ভূতের ভালোবাসা এবং প্রতিশোধ

মিসেস রহমান গাড়িতে বসে রাগান্বিত হয়ে তার হাজবেন্ড কে বলছেন গাড়ি ডানে ঘুরাতে। তার হাজবেন্ড আরো বেশি রেগে গিয়ে বললেন চুপ করে বসে থাকো আমি তোমাকে জায়গামতো পৌছে দিব। মিসেস রহমান বললেন নতুন চালকদের চেয়েও তুমি খারাপ চালাচ্ছো, আমি বাজি ধরে বলতে পারি তোমার চেয়ে আমি ভালো চালাতে পারব। ঠিক ওই মুহূর্তে একজন পথচারী তাদের গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করে উল্টে পড়ে গেল। এবং তার মাথায় ব্যথা পেয়ে রক্ত বেরুতে শুরু করলো আর সাথে সাথে লোকটি অজ্ঞান হয়ে গেল। মিসেস রহমান আর মিস্টার রহমান ভয় পেয়ে গেলেন। মিস্টার রহমান বললেন তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স ডাকো।

লোকটি এখন হাস্পাতালে ডাক্তারের সামনে বসে আছে। ডাক্তার তার সামনে  আঙুল তুলে বললেন এখানে কয়টি আঙুল বলুন তো। লোকটি বলল দুটি। ডাক্তার আবার বলল এখানে কয়টি? লোকটি বলল পাঁচটি। তারপর ডাক্তার জিজ্ঞেস করল তোমার বয়স কতো? সে বলতে পারল না। আবার জিজ্ঞেস করল তুমি এখন কোথায় আছো? সে বলল হাসপাতালে। ডাক্তার আবার জিজ্ঞেস করল তুমি কোথায় থাকো? সে কোন উত্তর দিতে পারল না। তখন ডাক্তার হাসপাতালের বেড দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল এটা কি? সে বলল বেড। তারপর কম্বল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল এটা কি? সে বলল কম্বল। তাকে আবার জিজ্ঞেস করলো তোমার নাম কি? সে কোনো উত্তর দিতে পারল না।

নিজের পরিচয় জানার জন্য সে পুলিশ স্টেশন গেল। সেখানে সেখানে গিয়ে সে বলল আমি আমার পরিচয় জানতে এসেছি। তারা তার হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে মিলানোর চেষ্টা করে দেখছে। আর সে পুলিশ স্টেশনে বসে অপেক্ষা করছে।

এমন সময় একটা মেয়ে তাকে হাসান সাহেব বলে ডেকে উঠলো। সে চমকে পাশ ফিরে তাকা্লো। মেয়েটি বলল আপনার নাম হাসান, আপনার বয়স ৩২, আপনার পরিবারে কেউ নেই আর আপনি থাকেন ধানমন্ডিতে। বলেই মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আর তখনই পুলিশ স্টেশনের একজন মহিলা কর্মী তাকে মিস্টার হাসান বলে ডাক দিল। মেয়েটি হাতের আঙ্গুলে ইশারা করে বললো আপনাকে ডাকছে। হাসান সাহেব অবাক হয়ে বলল আমাকে?

মহিলাটি থেকে ডেকে বলল আপনার নাম মিস্টার হাসান। আপনার পরিবারে কেউ নেই। আর আপনি থাকেন ধানমন্ডি। লোকটি লাফিয়ে ওঠে পাশ ফিরে তাকিয়ে বলল আমার পাশে থাকা মেয়েটি কোথায়? মহিলাটি বলল এখানে কি কেউ ছিল? লোকটি বলল জ্বি  এখানে একজন ছিল। সে অবাক হয়ে বললো ওহ মাই গড !কিভাবে? সে এখানে বসা ছিল আর বড় বড় চোখ করে কথা বলছিল। আমি তার দিকে তাকিয়ে কথা শুনছিলাম। পুলিশ স্টেশনের মহিলাটি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল।

