মধ্যে ভিত্তের বা নিম্ন আয়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করবেন কিভাবে??

হ্যা, আমি একজন মধ্যেভিত্তের পরিবারের সন্তান। আমি আমার বাস্তবতার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনিও পারবেন আপনার নিজের শখ, পিতামাতার জন্য এবং পরিবারের জন্য সকল স্বপ্ন পূরণ করতে। এখন বলতে পারেন এত নিম্ন আয়ের মানুষ হয়ে কিভাবে এটা সম্ভব?? যেখানে সকলের স্বপ্নই অনেক বড় হয়। অবস্যই সম্ভব।

আপনি ঘরে বসে থাকবেন অথবা আপনি যদি এটা মনে করেন যে আমার বয়স যখন ৩০/৩৫ হবে তখন আমি বড় কোন কাজ করে টাকা জমিয়ে নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করবেন তাহলে সেটাই সব থেকে বড় ভুল হবে আপনার। পৃথিবীতে এমন কোন মানুষই সফলতার শীর্ষে উঠেনি যে পরিশ্রমের সঠিক সময় জানেনা। আপনাকে আগে জানতে হবে পরিশ্রমের সঠিক সময়। কারণ পৃথিবীতে এটা তো সবাই জানে যে পরিশ্রম ছাড়া কোন মানুষ উপরে উঠতে পারবে না বা তার কোন শখ পূরণ করতে পারবে না।

আবার অনেকে কি করে, ৩০/৩৫ বছর বয়সে অর্থ উপার্জন শুরু করে , ৫/৭ বছর লেগে যায় মানুষ চিনতে, কিভাবে কাজ করলে, কিভাবে সঞ্চয় করলে, কোন মানুষকে বিশ্বাস করলে , কোন প্রোডাক্ট বেশি বেচাকেনা হয়, কোন জায়গায় ইনভেস্ট করলে ভাল ব্যবসা বা অর্থ উপার্জন করা যায়, কোন বিপদে কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে, কি কি বেকআপ থাকতে হবে এসব নানাবিধ বিষয় জানতে প্রতিটি মানুষ ৫/৭ বছর লাগিয়ে দেয়। শেষে দেখা যায়, এই ৫/৭ বছর পর অর্থ উপার্জন তো শিখে যায় কিন্তু নিজের শখ পূরণ করার যে বয়স সেটি আর নেই। তাহলে এখন বিষয় হয়, তাহলে কোন সময় শখ পূরণের জন্য বা নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে। যদি আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি………..

তাহলে বলব, যখন আপনি এসএসসি পরীক্ষা দিলেন, তখন আপনার বয়স হয় ১৬/১৮। আর এটাই সঠিক সময় পরিশ্রম শুরু করা। তাহলে কি পড়ালেকা বাদ দিবেন?? অবশ্যই না। আমি মনে করি যারা একান্তই পরিশ্রমী, এবং পড়ালেখায় ধীর আগ্রহী তারা পরিশ্রমের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন। কারণ আমরা মধ্যেভিত্তের পরিবারের ছেলে। আমাদের বাপ দাদার কারিগাড়ি টাকা পয়সা থাকবে না যে আমরা সেসব অর্থ দিয়ে সরাসরি নিজের স্বপ্নের উপর কাজ শুরু করব।

এখন আসি মুল আলোচনায়…………………মধ্যে ভিত্তের বা নিম্ন আয়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করবেন কিভাবে??

