ভৌতিক গল্প:অন্ধকার থেকে বেঁচে ফেরা

রাতঃ৩.২০
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল।
রাতে শোয়ার সময় মন খারাপ ছিল।এক্ষেত্রে হয়তো এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে।
চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।ঘুম না আসার সময় গুলোতে দেয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দ হয়ে যায় ঘন্টা ধ্বনির মতো।ঘুম আসল না….
ফোন হাতে নিয়ে ফেইসবুকে লগইন করলাম।বন্ধু ফারুক মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে
হুমায়ুন আজাদের “আমাকে ছেড়ে যাবার পর”
কবিতাটি পড়লাম।কমেন্ট করলাম-

রাতঃ৩.৩৩! এই মুহূর্তে আমার এমন কিছুর দরকার ছিল।
ঠিক এই সময় কবিতা পড়ার ভূত মাথায় চাপল।জানা ছিলনা এই ভূত মাথায় চাপার ভূতুড়ে কারণ।
মশারি সরিয়ে টেবিল থেকে তুলে নিলাম রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর “শ্রেষ্ঠ কবিতা” বইটি। বাতি জ্বালালাম না।
এই রাতে বাতির আলোয় আব্বু-আম্মুর ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে যদি তারা দেখে, তাদের যে ছেলে রাত ১০ টার উপর কোনদিন পড়ার টেবিলে থাকেনা,সে ছেলে রাত সাড়ে ৩টায় কবিতার বই নিয়ে বসে আছে তাহলে নিশ্চিত হাফেজ হুজুরের কাছে তাবিজের জন্যে দৌড়াবে!

যাই হোক,ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করে আবৃত্তি শুরু করলাম-
“হাজার সিরাজ মরে
হাজার মুজিব মরে
হাজার তাহের মরে
বেঁচে থাকে চাটুকার, পা-চাটা কুকুর
বেঁচে থাকে ঘুণপোকা, বেঁচে থাকে সাপ।”
ঠিক এসময় মনে হলো,
কেউ মশারির বাইরে থেকে আমার উপর নজর রাখছে!
মশারির সাথে চোখ লাগিয়ে খুব মনোযোগের সাথে প্রত্যক্ষ করছে আমার গুনগুন স্বরে কবিতা আবৃত্তি।দ্রুত ফ্লাশ লাইটের আলো ফেললাম সেখানে!

না,কিছুই নেই।শুধুই আমার মনের ভুল।আবার শুরু করলাম আবৃত্তি-
“জাতির রক্তে ফের অনাবিল সমতা আসুক
জাতির রক্তে ফের সুকঠোর সততা আসুক
আসুক জাতির প্রাণে সমতার সঠিক বাসনা।”
আবার পুরনো অনুভূতি জাগ্রত হলো।
এবার মনে হলো, অশরীরী কিছু সোফার পাশে অবস্থান নিয়েছে!
ঠিক এইসময়,ফোনের ফ্লাশ লাইট অফ হয়ে গেল।এতক্ষণ যে মন সাহসী ছিল,সেই বিদ্রোহ করে বসল-আসাদ! বই রেখে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমা।খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে!

মনের কথায় সায় দিলাম।হৃদস্পন্দন,শরীরের উত্তাপ দুটোই বাড়তে লাগল।কোন মতে বই রেখে কাথা মুড়ি দিলাম।কাথা থেকে যেই মাথা উপুর করলাম একটা হিমেল হাওয়ার স্রোত আমার উপর বয়ে গেল।
আমি যেন বরফ হয়ে গেলাম।
কাথাটা শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম।ঠিক এইসময় ঘটল জীবনের ভয়াল ঘটনাটি।
কাথাটি নিচ থেকে কেউ টানছে।
আমি উপরে নিই,সে কবার নিচে টানে।এভাবে কয়েকবার টানার পর হেচকা টানে সে পুরোটায় নিয়ে যায়!
আমি অসহায় অবস্থায় অনড় হয়ে বিছানায় পড়ে রইলাম।চিৎকার করে আব্বু-আম্মুকে ডাকলাম!
তারা কি শুনেছিল আমার আর্তনাদ?
না, শুনেনি।শুনলে এই বিপদে আমাকে একা লড়তে হতোনা।
সবচেয়ে খারাপের জন্যে চোখ বন্ধ করলাম।কিন্তু চোখ মেলতেই যা দেখলাম তার জন্যে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। দেখলাম, আমার কাথাটা শূন্যে পতাকার মতো উড়ছে!
আর আমি?