সন্ধ্যায় পুলিশের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী সে তার ঘরে ফিরে এলো। তারপর বাতি জ্বালিয়ে বলল ,আমি এখানে থাকতাম? সে তার রুমের সবকিছু খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। এক সময় সে ঘুমিয়ে পরল এবং হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে সে দেখতে পেল সেই মেয়েটি তার মুখের উপর ঝুঁকে আছে। ভয় পেয়ে সে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো আমি কি স্বপ্ন দেখছি? মেয়েটি মাথা নেড়ে, না বলল। সে বলল তাহলে…? মেয়েটি বলল আমি ভূত!

হাসান সাহেব চোখ বন্ধ করে ফেলল আর বলল এটা একটা স্বপ্ন। মেয়েটি বলল এই যে, আপনি কোন স্বপ্ন দেখছেন না। ্তিনি তখনও চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় বলল ,আমি দুঃস্বপ্ন দেখছি, এটা একটা দুঃস্বপ্ন। বলেই চোখ মেলে দেখল মেয়েটি নেই। মেয়েটি তার পুরো ঘর ঘুরে ঘুরে দেখছিল আর বলছিল সিঙ্গেল ছেলেরা তাহলে এভাবেই থাকে! আর ছেলেটার কাপড়ের গন্ধ শুঁকে বলল আপনার এগুলো ধোয়া উচিত এখান থেকে গন্ধ বেরোচ্ছে। হাসান সাহেব তখন জিজ্ঞেস করল, আপনি কে?

আর তখনই মেয়েটি না হেঁটেই তার সামনে এসে বলল মনে করার চেষ্টা করুন। আপনি কি আমাকে আগে দেখেননি? হাসান সাহেব বললো, না। বলার সাথে সাথেই তাঁর মনে পড়লো পুলিশ স্টেশনে তিনি তাকে দেখেছিলেন। মিস্টার হাসান তখন ভয় পেয়ে তার পাশে থাকা একটি শার্ট হাতে নিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আর তখনই মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? হাসান সাহেব পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে মেয়েটি বাইরে ছাদের উপর বসে আছে। হাসান সাহেব ভয় পেয়ে দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলেন। আর সাথে সাথেই মেয়েটি তার সামনে চলে এলো ,এসে বলল, এই যে ভদ্রলোক শুনছেন? হাসান সাহেব তাকে দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলো। তার চিৎকার শুনে মেয়েটি চিৎকার করতে লাগলো। তারপর হাসান সাহেব দৌড়ে যেখানে যায় মেয়েটি সেখানেই হাজির হয়ে যায়।