যেখানে আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষের নুন আনতে পান্ত ফুরায় সেখানে কিভাবে আমরা কাজ করব?? আমার পরিবারের দিক দিয়ে বলি, আমার বাবা একজন দারোয়ান,মা এখন ব্যচলদের বাসায় বাসায় রান্না করেন। তার মানে আমার আর্থিক অবস্থাও আপনাদের মতই। অথচ আমি এখন তাদের সুখের জন্য অনেক কিছুই করে দিয়েছি। গ্রামে শষ্যের জায়গা, পুকুরের জায়গা, বাড়ির জায়গা, বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ, মটর কল ইত্যাদি তাদের জন্য গড়ে দিয়েছি।  নিজেই বোনের বিয়ে দিচ্ছি, সাথে নিজের জন্য যখন যা মনে চাচ্ছে তাই করতে পারি।

আমার বর্তমান বয়স ২৩+। আমি পরিশ্রম শুরু করেছি এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর থেকে। তখন বয়স ছিল ১৬ কি ১৭ বছর। মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি। সেই টাকাও নিজের একটু জমি বন্ধক রেখে। ২০১৫ সালে জুলাই মাসে ব্যবসা শুরু করি। এখন এত বড় ব্যবসায়ি তো হয়নি তবে নিজের সুখের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু করতে পেরেছি। সেই ৫০ হাজার টাকার ব্যবসা এখন ৮ লক্ষ টাকায় পৌছেছে, সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৫০+ টাকা থাকে।যত ঋণ করেছিলাম সব পরিশোধ করেছি। এই অল্প বয়সে সবাই যখন নানা রকম ভ্রমণ আর খেলাধুলায় ব্যস্ত তখন আমি নানা রকম ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতেছি।

যত প্রকার পরিশ্রম করা যায় শুরু করেছি। যেভাবে টাকা বাচানো যায় সেইভাবে কাজ করেছি। যেমন মনে করেন, নিজের দোকানের রং করা, কাঠমিস্ত্রির কাজ করা, ইলেক্ট্রিক কাজ করা এসব নিজ হাতে করেছি। যেমনই হোক যেভাবে পেরেছি২/১ হাজার টাকা সব সময় বাচানোর চেষ্টা করেছি। এত কিছুর পরেও কিছু মানুষকে বিশ্বাস করে এই ৭ বছরে ১৪ লক্ষ টাকা মার খেয়েছি। তবুও টিকে আছি। এখন মানুষ চিনতে শিখেছি। কিভাবে কার সাথে লেনদেন করতে হবে তা অর্জন করেছি। দুনিয়াতে বেঈমান মানুষের অভাব নেই। কে কোন রূপে আপনার ক্ষতি করবে তা আপনি নিজেও জানবেননা। এইসব শিখতেই আমাদের অনেকটা সময় প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

এখন বলতে পারেন আমরা তো এমন সুযোগ সুবিধা নেই তাহলে আমরা কিভাবে সফল হব?? মনে রাখবেন, পৃথিবীতে কোন কাজই ছোট নয়। আপনি যদি চারদিকে লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন আপনার চতুর্পাশ্বে কাজের কোনো অভাব নেই। হোক তা যত ছোট। যে কাজ করে আপনার বাজ্যিক খরচ বাদ দিয়ে কিছু সঞ্চয় করতে পারবেন সেটাই আপনাকে শুরু করতে হবে। হতে পারে তা রাজজোগালি, গাড়ি গ্যারেজের কাজ কিংবা রিক্সা চালানোর কাজ।

অথবা কোন শপে পিওনের কাজ , লেবারের কাজ। আপনি আপনার পড়ালেখার পাশাপাশি যদি এসব কাজ করে মাসে ১২/১৫ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারেন. তার মধ্যে যদি ৭/৮ হাজার টাকা প্রতি মাসে সঞ্চয় করতে পারেন তবে এক বছরের মাঝে আপনি যেকোনো একটি বড় কাজ শুরু করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। আমি শুধু ঐ পঞ্চাশ হাজার টাকার উপরই নির্ভর ছিলাম না, পাশে ইলেক্ট্রিক কাজ করেছি, টিউশনি করিয়েছি। যা দিয়ে আমার শপের বাড়তি যে খরচগুলো ছিল তা পূরণ করতাম। এতে করে মাস শেষে দোকানের ভাড়ার টাকা, ইলেক্ট্রিক বিল এসবের জন্য চিন্তা করতে হতো না।

