ভালোবাসার খোলা জানালায় তুমি

সকাল হয়ে গেছে। অফিস যাবা না?
এই কথা বলতে বলতে রুহি রান্নাঘরে ঢোকে। মারুফ ঘুম থেকে উঠে ঢুলতে ঢুলতে ওয়াশরুম যায়। ঘুমের ঘোর এখনো কাটে নি তার।

মনের সুখে ব্রাশে শেভিং ক্রিম লাগাতে থাকে সে।
এরপর মুখে পুরে দিয়ে একটা ঘষা দিতেই হুশ ফেরে তার।
এরপর হুশের সাথে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় সে। নামাজ পড়ে। তারপর
অফিসের জন্ন রেডি হয়ে খাবার টেবিলে বসে।

হাসতে হাসতে বউকে বলে- জানো? আজ আমি ফোম দিয়ে দাত মাজতেছিলাম ঘুমের ঘোরে!হিহিহি
বউ রাগ দেখিয়ে বলে- কবে দেখবা কমোডের ব্রাশ দাতে দিসো ঘুমের ঘোরে।
এরপর দুজনেই হাসতে থাকে।
খাওয়া শেষে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে মারুফ।
যতক্ষন মারুফ অফিসে থাজে,ততক্ষন রুহি মারুফের জন্য দুয়া করতে থাকে। আর নিজের সংসারের কাজকর্ম করতে থাকে।

রুহি দেখে মারুফ নিজের ফোনটা রেখে দিয়ে চলে আসছে! আর রুহিরটা নিয়ে গেছে!
মাথাটা গেছে,কবে ফুল ম্যাড হয়ে বনে বনে ঘুরবে– এইসব বলতে বলতে ঘর গুছায় সে।
সব কাজ শেষে মারুফের ফোনটা হাতে নেয় ও।
ইচ্ছা করে মারুফের আইডিতে ঢুকতে! টেপাটেপি করতে করতে একসময় মারুফের ফেসবুক আইডিতে ঢুকে পড়ে রুহি।
মেসেজ লিস্ট চেক করছিলো সে। হঠাৎ একটা নামে চোখ আটকে যায় রুহির!

মেয়ে মানুষের নাম! রুহি চমকে ওঠে! অথচ মারুফের সম্পর্কে সে জানত যে মারুফ কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে না!
কৌতুহল হয়ে সেই মেসেজে প্রবেশ করে রুহি।
আজ থেকে পাচ বছর আগের মেসেজ! মারুফ ডিলিট করে ভুলে গেছে কোনো কারনে।
রুহি মেসেজ দেখতে থাকে। সেখানে মারুফের নানান রকম প্রেমালাপ তার চোখে পড়ে।
একের পর এক মেসেজ পড়তে থাকে আর চোখের পানি টপ টপ করে গাল বেয়ে পড়তে থাকে তার!

হার্টবিট বেড়ে যায় রুহির! এসব কি পড়ছি আমি! মারুফের আগেও একটা পছন্দ ছিলো!
ভাবতে থাকে রুহি! রাগে ক্ষোভে ফোন ছুড়ে মারে বিছানায়।
দুই হাত থর থর করে কাঁপতে থাকে রুহির। নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
যদিও পাঁচ বছর আগের ঘটনা। আর মারুফ এসব তাকে বলেছিলোও। কিন্তু তারপরেও আজ নিজের চোখে এসব দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না রুহি।

কাজ ফেলে রেখে বিছানায় উপুর হয়ে পড়ে থাকে সে। মারুফের প্রতি এক রাশ ঘৃণা জন্ম নেয় তার মনে।
যেন ডিভোর্স দিয়ে দিতে পারলে শান্তি পেত।
এদিকে রান্না ঘরে তরকারি পুড়ে গেলেও তার খেয়াল নেই।
রুহি অপেক্ষা করছে মারুফের! কখন আসবে সে!
রাত আটটায় মারুফ বাসায় এসে দেখে পরিস্থিতি অন্যান্য দিনের চেয়ে অন্য রকম!