হাসান সাহেব কোন উপায় না দেখে ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার তাকে দেখে বলল আপনি হয়তো কোনো দুশ্চিন্তা করছেন। এদিকে হাসান সাহেব ডাক্তারের দিকে না তাকিয়ে কখনো বামে কখনো ডানে তাকাচ্ছিলেন। ডাক্তার তখন তার দিকে তাকিয়ে বলল আপনার আংশিক স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে আপনার উচিত কাছের বন্ধু অথবা পরিবারের ওপর আস্থা রাখা। হাসান সাহেব বললেন আমার মনে হচ্ছে আমার সমস্যাটা আরো বেশি ভয়ঙ্কর। ডাক্তার তখন বললেন কিরকম? তখনই হাসান সাহেব দেখলেন ডাক্তারের পাশের চেয়ারে সেই মেয়েটি বসে আছে ডাক্তারের স্টেথোস্কোপ হাতে নিয়ে। তিনি তখন আঙ্গুলের ইশারা করে ডাক্তারকে বলেন আমি কিছু দেখতে পাই।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে হাসান সাহেব বাসে উঠলেন। মেয়েটিও তার পিছু পিছু বাসে চড়ে বসলো। ঠিক তার পিছনে বসে তাকে ডাকছিলো। তিনি মনে মনে ভাবলেন এসব কিছু না ঐ মেয়েটি চলে যাবে। কিন্তু মেয়েটি ফিসফিস করে বলে উঠল না আমি কোথাও যাব না আমি আপনার সাথেই থাকব। কথাটি শুনে হাসান সাহেব মেয়েটির দিকে ফিরে তাকাল। তখন মেয়েটি বলল শক্ত করে ধরে বসুন বাস এখনই বামে মোড় নেবে। হাসান সাহেব দুই হাতে কান চেপে ধরে বসে থাকল। আর বলল না আমি কিছু শুনতে চাইনা। মেয়েটি তখন বলল আপনি কিন্তু পস্তাবেন। ঠিক তখনই বাস বামে মোড় নিল আর লোকটি প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। মেয়েটি তখন বলল আমি আপনাকে বলেছিলাম। তারপর হাসান সাহেব তার সিটে বসে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ভাবছিল কে সে ?সে কি সত্যি ভূত? মেয়েটি বলল আপনি যদি জানতে চান তাহলে আমাকে ফলো করুন। বলেই সে বাস থেকে নেমে গেল। সেও মেয়েটির পিছে যেতে লাগলো। মেয়েটি তাকে এমন একটি জায়গা নিয়ে গেল যেখানে গিয়ে হাসান সাহেব দেখলেন সেখানে মেয়েটির মৃত্যুর শোক পালন করা হচ্ছে।

হাসান সাহেব অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নাম কি? মেয়েটি বলল, অনু। আপনার বয়স কত? সে বলল ২৫। আপনি আমার কাছে কি চান? এমন সময় একটা মহিলা এসে হাসান সাহেব কে দেখে বলল,ওই দেখো কে এসেছে। হাসান সাহেব তখন অনুর দিকে তাকালো আর অনু বলল তিনি আমার সাথে কাজ করতেন।

এমন সময় পাশে থাকা এক মহিলা অন্য একজনকে জিজ্ঞেস করছিল কি হয়েছিল, অনু কিভাবে মারা গেল? মহিলাটি বল্‌ কে যেন তার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি শুনেছি সেটা অনেক ভয়ঙ্কর ছিল। হাসান সাহেব তখন এই কথা শুনে অনুর দিকে ফিরে তাকালো

তারপর হাসান সাহেব বাইরে বেরিয়ে এলো। আর অনু কে বলল এজন্যই আপনি আমার কাছে এসেছেন ?আপনি আপনার খুনিকে খুঁজে বের করতে চান ,আপনি চান আমি প্রতিশোধ নেই?। অনু বললো আপনি যদি এটা করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।

অনু বলল যখন একটা মৃত মানুষ একজন জীবিত মানুষের কাছে আসে তখন নিশ্চয়ই তার একটা কারণ থাকে। হাসান সাহেব বললো কারণটা কি আমাকে বলো। অনু বলল আমি কেন বলব আপনি খুঁজে বের করুন সাথে আপনার হারানো স্মৃতিও। হাসান সাহেব বললো আমি কেন আপনার কথা শুনবো।  অনু  তখন হেসে বলল তাহলে আপনি কি চান সারা জীবন আমাকে সঙ্গে নিয়ে থাকতে।হাসান সাহেব তখন বাধ্য হয়ে অনুর পিছু পিছু গেলেন।

