মঙ্গল নাকি ইউরোপা | কোনটিতে বাস করবে মানুষ?

আপনি কি কখনো পৃথিবীর বাইরে গিয়ে বসবাস করতে চান? কিংবা কখনো কি ভেবে দেখেছেন এমনটা যদি হয় তাহলে কি হবে? না ভাবলে আজই ভাবতে বসে পড়ুন। বহু বছর আগে থেকেই মানুষ পৃথিবীর বাইরে বসবাসের স্বপ্ন দেখে আসছে। এজন্য মানুষ পৃথিবীর বাইরে অনেকবার বিভিন্ন মিশনও করেছে। তবে তেমন কোনো আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি। সৌরজগতের মধ্যে কিংবা বাইরে পৃথিবী ব্যতিত এখনো পর্যন্ত কোথাও মানুষের জন্য বসবাস যোগ্য জায়গার খোঁজ পায়নি বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে সৌরজগতের লাল গ্রহ মঙ্গল কিছুটা আশা দেখালেও তা পূরণ হতে অপেক্ষা করতে হবে বহু বছর। এজন্য বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের সাথে খোঁজ করছেন এর বিকল্প জায়গার। ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীদের আশাবাদী করে তুলেছে সৌরজগতের সবচেয়ে বৃহৎ গ্রহ বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা

মঙ্গলের পরেই সৌরজগতের পঞ্চম গ্রহ বৃহস্পতির অবস্থান। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত বৃহস্পতির ৭৯টি চাঁদের সন্ধান দিতে পেরেছেন। সেগুলোর মধ্যে ইউরোপা একটি। বিজ্ঞানীরা ইউরোপার ভূগর্ভস্থ মহাসাগরের উৎপত্তির রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছেন। এই বিষয় গুলো নিয়ে গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির এই চাঁদ নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা নিবন্ধ সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত ভূতাত্ত্বিক এক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে। গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা করেছেন।

বিজ্ঞানীরা বেশ আগে থেকেই এই ইউরোপাকে ঘিরে আশাবাদী ছিলেন। বরফের আস্তরণে ঢাকা ইউরোপার ভূগর্ভস্থ মহাসাগরকে এত দিন ভিনগ্রহবাসী বা এলিয়েনের দেশ বলে ধারণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী মহলে মঙ্গল ও শনির চাঁদ এনসেলাদুস নিয়েও একই রকম জল্পনা রয়েছে।

আকারে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের চেয়ে কিছুটা ছোট বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ইউরোপার ওই মহাসাগরটি প্রায় ৬৫ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে। এতে পানির পরিমাণ পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর ধারণকৃত পানির দ্বিগুণ পরিমাণও হতে পারে।

নতুন ওই গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে যে, ইউরোপার ওই ভূগর্ভস্থ মহাসাগরের উৎপত্তির রহস্য উদ্‌ঘাটনের পর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত  হয়েছেন যে সেখানে অতীতে অণুজীবের উপস্থিতিও ছিলো। বিশেষ করে ইউরোপার ওই মহাসাগরে এত বিপুল পরিমাণ পানির উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করে। গবেষণা পত্রে আরও বলা হয়েছে, ইউরোপার কেন্দ্রে থাকা তেজস্ক্রিয় উপাদানের ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট তাপের প্রভাবে একসময় ইউরোপার পানিসমৃদ্ধ ভূগর্ভস্থ উপাদানগুলো পানি ছেড়ে দিয়েছিল। আর সেই পানি দিয়েই তৈরি হয়েছে ইউরোপার সেই মহাসাগর। আর এই মহাসাগরের জলরাশিতে ঢেউ তৈরি হচ্ছে বৃহস্পতির সাথে ইউরোপার মধ্যকার মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে। এতে অবশ্য বৃহস্পতির দুটি বড় চাঁদ আইও ও গেনিমেডেরও প্রভাব অনেকটা লক্ষ করা যায়।

বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা নিয়ে এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির গবেষক মোহিত মেলওয়ানি দেসওয়ানি। মোহিত মেলওয়ানি বলেন, আমাদের ধারণা ইউরোপার ওই মহাসাগরটি আগে বাসযোগ্য ছিল। এর কারণ আমাদের কাছে যে মডেলটি রয়েছে সেটি অনুসারে মহাসাগরটি মৃদু অম্লীয়। মহাসাগরে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও কিছু সালফারের লবণও রয়েছে বলে জানা যায়। তিনি আরও বলেন যে,  এত বিপুল পরিমাণ তরল পানির উপস্থিতি বাসযোগ্যতা প্রমাণের প্রথম ধাপ বলে বিবেচিত।

Related Posts

14 Comments

মন্তব্য করুন