রুহি মারুফের মুখের উপর কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেয়। মারুফ কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুহি ফোনের সেসব মেসেজ মারুফকে দেখায়।
মারুফ আশ্চর্য হয়!রুহি! তোমাকে তো বলেছিই এর কথা!
এখন এমন করছো কেন তবুও?
রুহি উত্তর দেয় না। শুধু ফুপিয়ে কাদতে থাকে।
মারুফ রুহিকে ছুতে গেলে রুহি সরে যায়।
মারুফকে ছেড়ে চলে যেতে চায়!
ডিভোর্স দিয়ে দিতে বলে!

মারুফ অনেক কষ্ট পায়। মারুফ জানে রুহিরও একজন পছন্দ ছিল অতিতে। কিন্তু রুহি সেসব থেকে ফিরে এসে নিজের মত হয়ে গিয়েছিলো। আর তখনকার বর্তমান অবস্থা দেখেই বিয়ে করেছে রুহিকে। সুতরাং এসব ভুল ত্রুটি এখন ধরলে সমস্যা বাড়বে।
না ধরাই ভাল।
অনেক কিছু বুঝাতে থাকে মারুফ।
রুহি না বুঝে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে চলে যায় বাবার বাড়ি।
মারুফ একা হয়ে যায়! সে নিজেও হাউমাউ করে কাদতে থাকে পাগলের মত।
রুহিকে বার বার ফোন করেও কোনো সমাধান হচ্ছে না!

এভাবেই দুজন আলাদা হয়ে দিন পার করতে থাকে।
একথা বলা জরুরি যে মারুফ ছিল রুহির জন্যই নিবেদিতপ্রাণ। সে রুহিকে ছাড়া আর কাউকে কল্পনাও করতে পারত না।
কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন রুহির ফোনে মেসেজ যায়। “মারুফ স্যারের নম্বরটা কি দেয়া যাবে? উনি অফিস আসেন না কেন?”
রুহি সেই নম্বরে ফোন দেয়। নারী কন্ঠ!!
রুহি জানতে পারে মারুফের অফিসের স্টাফ সেই নারী।
অনেক্ষন কথা হয় তাদের। সেই নারী স্টাফ মারুফের প্রশংসা করতে থাকে।
মারুফ কখনো তাদের দিকে তাকায় না।তাদের সাথে কথাই বলে না। অন্যান্য অফিসাররা অনেকে তাদের সাথে গল্প গুজব, রেস্টুরেন্ট পার্টি করলেও মারুফ নাকি এসব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

সবসময়ই সে রুহির প্রতি ভালোবাসা আর বিশ্বস্ততার প্রমান দিয়ে যায় সব ক্ষেত্রে।
রুহি যা যা অপছন্দ করে,তা মারুফ নাকি ঘুনাক্ষরেও করে না।
এমনকি লাস্ট যেদিন মারুফ অফিস থেকে বাসায় আসে, সেদিন নাকি সে তার অফিসের কাজ দ্রুত করে বের হয়ে এসেছিলো রুহিকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট যাওয়ার উদ্দেশ্যে!
এরপর থেকেই আর অফিস আসে নি মারুফ। অবশ্য কেন আসে নি তা কর্মকর্তাগণ জানলেও অনেক স্টাফরা জানত না। সেজন্যই মেসেজ দেয়া।

যাইহোক সব শুনে রুহির মন নরম হয়!
মারুফ তাকে এতটা ভালোবাসে!ভাবতে থাকে রুহি!
নিজেরই নিজের উপর রাগ হয় রুহির। দ্রুত ব্যাগ পত্র নয়ে বেরিয়ে পড়ে মারুফের কাছে আসার জন্য।
বাসায় পৌছে কলিং বেল চাপতেই দেখে মারুফ দাঁড়িয়ে! বেচারা বউকে এতই ভালোবাসে চুল দাঁড়িও আচড়ায় নি এতদিন। রাস্তার পাগল মনে হচ্ছে।

রুহি ব্যাগ পত্র রেখে জড়িয়ে ধরে মারুফকে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চায় সে।
মারুফ তৎক্ষনাৎ যেন প্রাণ ফিরে পায়! চুল দাঁড়ি আচড়ে ফিট ফাট হয়ে নেয়। রুহিকে নিয়ে একটু পরই রেস্টুরেন্ট যেতে হবে..!

Related Posts

7 Comments

মন্তব্য করুন