অনু হাসান সাহেব কে তার নষ্ট ফোনটা ঠিক করে নিতে বলল। সে বলল আপনার ফোন ঠিক করলে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন। তাই হাসান সাহেব তার ফোন ঠিক করার জন্য মেকানিকের কাছে নিয়ে গেল। কিন্তু সেখানে মেকানিক ফোন চেক করে বলল এই ফোন টা এমন ভাবে নষ্ট হয়েছে যে আর এটা ঠিক করা সম্ভব নয়। তাকে একটা নতুন ফোন কিনে নিতে বলল। হাসান সাহেব তার নতুন ফোনে পুরনো সিমটি লাগাতেই তার বসের কল চলে আসলো। সে সঙ্গে সঙ্গে তার কাজের জায়গায় হাজির হল। সেখানে তার বস থাকে অনেকক্ষণ ঝাড়ি দেয়ার পর বলল রফিককে ফোন দিয়ে অর্ডার গুলো ক্যানসেল করে দেওয়ার জন্য। সে তখন মনে মনে ভাবছিল কে রফিক? অনু তখন অনেকগুলো  ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলল এটা হচ্ছে রফিক। যাকে আপনি ছোট ভাইয়ের মতো আদর করতেন। হাসান সাহেব ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলেন আর তখনই তার বস  এসে বলল এখন এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে যাও, এখনই কাজে লেগে পরো।

হাসান সাহেব তখন ডেলিভারি দেওয়ার জন্য বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলো। আর তার পেছনে বসে অনু সব চিনিয়ে দিচ্ছিল। ডেলিভারি শেষে তারা একটি সুপার শপে কিছু খাওয়ার জন্য থামল। সেখানে অনু একটি জুস দেখিয়ে বলল আপনি এই জুসটাই প্রতিদিন খেতেন। হাসান সাহেব তখন বলল এই জুস? আমার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে কিন্তু সাদ হারায়নি, আমি এটা নয় ওইটা খেতাম। আর তখনই সুপারশপের একজন কর্মী এসে বলল আর এ স্যার আপনি এতদিন পর , তারপর অনু যেই জুস্টার কথা বলেছিল সেটা দেখিয়ে বলল  এটাইতো খাবেন তাই না? প্রতিদিন এক জিনিস খেতে খেতে আপনার বিরক্ত লাগে না? আর হাসান সাহেব তখন অপ্রস্তুত হয়ে অনুর দিকে তাকাল।

আর বলল আপনি আমার ব্যাপারে এত কিছু কিভাবে জানেন? অনু তখন সুপারশপের বিপরীতে একটা ফুল দোকান দেখিয়ে বলল এটা আমার দোকান আপনি সপ্তাহে একদিন ডেলিভারি করতে আসতেন ,আপনার  কি কিছুই মনে নেই?

ডেলিভারির কাজ শেষ করে তারা যখন ফিরে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ হাসান সাহেব এর বাইক আরেকটি গাড়ির সাথে প্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেল। তিনি তার বাইকটি ঘুরিয়ে একটি বাসার সামনে দাঁড় করালেন। আর তখন তাঁর কিছু কিছু স্মৃতি মনে পড়ছিল একটা লোকের সাথে রাস্তায় ধাক্কা খাওয়া, একটা বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়া এরকম কিছু দৃশ্য তার চোখে ভাসছিল। তারপর সে দেখল পাশে পুলিশ একটা কিছু নিয়ে ইনভেস্টিগেশন করছে। হাসান সাহেব পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল। এদিকে রফিক যাকে হাসান সাহেব ছোট ভাইয়ের মতো দেখেন সে লুকিয়ে তাকে ফলো করছিল। হাসান সাহেব তখন অনু যে ফ্ল্যাটে থাকত তার দরজার সামনে এসে দাড়ালো। তখন উনার আরো কিছু স্মৃতি মনে পড়ছিল। তিনি যখন ফ্লাটের দরজা খুললেন তখন তার মনে হলো তিনি অনুর লাশ এখানে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন।

তিনি বললেন আমি এখানে এসেছিলাম কিন্তু আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? অনু তখন বলল আমার ধারনা আপনি আমাকে মরার সময় দেখেছেন। তার মানে হচ্ছে আমার খুনের সাক্ষী আপনি। একথা শুনে হাসান সাহেব মাটিতে বসে পড়লেন। অনু তখন বলল এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আপনি শুধু আমাকে মেরে ফেলতে দেখেছেন। আমারও মনে নেই কি হয়েছিল। আমি কাউকে দেখিনি কিন্তু আমার মনে আছে আমি আপনার মুখ দেখেছিলাম। যখন আমার সামান্য জ্ঞান ছিল তখন আমি আপনাকে দেখেছিলাম। আপনাকে তখন বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। হাসান সাহেবের তখন কিছু স্মৃতি মনে পড়ছিল। তিনি বললেন হ্যাঁ সেখানে আরো একজন ছিল। আমার মনে হয় সেই খুনী।