যে বয়সে সবাই নিজ আনন্দে উল্লাসে ব্যস্ত ছিল/আছে তাদের সেই বয়সে আমি পরিশ্রম করতে ব্যস্ত। তারা যখন পার্টি করতো,নানা যায়গায় ভ্রমণ করতে যেত তখন সেসব করতে মন চাইতো। হয়তো তারা চিন্তা করতো এসব করার বয়স তো এখনোই। কিন্তু আমি মনে করতাম এসব করার বয়স এখন নয়। এভাবেই নিজেকে ধৈর্য্যের সাথে বন্ধি রাখতাম। তাদের চিন্তা হল যখন ২৮/৩০ বছর বয়স হবে তখন পরিশ্রম শুরু করবো।

অথচ তাদের মাথায় এটা কখনোই কাজ করেনি যে, মানুষ চাইলেই সফল হয়ে যায় না, পরিশ্রমের পাশাপাশি অনেক সময়েরও প্রয়োজন হয়। তাই আমি অতি অল্প সময়েই পরিশ্রম করা শুরু করেছি। আজ আমি একজন মোটামোটি লেভেলের ব্যবসায়ী। যারা আমার সময়ে মজা মাস্তি করতে ব্যস্ত ছিল আজ তারাই নানা রকম সাহায্যের জন্য আমার কাছে আসে। যেখানে আমার পকেটে ৫ টাকা থাকত না সেখানে আজ আমি তাদের ১০/২০/৩০ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করি। এখন আমি চাইলেই যেকোন জায়গায় নিজের পরিবার নিয়ে ঘুরাফেরা করতে পারি, আমার বয়স তো মাত্র ২৩+, কিন্তু যারা ৩০/৩৫ এ এসে পরিশ্রম শুরু করবে তারা সফলতার পিছনে দৌড়াবে নাকি বিয়ে করে পরিবারের পিছনে দৌড়াবে।   

এরাই এক সময় নানারকম ঋণ করে মানুষের ধারে ধারে ঘুরে। আর চিন্তা করে যদি ঐ সময় এভাবে সময় অপচয় না করতাম তবে হয়ত আজ পরিশ্রম করার আর কিছু সময় পেতাম। এসময় এসে তারা নিজেও কিছু করতে পারে না আর নিজের পরিবারের ভবিষ্যত উজ্জল করার জন্য তারা কিছু করত পারে না। এটাই বাস্তবতা ।মানুষ কখনোই জীবনের শেষান্তে এসে অত পরিশ্রম করতে পারে না যত পরিশ্রম সে যৌবনে করতে পারবে। মানুষের বয়স যত বৃদ্ধি পাবে তত তার শরীরের শক্তি,ক্ষমতা, বুদ্ধি/জ্ঞান লোপ পেতে থাকবে। অথচ এই সময়টাতেই আপনার আরাম আয়েশের প্রয়োজন হয়। এখন আপনি চিন্তা করবেন কোন সময় থেকে আর কিভাবে আপনি পরিশ্রম শুরু করবেন আর কোন সময় এসে আনন্দ উল্লাস করবেন।

একসময় ছোট ছোট কাজ করতাম বলে বন্ধু বান্ধ, আত্মীয় স্বজন উপহাস করে নানা রকম কথা শুনাতো। আজ তারাই তাদের ও তাদের ছেলেমেয়ের না রকম বিপদে আমাকে খুজে। মানুষের লক্ষ্য হতে হবে মানুষ আপনার নয় আপনি মানুষের প্রয়োজন হয়ে দাড়াবেন। এর জন্য যা যা করার তাই আপনাকে করতে হবে। মনে রাখতে হবে লোহাকে অনেক গরম, উত্তপ্ত ও আঘাত করা হয় কেবল তার নানা রকম সুন্দর রূপ দেবার জন্য।

Related Posts

4 Comments

মন্তব্য করুন