ভালো বাসার পরি পূর্ণতা (ভালবাসার গল্প)

আমি যার সম্পর্কে বলবো তার নাম মোঃ সামিউল বাসার ( রাজ)। কয়েক বছর আগের কথা। আমি ও আমার বন্ধু রাজ বিদ্যালয় পাঠদান শেষে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন আমরা দশম শ্রেণীতে পরি। বুঝতেই পারছেন অল্প বয়স। এ বয়সে একটু পাগলামি হবেই। যা হোক সে সব কথা বাদ দিলাম। বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ আকাশে প্রচন্ড মেঘ জমা হলো। কিছুক্ষন পর আকাশে ‍বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করলো। আমরা দুজন তো ভয়ে শেষ। আশে পাশে কোন বাড়ি ঘর নেই। আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে কিছুু দুরে ঝাপসা ঝাপসা করে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। আমরা সেই বাড়ির দিকে দৌরতে থাকলাম। হঠাৎ প্রচন্ড বেগে বাতাশ বইতে শুরু করে। মনে হচ্ছে ঝর উঠবে।

একপর্যায়ে আমরা সেই বাড়িতে পৌছে গেলাম। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এদিকে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। রাজ বলতে শুরু করে “বৃষ্টি পড়ছে।” হঠাৎ করে ঘরের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে বাইরে এলো। দেখতে যেন পরির মতো সুন্দর। সত্য আমি মেয়েদের থেকে সবসময় একটু দুর থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার বন্ধু রাজ একটু বেশি আবেগি। শুরু হলো তার গল্প। যা হোক মেয়েটি বাইরে এসেই বলতে শুরু করে আমাকে ডাকলেন কেন। কি আশ্চর্য মেয়েটির নাম যে বৃষ্টি তা আর আমরা জানতাম না।

আমার বন্ধু আর চোখের মটক ফেলতে পারলো না। সে একভাবে মেয়েটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে একবার ডাকলাম। সে আমার কথা মনে হয় শুনতে পেল না। আমি তাকে ধাক্কা দিলাম। তাৎক্ষনাত যেন আকাশ থেকে পড়রো মনে হয়। মেয়েটি রাজের দিকে তাকিয়ে রাগের স্বরে তাকে বকা দিল। রাজ কিছু মনে করলো না। মেয়েটি রাগি হলেও তার মাঝে মানবতা আছে। আমাদের বললো “বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, আপনারা ভেতরে আসুন।” আমরাও নির্লজ্জ এর মতো ভেতরে গেলাম। ভেতরে তার মা-বাবা বসা ছিল। হঠাৎ করে রাজ তাদের সালাম দিল। একটা বিষয় আমার তখনও মাথায় যাচ্ছে না।

যে রাজ কখোন কাউকে সালাম দেয়নি সে রাজ এক নিমিসেই ঘরে ঢুকে সালাম জানালো। আমি তখনই বুঝলাম যে রাজের মনে কিছু চলছে। আমরা কথা বলতে থাকলাম। অবশেষে বৃষ্টি থামলো। আমরা চলে এলাম। কিছুদিন কেটে গেল। রাজ ঐ মেয়েটাকে ভুলতেই পারছে না।

হঠাৎ করে একদিন রাজ একটা কাজের জন্য পাশের এলাকায় গেছে। পাশের এলাকায় যাওয়ার সাথেই দেখে ঐ মেয়েকে (বৃষ্টি) দেখতে পায়। রাজ মেয়েটির পিছু নেয়। অবশেষে বৃষ্টি কে সে বলেই ফেলে যে সে(রাজ) তাকে ভালোবাসে। মেয়েটির জীবনে রাজ প্রথম ভালোবাসার কথা বলে। মেয়েটি উত্তরে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। বৃষ্টি কিছু না বলে ওখান থেকে চলে যায়। রাজ ও তার কাজ সেরে বাসায় চলে আসে।