এমন সময় পুলিশ এসে হাসান সাহেব কে জিজ্ঞেস করল ,আপনি এখানে কি করছেন? তারা হাসান সাহেব কে নিয়ে আসলো। আর তার কাছ থেকে সবকিছু শোনলো। পুলিশ তাকে বলল তারমানে সেখানে যে ছিল সম্ভবত সেই খুনি। কিন্তু আপনি সেখানে কি করছিলেন? হাসান সাহেব বললো আমি ডেলিভারির কাজ করতাম। পুলিশ বলল আপনি সেখানে কি ডেলিভারি দিতে গিয়েছিলেন? হাসান সাহেব ঠিক মনে করতে পারছিনা। আপনি যাকে দেখেছিলেন সে দেখতে কেমন ছিল? হাসান সাহেব বললো আমি জানিনা। পুলিশ বলল এভাবে স্টেটমেন্ট নেয়া যাবে না ।যখন আপনার সব পুরোপুরি মনে করবে তখন আমাদেরকে জানাবেন।

পুলিশ স্টেশনের বাইরে রফিক হাসান সাহেব কে ফলো করছিল।

পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে হাসান সাহেব তার বসের কাছে গেল। সেখানে তিনি তার কাজের রেকর্ড চেক করছিলেন। আর তিনি দেখলেন যেদিন অনু মারা গেল সেদিন সন্ধ্যায় তিনি কোনো ডেলিভারির কাজ করেন নি। এটা দেখে তিনি চিন্তায় পড়ে গেল। অনু তখন তাকে বলল আপনি চিন্তা করবেন না এই খুনের সাথে আপনার কোনো হাত নেই। হাসান সাহেব তখন ওর দিকে তাকিয়ে বলল আমি আপনার বাসায় সেদিন কেন গিয়েছিলাম আপনি জানেন তাই না? আপনার সাথে আমার কি সম্পর্ক ছিল আমাকে বলুন। অনু বলল আপনি সত্যি জানতে চান? হাসান সাহেব বললো ,হ্যাঁ।

হাসান সাহেব কে নিয়ে অনু লেকের পার গেল আর বলল একদিন আমি এই লেকের পারে বসেছিলাম। আপনি পানিতে পড়ে গেলেন। আপনাকে বাঁচানোর জন্য আমিও পানিতে ঝাপ দিলাম। সেই থেকে আপনার সাথে আমার পরিচয়। যেদিন আমি ফুলের দোকান প্রথম খুলেছিলাম সেদিন  আপনি সেখানে ডেলিভারি দিতে গিয়েছিলেন। প্রথম দিন আমি সবাইকে ফ্রি ফুল দিচ্ছিলাম। আপনাকে দেখে আমি চিনে ফেলে ছিলাম আর আপনাকে একটা ফুল দিলাম কিন্তু আপনি সেটা নেননি। আর আমি তখন সেটা আপনার গায়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে এসেছিলাম। আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি? হাসান সাহেবের তখন মনে পরল এবং তিনি মুচকি হেসে উঠলেন আর বললেন এতদিন আমাকে বলেননি কেন? অনু বলল আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে চিনতে পারবেন।

