মজাদার এক গল্প পার্ট – ৩

“নেকলেস “
মূলঃ গী দ্যা মোপাসা
অনুবাদঃ পূর্ণেন্দু দস্তিদার

হঠাৎ সে কালাে স্যাটিনের একটি বাক্সে দেখল অপরূপ একখানা হীরার হার । অদম্য কামনায় তার বুক দুর দুর করে । সেটা তুলে নিতে গিয়ে তার হাত কাপে । সে তার পােশাকের উপর দিয়ে সেটা গলায় তুলে নেয় এবং সেগুলাে দেখে আনন্দে বিহ্বল হয়ে যায় । তারপর উদ্বেগভরা , ইতস্ততভাবে সে জিজ্ঞাসা করল : ‘ তুমি ঐখানা আমায় ধার দেবে ? শুধু এটা ? ” ‘ কেন দেব না ? নিশ্চয়ই দেব । ‘ সে সবেগে তার বান্ধবীর গলা জড়িয়ে ধরে , পরম আবেগে তাকে বুকে চেপে ধরে । তারপর তার সম্পদ নিয়ে । সে চলে আসে । ‘ বল ‘ নাচের দিন এসে গেল । মাদাম ললাইসেলের জয়জয়কার । সে ছিল সবচেয়ে সুন্দরী , সুরুচিময়ী , সুদর্শনা , হাস্যময়ী ও আনন্দপূর্ণ । সব পুরুষ তাকে লক্ষ করছিল , তার নাম জিজ্ঞাসা করে তার সঙ্গে আলাপের আগ্রহ প্রকাশ করছিল । মন্ত্রিসভার সব সদস্যের তার সঙ্গে ‘ ওয়ালটজ ’ নৃত্য করতে ইচ্ছা হচ্ছিল । স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী তার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন । আনন্দে মত্ত হয়ে আবেগ ও উৎসাহ নিয়ে সে নৃত্য করছিল । তার রূপের বিজয়গর্বে , সাফল্যের গৌরবে সে আর কিছুই ভাবে না । এক আনন্দের মেঘের ওপর দিয়ে যেন ভেসে আসছিল এই সব আহুতি ও মুগ্ধতা আর জাগ্রত সব কামনা । যে কোনাে মেয়ের অন্তরে এই পরিপূর্ণ বিজয় কুত মধুর ! ভাের চারটার দিকে সে বাড়ি ফিরে গেল । অন্য সেই তিনজন ভদ্রলােকের স্ত্রী খুব বেশি ফুর্তিতে মত্ত ছিল , তাদের সঙ্গে তার স্বামী ছােট একটি বিশ্রামকক্ষে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত আধঘুমে বসেছিল । বাড়ি ফিরবার পথে গায়ে জড়াবার জন্য তারা যে আটপৌরে সাধারণ চাদর নিয়ে এসেছিল সে তার কাঁধের ওপর সেটি ছড়িয়ে দেয় । বল ‘ নাচের পােশাকে অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে ঐটির দারিদ্র্য সুপরিস্ফুট হয়ে উঠছিল । মেয়েটি তা অনুভব করতে পারে তাই অন্য যেসব ধনী মেয়ে দামি পশমি চাদর দিয়ে গা ঢেকেছিল তাদের চোখে ।না পড়বার জন্য সে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যেতে লাগল ।

লােইসেল তাকে টেনে ধরে বলল । ‘ থামাে , তােমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে এখানে । আমি একখানা গাড়ি ডেকে আনি । কিয় মেয়েটি কোনাে কথায় কান না দিয়ে তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে নামতে থাকে । রাস্তায় যখন তারা পােছে গেল । সেখানে কোনাে গাড়ি পাওয়া গেল না । তারা গাড়ির খোজ করতে করতে দূরে কোনাে একখানাকে দেখে তার । গাড়ােয়ানকে ডাকতে থাকে । হতাশ হয়ে কাপতে কাপতে তারা সিন নদীর দিকে হাঁটতে থাকে । শেষ পর্যন্ত যে পুরাতন একখানা তারা পায় । তাহলাে সেই নিশাচর দুই – যাত্রীর গাড়ি যা প্যারিতে সন্ধ্যার পর লােকের চোখে পড়ে , তার একখানা , যেহাদিনে । এইগুলি নিজের দুর্দশা দেখাতে লজ্জা পায় । ঐ খানি তাদের মার্টার স্ট্রিটে ঘরের দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেল । তারা ক্লান্তভাবে তাদের কক্ষে গেল । মেয়েটির সব কাজ শেষ । কি স্বামীর ব্যাপারে , তার মনে পড়ল যে দশটায় তাকে আপিসে গিয়ে পৌঁছাতে হবে । । নিজেকে গৌরবমণ্ডিত রূপে শেষ একবার দেখার জন্য সে আয়নার সামনে গিয়ে তার গলার চাদরখানা খােলে । । হঠাৎ সে আর্তনাদ করে উঠল । তার হারখানা গলায় জড়ানাে নেই । তার স্বামীর পােশাক তখন অর্ধেক মাত্র খােলা হয়েছে । সে জিজ্ঞাসা করল । “ কী হয়েছে ? ‘ উত্তেজিতভাবে মেয়েটি তার দিকে ফিরে বলল । আমার – আমার কাছে – মাদাম ফোরস্টিয়ারের হারখানা নেই । ‘ আতঙ্কিতভাবে সে উঠে দাঁড়াল : ‘ কী বললে তা কী করে হবে ? এটা সম্ভব নয় । ‘ পােশাকের ও বহির্বাসের ভাজের মধ্যে , পকেটে , সব জায়গায় তারা খোঁজ করে । কিন্তু তা পাওয়া গেল না । স্বামী জিজ্ঞাসা করল : “ ঐ বাড়ি থেকে চলে আসবার সময় তা যে তােমার গলায় ছিল , তােমার ঠিক মনে আছে ? ”

চলবে….

Related Posts

7 Comments

মন্তব্য করুন