রাজ পরের দিন আবার যায় সেই গ্রামে। কিন্তু রাজ সেদিন সেই মেয়েকে দেখতে পায়না। রাজ প্রায় দিনই সেই গ্রামে যেত। কিছুদিন পর আমাদের পড়িক্ষা। রাজের পড়াশোনার প্রতি আগের মতো মনোযোগ নাই। ওহ বলতে ভুলে গেছি রাজ খুবই ভালো পড়াশোনার দিক দিয়ে খুবই ভালো। একদিনের ব্যবধানে রাজের পড়াশোনর প্রতি মনোযোগ নাই। একদিন আমরা বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম বিদ্যালয় থেকে বিদায় নিয়ে। হঠাৎ দেখতে পাই বৃষ্টি আমাদের সামনে এসে দারালো। রাজ কি করবে বুঝতে পাড়লো না। মেয়েটি রাজের দিকে অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

বুঝলাম মেয়েটিও রাজকে মনে মনে ভালোবাসে। রাজ কিছু বলার আগেই মেয়েটি রাজকে বললো আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আপনাকে প্রথমে আপনার নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আগে আপনি সফলতা অর্জন করুন তারপর আমরা এক হতে পারবো। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। আপনি যতদিন সফলতা অর্জন না করবেন ততদিন। এটা বলেই মেয়েটি সেখান থেকে চলে গেল।

আমাদের পড়িক্ষা শেষ হলো। রাজ আর আমি দুজনেই চলে গেলাম একটা কোচিং এ। আমি আর রাজ বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। তাই সবসময়ই যেখানে যেতাম একসাথে যেতাম। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি বৃষ্টিও দশম শ্রেণীতে পড়তো বালিকা বিদ্যালয়ে। অবশেষে দির্ঘ প্রতিক্ষার পর আমি ও রাজ ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারলাম। অবাক হলেও সত্য আমরা যে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম বৃষ্টিও সেই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিল।

মেয়েটি রাজের সাথে কোন কথা বলেনি ।

এভাবে বছর তিন কেটে গেল। রাজ এখন বাস্তব জীবনের মূল্য বুঝতে পারলো। রাজের পরিবার মধ্যবিত্ত ছিল। তার বাবা অসুস্থ হওয়ায় রাজকেই পরিবারের দায়িত্ত নিতে হলো। রাজ বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করলো। অবশেষে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি পেল। সেই কোম্পানিতে যে বেতন দেয় তা দিয়ে রাজের পরাশোনার খরচ ও বাড়ির খরচ চালানো সম্ভব নয়।

এভাবেই রাজ কষ্ট করে চলতে থাকে। বেশ কিছুদিন পর একটা সরকারি চাকরির জন্য আমি ও রাজ আবেদন করি। দুর্ভাগ্য বসত রাজের চাকরিটা হয় না। রাজ মানসিক ভাবে অনেক ভেঙ্গে পরে। আমিও এতে অনেক দুঃখ পেলাম। দু মাস কেটে গেল । রাজ আরো ভেঙ্গে পরে কারন বৃষ্টির পরিবার বৃষ্টিকে বিয়ে দেয়ার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে। দুদিন পর আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি সেখানের এক চাকুরিজীবি মারা যায়। অফিসের বস বললো দ্রুততম ভিত্তিতে একজন দক্ষ লোক প্রয়োজন। আমি বসকে অনেক বুঝালাম। বস অবসেসে রাজকে ডাকতে বললো।

রাজের আচরন দেখে বস মুগ্ধ হয়ে গেল। রাজের অভিজ্ঞতাও ছিল। বস রাজকে চাকরি দিয়ে দিল। এতে রাজ খুবই আনন্দিত হলো। এবং তাৎক্ষণাত সে বৃষ্টির বাবার কাছে গিয়ে তাদের ব্যাপারে সব খুলে বললো। বৃষ্টির বাবা খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তাই তাদের কথা মেনে নিল। দুই মাস পর তাদের বিয়ে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাওয়ায় রাজের বাবাও সুস্থ হয়ে উঠলেন। রাজের বিয়ে হলো। এখন তারা খুবই সুখি।

এভাবেই রাজ ও রাজের ভালোবাসার পরিপূর্ণতা পায়।

Related Posts

24 Comments

মন্তব্য করুন