পরদিন সকালে পুলিশের লোক  আসলো হাসান সাহেবের কাছে। হাসান সাহেব বললো কি ব্যাপার আপনি এখানে? আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম। সেদিন সন্ধ্যায় আপনি কোন ডেলিভারি করেন নি বরং তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলেন। তাহলে আপনি সেখানে কি করছিলেন? হাসান সাহেব বলল আমাকে তার জন্মদিনে দাওয়াত দিয়েছিল। আপনাদের মধ্যে কি কোন সম্পর্ক ছিল? হাসান সাহেব বললো না সেদিনই আমাকে প্রথমবার দাওয়াত দিয়েছিল। পুলিশ বলল তাহলে আপনি কেন ওইদিন বললেন ডেলিভারির জন্য গিয়েছিলেন? হাসান সাহেব বললো আমি মাত্র কিছু কিছু জিনিস স্মৃতি থেকে মনে করার চেষ্টা করছি তাই। পুলিশ তখন বলল হাসান সাহেব আপনার কি আপনার কোন আত্মীয় বা কোন বন্ধুর কথা মনে পড়েছে? এটাকি আশ্চর্যের বিষয় না যে আপনার শুধু অনুর কথা ছাড়া আর অন্য কারো কথাই মনে পড়ছে না। এমনকি আপনার তার সাথে কোন প্রেমের সম্পর্ক ও ছিল না।

সেদিন অনু সারাদিন হাসান সাহেবের সাথে ঘুরলে তারা একসাথে মুভি দেখলো, বাজার করলো এবং সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে একসাথে রান্না করলো। তারপর হাসান সাহেব  কেকের উপর মোমবাতি জ্বালিয়ে অনুকে বলল ফু দিতে। আর তাকে জন্মদিন উইশ করলো। অনু তখন ইমোশনাল হয়ে বলল আমার সাথে এত ভাল ব্যবহার করবেন না প্লিজ। সেদিন আপনি আমার জন্মদিনে একমাত্র গেস্ট  ছিলেন।। আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম আপনার অনুভূতি কেমন ছিল ।হাসান সাহেব বলল সরি অনু তুমি মৃত আর আমি এটাও জানি না আমার কতটুকু দুঃখ পাওয়া উচিত। স্মৃতি হারিয়ে ফেলা আসলে খুবই খারাপ। অনু তখন চোখভর্তি পানি নিয়ে হাসান সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইল।

সেদিন সন্ধ্যায় হাসান সাহেব অনুর জন্য ফুল নিয়ে লেকের পাড় গেল। গিয়ে সেখানে দেখল অনু একা দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তখন মনে মনে ভাবল তুমি আমাকে বাঁচিয়েছে অথচ আমি তোমাকে কিভাবে ভুলে গেলাম। তখনই রফিক কোথা থেকে ছুটে এলো আর বলল হাসান ভাই কি হয়েছে তোমার ?তোমাকে কিছুদিন ধরেই কেমন যেন দেখাচ্ছে আর তুমি মনে হচ্ছে আমাকে চিনতে পারছ না ,আমি রফিক। হাসান সাহেব বলল কিন্তু তুমি তো ছুটিতে। রফিক তখন বলল আমাকে ডাকাতির দায়ে পুলিশ খুঁজছে আর একটা কথা মনে রেখ সেদিন সন্ধ্যায় কিছুই হয়নি। এটা শুধু তোমার আর আমার মধ্যে সিক্রেট ব্যাপার। তুমি যদি উলটপালট কিছু করো তাহলে পুলিশ আমাদের সন্দেহ করবে। এই বলে রফিক পুলিশের গাড়ির শব্দ পেয়ে দৌড়ে চলে গেল।

সেদিন বাড়ি গিয়ে হাসান সাহেব রফিক আর তার ছোটবেলার কিছু ছবি খুঁজে পেল। আর সেখানে তিনি একটি এতিমখানার ঠিকানা খুঁজে পেলেন। পরদিন তিনি এতিমখানায় গেলেন এখান থেকে জানতে পারলেন রফিক আর তিনি ছোটবেলা থেকেই এতিমখানায় ভাইয়ের মতো বড় হয়েছেন। সেখানকার ইনচার্জ তাকে বলল আমি শুনেছি রফিকের নাকি অনেক টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছে সে আর কবে ভালো হবে। আমি জানি হাসান এটা সহজ নয় কিন্তু তবু তুমি রফিকের দিকে খেয়াল রেখো। এই পৃথিবীতে তোমাদের দুজনের তোমরা ছাড়া আর কেউ নেই। শুধু রক্তের সম্পর্ক থাকলেই ভাই হয় না।