ধূধূ মরুভূমির ন্যায় কোন এক মৃত্যুপুরীতে।আমার চারদিকে ভয়াল কতগুলো কুকুর ক্রমাগত প্রদক্ষিণ করছে।সেগুলো ছিল কালো, ক্ষুধার্ত,হিংস্র।যেগুলোর চোখ গুলো লাল এবং মুখ দিয়ে লালা ঝরছে।
হাজারটা চিৎকার অব্যক্ত হয়ে বুকে চাপা পড়ে ছিল।চোখের অশ্রুজল বেরিয়ে আসছিল তরতর করে।অপেক্ষায় ছিলাম,কখন এই ভয়ানক দৃশ্যের ইতি ঘটবে কিংবা কেউ আমাকে বাঁচাবে!
কুকুরগুলো আমারদিকে ঝাপ দিলে আমি চোখ বন্ধ করলাম।ঠিক এসময় আমার কানে মুয়াজ্জিনের আযান ভেসে এল।চোখ বন্ধ রেখেই আমি পুরো আযান শুনলাম।এসময় আমার মনে হল সব কিছু শান্ত হয়ে এসেছে।যেমনটি প্রবল ঝড়ের পর প্রকৃতি শান্ত হয় অনেকটা তেমন।ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে নিজেকে পুনরায় বিছানায় আবিষ্কার করলাম।আমি কি তাহলে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম।ওযু করে নামায পড়ে আবার ঘুমালাম।রাতের স্বপ্ন ভুলে আমি রোজকার কাজ করে গেলাম।গোসলের সময় গায়ে পানি দিলে আমার বাহুতে ভীষণ জ্বালা করে উঠল।লক্ষ্য করলাম,বাহুতে কুকুরের নখের আঁচড়ের মতো দাগ।কোনোমতে গোসল সেরে এসে সেখানে ঔষধ লাগালাম।

সন্ধ্যা নামতেই আমার আচরণের স্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হিংস্র আচরণ শুরু করলাম।আমাকে বেধে ফেলা হলো।বাসার কান্নার রোলে আরো বেশি বিরক্তবোধ করলাম।
হুযুর ডেকে আনা হলো।ওনাকে দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল।আমি ওনার দিকে তেড়ে গিয়ে আঘাত করতে চাইলাম।কিন্তু কয়েকজনের চেপে ধরা আর শক্ত রশির বন্ধন আমাকে তা করতে দিল না।
হুযুর দোয়া পড়তে আরম্ভ করলে আমার মনে হল,আমাকে যেন জ্বলন্ত আগুনের উপর বসানো হয়েছে। উনার প্রতিটি ফুৎকারে শরীর ঝলসে যাওয়ার অনুভূতি হল।আমি আর্তনাদ করতে করতে জ্ঞান হারালাম।
জ্ঞান ফিরলে অনেকটা প্রশান্তি অনুভব করলাম।চোখ আবার বন্ধ করে হাত পাশে রাখতেই কাগুজে কিছুর টের পেলাম।চোখের সামলে মেলে ধরলাম।তাতে অস্পষ্টভাবে লেখা-এবারের মতো বেঁচে গেলি….

Related Posts

17 Comments

    1. আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু
      আপনার একটা সাসক্রাইব আর একটা লাইক আমার জন্য অনুপ্রেরণা
      Please support me🙂

      Youtube Channel: https://www.youtube.com/channel/UCcrbrQxUzsavUjfXMgrsM6Q

      Facebook page: https://www.facebook.com/107324621876693/posts/107963605146128/?app=fbl

মন্তব্য করুন