৭ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী ব্যারেন ও পিরি বলেন জে ভাইরাস নিউক্লিক এসিড ও প্রোটিন নিয়ে গঠিত। ভাইরাসের দেহে জীব ও জড় দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে। তাই ফ্রান্সের নোবেলজয়ী A. Lowff ১৯৫২ সালে ভাইরাসের প্রকৃতি সম্বন্ধবলেছেন, ভাইরাস ভাইরাসই। ১৯৮৪ সালে HIV ভাইরাস আবিষ্কার করেন Gallow। ১৯৮৯ সালে Hervey J. Alter হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০০ ধরনের ভাইরাসের বর্ণনা করা হয়েছে।

W.M. Stanley কে ভাইরোলজির জনক বলা হয়।

ভাইরাসের বিষয়ে আরো কিছু কথা

ভাইরাস উদ্ভিদ, প্রানি, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অাকটিনোমাইসিটিস প্রভৃতি জীব দেহের সজীব কোষ এ সক্রিয় ভাবে অবস্থান করা ছাড়াও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বাতাস,মাটি, পানি ইত্যাদি মাধ্যমে অবস্থান করে। পরিক্ষায় জানা গেছে ১ চামচ সমুদ্রের পানিতে ১০ লক্ষ ভাইরাস থাকে।

ভাইরোলজি বিজ্ঞানের অতীব গুরুত্বপূর্ণ শাখা যেখানে ভাইরাস নিয়ে আলোচনা করা হয়।

ভাইরাসের কোনো বিপাকীয় এনজাইম নেই এবং কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না। জীবকোষের বাইরে ভাইরাস রাসায়নিক কনার মতো নিষ্কিয়। ভাইরাসের দৈহিক বৃদ্ধি নেই এবং পরিবেশের উদ্দীপনায় সারা দেয় না। ভাইরাসকে কেলাসিত করা যায়, ব্যাপন করা যায়, পানির সাথে মিশিয়ে সাসপেনসন তৈরি করা যায়।

ভাইরাস পরজীবী ও পোষক কোষের অভ্যন্তরে ভাইরাস সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। এদের অভিযোজন ক্ষমতা আছে।

 

Related Posts

25 Comments

মন্তব্য করুন