এতিমখানা থেকে বেরিয়ে হাসান সাহেব অনুকে যেখানে খুন করা হয়েছিল সেখানে গেল। সেখানে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই তার মনে পরল সেদিন রাতে তিনি রফিককে দেখেছেন রক্তমাখা ছুরি তুলে নিতে। আর রফিক তাকে বার বার বলছে এখানে কিছুই হয়নি ভাইয়া এখানে কিছুই হয়নি।

তারপর হাসান সাহেব  অনুর সাথে দেখা করে সব বলল। সব শুনে বলল  অনু বলল বেচেঁ থাকতে আমার কেন মনে হয়নি জীবনটা আসলেই অনেক সুন্দর। আমি যেভাবে ছিলাম তার জন্য আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল। যাইহোক আমার মনে হয় এখন আমার চলে যাওয়া উচিত। আমি এখন যেতে পারি। আমার আরো কিছুদিন থাকার ইচ্ছে ছিল। কারণ আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে মনে করতে পারবে।। আমি আমাদের সুন্দর স্মৃতি গুলো শেয়ার করতে চেয়েছিলাম।হাসান সাহেব বললো আমার এখন যে তোমাকে খুন করেছিল আমার এখন তাকে ধরা উচিত। তোমার জন্য আমি এখন এতোটুকুই করতে পারি। অনুগ্রহ বলল না এখন পর্যন্ত আপনি আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন আর কিছু করতে হবে না।হাসান সাহেব বললো যেও না অনু। এখন যেও না আমি এখনো তোমাকে ভালো করে জানি না এইমাত্র আমি তোমাকে জানা শুরু করেছি। আমি অন্য কিছু জানিনা কিন্তু তোমার ব্যাপারে আমি সবকিছু মনে করতে চাই। হাসান সাহেবের কথা শুনে অনুর চোখ দিয়ে জল পরতে লাগলো।

পুলিশ স্টেশন থেকে পরদিন সকালে হাসান সাহেব কে কল দিয়ে যেতে বলল। অনু জানতে চাইল কে ফোন দিয়েছে। হাসান সাহেব বলল পুলিশ খুনির সম্পর্কে জানতে চায়। অনু বলল আমিও যেতে চাই। কিন্তু হাসান সাহেব তাকে যেতে মানা করল তিনি বলল আমি চাইনা তোমার মনে কোন খারাপ স্মৃতি থাকুক তুমি এখানেই থাকো। এই বলে তিনি বেরিয়ে গেল। পুলিশ স্টেশন যাওয়ার পর পুলিশ তাকে বলল এই ছেলেটি হচ্ছে রফিক সে ডাকাতির মামলায় আসামি তাছাড়াও এই খুনের সাথে তার সম্পর্ক আছে বলে আমরা ধারণা করছি। ছেলেটি তোমার কলিগ আর তোমরা এতিমখানায় বড় হয়েছো। তোমাকে এখনো কিছু মনে পড়ছে না? হাসান সাহেব বললো হ্যাঁ আমারও ধারণা রফিক ই খুনি।

