মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে খুলনাঞ্চলে মাঠে রয়েছে র‌্যাব-পুলিশ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সভা-সমাবেশ আর সেমিনারের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে র‌্যাব-পুলিশ।
কিছুদিন ধরে খুলনাঞ্চলে মাদকের বড় বড় যেসব চালান আটক বা উদ্ধার হয়েছে তার প্রায় সবগুলো সফলতাই র‌্যাব বা পুলিশের। পক্ষান্তরে যাদের এ কাজে বেশি সফলতা দেখানোর কথা সেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকান্ডে যেন ভাটা পড়েছে। গত পরশু বৃহস্পতিবার মাদকবিরোধী গণসচেতনতামূলক সভা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
যখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর শুধু সভা-সেমিনারের মধ্যে সীমাবদ্ধ তখনই গতকাল শুক্রবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানা পুলিশ নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকা থেকে উদ্ধার করে প্রায় আট হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান। এসময় ওই ইয়াবা বহনকারী রিপন ইসলাম(১৮)কে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগেও কয়েকটি ইয়াবা, মাদকদ্রব্য ও বিয়ারের চালান আটক করে খুলনাসহ কেএমপির অন্যান্য থানা পুলিশ। হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতারে সফলতা, মাদকবিরোধী অভিযান ও কিশোর অপরাধী দমনে পিছিয়ে নেই খুলনা জেলা পুলিশও। এছাড়া বৃহস্পতিবার খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক পর্যালোচনা সভায় উল্লেখ করা হয়, বিগত এক মাসে রেঞ্জের ১০ জেলায় এক কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫ টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে পুলিশ। যা’ আগের মাসের(আগষ্ট) তুলনায় প্রায় ৪৩ লাখ টাকা বেশি। খুলনাসহ র‌্যাব-৬এর আওতাধীন এলাকাগুলো থেকেও প্রতিনিয়ত আসছে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের খবর। কিন্তু সে তুলনায় পিছিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
অবশ্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সফলতার কথা তুলে ধরে অধিদপ্তরের খুলনা অফিসের উপ-পরিচালক মো: রাশেদুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর দক্ষিণ টুটপাড়া থেকে মাজেদা বেগম(৪০) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে ১০ গ্রাম গাঁজাসহ উদ্ধার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৫ দিনের কারাদ-াদেশ দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: ইমরান খান এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। সীমিত লোকবলের মধ্যে যেটুকু সম্ভব সেভাবেই তাদের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে বলেও তিনি জানান।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মিডিয়া এন্ড পিআর শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আসলাম বাহার বুলবুলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গতকাল শুক্রবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার এক নম্বর রোডের দিঘির পাড় থেকে রিপন ইসলাম(১৮) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে সাত হাজার ৭৯৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। অভিযানে এসআই বিএম মনিরুজ্জামান, এসআই মো: সাইদুর রহমান, এএসআই কাজল কুমার দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা থানার ওসি আসলাম বাহার বুলবুল বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিপন ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানে অবস্থায় উল্লিখিত ইয়াবা পাওয়া যায়। কক্সবাজার থেকে হয়ত ওই ইয়াবার চালান বাসযোগে খুলনায় আনা হতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন। যা’ পরবর্তীতে তদন্তে বের হবে বলে আশা করছেন তিনি। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে খুলনা থানায় একটি মামলা হয়েছে বলেও ওসি জানান।
গ্রেফতারকৃত রিপন ইসলাম খুলনা জেলার কয়রার মহারাজাপুর বড় ব্রীজের পাশের জনৈক আকবর ইসলামের ছেলে। রিপন ইসলাম টুটপাড়া কবরস্থান রোডের জনৈক রিফাতের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
এর আগেও গত ১৩ অক্টোবর নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৪০ বোতল বিভিন্ন প্রকার বিদেশী বিয়ার এবং নগদ ৪০ হাজার ২শ’ টাকা উদ্ধার করে খুলনা থানা পুলিশ। এসময় জিকো রায় নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিন আগের রাতে কেএমপির লবনচরা থানা পুলিশের একটি দল সাচিবুনিয়া বিশ্বরোড মোড়স্থ আলোক ভবনের সামনে পাকা রাস্তার উপর অভিযান চালিয়ে একটি প্রাইভেট কারে তল্লাশী করে পাঁচ ক্যান বেলজিয়ান বিয়ার, এক বোতল হুইস্কি ও এক বোতল মদ উদ্ধার করে। এসময় উক্ত গাড়ি চালক লবণচরা থানাধীন সাচিবুনিয়ার আইউব উদ্দীন মুন্সীর ছেলে আউয়াল উদ্দীন(৩৮)কে গ্রেফতার করা হয়। খুলনা ও লবনচরা থানা এলাকার এ দু’টি ঘটনায়ই উক্ত দু’জনসহ কথিত মাদক স¤্রাট মো: শাহজাহান হাওলাদারকে আসামী করে মামলা দায়ের হয়। তারও আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর সাড়ে তিন হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে খুলনা থানা পুলিশ। কিন্তু সে তুলনায় অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
তবে গত ৮, ৯ ও ১০ অক্টোবর খুলনায় মদ পানে নয় জনের মৃত্যুর ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তদন্তে মূল রহস্য বের হয়ে আসছে উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার খুলনা থানায় মামলা দায়ের করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অমল দাস(২৬) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

Related Posts