মানুষ মহান আল্লাহতালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মহান আল্লাহতায়ালা একমাত্র মানুষকেই আকুলতা ও ব্যাকুলতা অর্থাৎ আবেগ ও বিবেক এই দুটি মানবীয় গুণ দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। সজাক ও সুস্থ বিবেক দ্বারা কাজ করলে মানুষ সঠিক কাজই করে পক্ষান্তরে আবেগ দ্বারা কাজ করলে মানুষ অনেক সময় সঠিক অথবা বেঠিক দুটির যেকোনো একটি করতে পারে। তবে আবেগে আপ্লুত হয়ে কাজ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
আমরা জানি মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে। এর একটাই যৌক্তিক কারণ হলো মানুষের আবেগ রয়েছে। আবেগের বশবর্তী হয়ে আমরা অনেক সময় অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত এমন সব কাজ করে ফেলি যা সভ্য সমাজে ঘৃনিত, নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। এই কাজ গুলো করে পরে আবার অনুতপ্তও হয় কারণ তখন আমাদের বিবেকের দরজা সজাগ হয়ে ওঠে।
আমরা সবাই আমাদের আদি পিতা মাতা- বাবা আদম ও মাতা হাওয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘটনা জানি। আল্লাহর ইচ্ছায় সেখানেই আমাদের আদি পিতা- মাতা যদি ভুল না করতো তাহলে আমরা পৃথিবীতে আসতে পারতাম না। আমাদের আদি পিতা মাতা যখন আল্লাহর হুকুম বা নিষেধাজ্ঞা লংঘন করে তখনই আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেন। তাহলে এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, মানুষ ভুলে ভরা।এই ভুলে ভরা মানুষ দিয়েই এই রিক্ত পৃথিবী কে সাজানো হয়েছে। যখন হযরত আদম ও তার বিবি হযরত হাওয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে আসলেন তখন তারা স্বীয় কৃতকর্মের জন্য অত্যন্ত অনুতপ্ত ও লজ্জিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল। আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লংঘন করার কারণে দুনিয়াতে তারা আল্লাহর কাছে অনেক কান্নাকাটি এবং রোনাজারি করে অবশেষে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। আর আল্লাহতায়ালা কোন বান্দাকে তখনই ক্ষমা করে দেন যখনই মন থেকে ওই বান্দা উক্ত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
আমরা আমাদের জীবনে চলার পথে কতই না ভুল করে থাকি। আমরা অনেকেই এমন আছি ভুল করতে করতে এমন হয়ে গিয়েছি, আমি যে ভুলের মধ্যে আছি সে কথাটাও ভুলে গেছি অর্থাৎ ‘ভুলের উপরে ভুল তার উপরেও ভুল’।
অনেকে আছে নিজের জীবনকে ভুলের মধ্যে এমন ভাবে সম্পৃক্ত করেছে যে, সে পিছনে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করে না। বুদ্ধিমান তো ওই ব্যক্তি যে কোনো কাজ করার সময় যতদূর অগ্রসর হয়েছে তার সঠিক হিসাব রাখে। ঠিক সেখান থেকে পিছনের দিকে তাকিয়ে হিসাব করে যে সে কতদূর অগ্রসর হয়েছে। অর্থাৎ আত্মসমালোচনা করে যারা জীবন নামক যানবাহনটি সতর্ক দৃষ্টিতে পরিচালনা করেন তারাই হল আদর্শ মানুষ, তারাই হল অনুসরনীয় আদর্শ।তাদের জীবনে ভুলের সংখ্যা বা পরিমাণ অনেক কম থাকার কারণে তাদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনের পথ আলোকিত করা প্রয়োজন। কারণ আলোই পারে অন্ধকারকে দূরীভূত করতে, জ্ঞানীই পারে মূর্খ কে জ্ঞান দান করতে, বুঝবানই পারে বুঝহীন কে বুঝ প্রদান করতে।
যে সব মানুষেরা ঘৃনিত ও অগ্রহণযোগ্য স্বীয় কৃতকর্মে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আলোর পথে ফিরে আসে তারা পরবর্তীতে ওই ধরনের ঘৃণিত কাজে আর লিপ্ত হতে পারেনা। অর্থাৎ ভুল থেকে নেওয়া শিক্ষায় তার জীবনের সবচেয়ে কার্যকরী শিক্ষা হিসেবে পরিগণিত হয় এবং জীবনের চলার পাথেয় হিসেবে কাজ করে। পক্ষান্তরে যে সব মানুষেরা হাজারো ঘৃণিত, নিন্দিত ও সর্বজনবিদিত অগ্রহণযোগ্য কাজ কর্মে নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলেছে এবং স্বীয় কৃতকর্মকে গ্রহণযোগ্য ভেবে নিয়েছে সে তার মনুষ্য বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। সে কখনো একবারও চিন্তা করে না যে এই কাজটির সে নিজেকে এবং পুরো জাতিকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সে একবারও চিন্তা করে না এর দ্বারা সে বিশ্বসভ্যতাকে মনুষ্যত্বহীন, বিবেকহীন, মানবতা বহির্ভূত কাজ উপহার দিচ্ছে। এইভাবে সে সমগ্র পৃথিবী কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটা হল তার ইহকালের ঘৃনত্য ও নিন্দনীয় পুরষ্কার। আর এই কাজের জন্য পরকালে মহান স্রষ্টা, মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে কি প্রতিদান দিবেন সেটা আমরা সবাই জানি। যে পৃথিবীতে কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত করল না, যে নিজেকে পাপ কর্ম থেকে বিরত রাখতে পারলো না বরং উক্ত পাপে নিজেকে নিমজ্জিত রাখল, যে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলে সে তো অবশ্যই জাহান্নামী হবে।
যারা বিবেককে আবেগের কাছে বলি দিয়েছে, শেষ করে দিয়েছে তারাই শুধুমাত্র ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তিরা ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তাদের সমগ্র জীবন পরিচালনা করে এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে পুরো মানবজাতিকে চলতেও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে থাকে।
তাই আমরা যারা জীবনে ভুল করে ফেলেছি আসুন মহান আল্লাহতালার কাছে দোয়া,প্রার্থনা কান্না,রোনাজারি,লজ্জিত এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করি অবশ্যই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উক্ত ভুল থেকে পরিত্রান দিয়ে আলোর পথে নিয়ে আসবেন।
এজন্য আসুন আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ে আবদ্ধ হয় ” ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাই হলো আমার মুল কাজ”। এর দ্বারা আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক জীবন সুন্দর হবে।