হাসান সাহেব রফিককে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে ডেকে আনল। আর অন্যদিকে পুলিশ তাদের লোকজন নিয়ে অপেক্ষা করছিল কখন রফিক আসবে। তারপর রফিক আসার পর হাসান সাহেব এগিয়ে গেল কথা বলতে আর তখনই পুলিশ চারদিক থেকে বেরিয়ে আসল। চারদিকে পুলিশ দেখে রফিক বুঝে ফেলল এবং পালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু হাসান সাহেব তাকে ধরে ফেলল। আর বলল এটা কেন করলে, কেন সবকিছু শুরু হওয়ার আগেই তো শেষ করে দিলি। কেন তুমি মেয়ে টাকে মেরে ফেললে আমি তাকে পছন্দ করতাম। কেন তুই সব শেষ করে দিলি।তখন রফিক বলল হাসান ভাই তুমি কি বলছো এসব আমি সব শেষ করে দিয়েছি। আমি মেয়েটাকে খুন করিনি তুমি করেছ। তুমি সবকিছু শেষ করে দিয়েছ। তুমি মেয়েটাকে খুন করেছ আর এখন তুমি আমাকে দোষ দিচ্ছো। ঠিক তখনই পুলিশ এসে হাসান সাহেবের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিল। আর এদিকে অনু হাসান সাহেবের দিকে তাকিয়ে শুধু কান্না করছিলো। হাসান সাহেব অসহায়ের মতো অনু্র দিকে তাকিয়েছিল।

পরদিন যখন পুলিশ হাসান সাহেব কে অনুর ফ্ল্যাটে নিয়ে গেল আর তার হাত একটু ছড়িয়ে দিল তখনই হাসান সাহেবের সব মনে পড়ে গেল। সেদিন সকালে অনু হাসান সাহেব কে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়েছিল। বলেছিল কাজের শেষে সন্ধ্যায় তার বাসায় যেতে. আর এটাও বললো যে হাসান সাহেবের জন্মদিন এর একমাত্র গেস্ট। যখন হাসান সাহেব জিজ্ঞেস করলো আমি কেন? নতুন বলেছিল হয়তো আমি আপনাকে পছন্দ করি তাই। সেদিন সন্ধ্যায় যখন হাসান সাহেব উনি বাসায় ছিল তখন রাস্তায় রফিকের সাথে দেখা হল। রফিক তাকে বলল হাসান ভাই আমার সাথে একটু চলো। হাসান সাহেব বললো এখন পারব না একটা কাজ আছে আমি অন্য কোন সময় যাব। আর এখন থেকে আমি নিজের জীবনটাকে অন্যভাবে চালাবো।রফিক তখন বলল আমিও তাই ভাবছি। এখন থেকে আমিও নিজের জীবনটাকে সুন্দরভাবে চলবো। কিন্তু আজকে তোমাকে আমার সাথে যেতেই হবে. বেশি সময় লাগবে না চলো।

রফিক সাহেব বললো ঠিক আছে চলো কিন্তু বেশি সময় দিতে পারবো না। রফিকুল হাসান সাহেব কে নিয়ে একটা বাসায় গেল সেখানে সে ডাকাতি করা শুরু করল। তুমি কি করছ রফিক এটা কার বাসা? এটা কার বাসা রফিক? হাসান সাহেব এর চোখ পড়লো অনুর ছবির দিকে।তিনি বার বার রফিককে বাধা দিলেন ডাকাতি করতে কিন্তু রফিক শুনলো না।সে অনুর সবগুলো ব্যাংক কার্ড নিয়ে নিল আর অই মুহূর্তে অনুর পায়ের শব্দে দুজন দুদিকে লুকিয়ে পড়লো।

অনু ভিতরে আসার সাথে সাথেই রফিক তাকে পিছন থেকে আটকে তার পেটের কাছে  ছুড়ি ধরে রাখলো।আর এটা দেখে হাসান সাহেব দৌড়ে গিয়ে ছুড়িটা রফিকের হাত থেকে নিয়ে নিল আর সাথে সাথে রফিক অনুকে ছুড়ে ফেলে দিল।আর তখনি অনু গিয়ে হাসান সাহেবের হাতে থাকা ছুড়িটির উপর পরে গেল এবং ছুড়িটি তার পেটে ঢুকে গেলো।হাসান সাহেব হতভম্ব হয়ে উঠে দাড়ালেন আর তখনি অনু শেষবার এক নজর তাকে দেখেছিল।

Related Posts