মানব মনের পরিসীমা :: পর্ব-০২ (শেষ)

ঘটনা-০৩: নাবিল ক্লাস সেভেনে পড়ে। তার রোল ৩। তাদের ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে এক মেয়ে যার নাম নাবিলা  এবং দ্বিতীয় হয়েছে তমাল। মেয়েটি পড়াশুনায় যেমন মেধাবী, দেখতেও ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী, এমনকি প্রতিষ্ঠানের সকল মেয়ের চাইতেও। নাবিল চিন্তা করে, তার নামের সাথে নাবিলার নামের কতই না মিল! ক্লাসের সকল ছেলের মতো নাবিলও তাকে মনে মনে ভালোবাসে। কিন্তু সে তা প্রকাশ করার সাহস পায় না।

কিভাবে পাবে? না তার চেহারা ভালো আর না পড়াশুনায় এগিয়ে। তাছাড়া নাবিলা তো তাকে পাত্তাই দেয়না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল তাকে ক্লাসের ফার্স্টবয় হতেই হবে। নইলে নাবিলাকে তার মনের কথা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সে এবছর প্রচুর পড়াশুনা শরু করলো। তার পড়াশুনার গতি এবং ক্লাসের এক্টিভিটি দেখে নাবিলাসহ সকলেই অবাক। এমনকি টিচারগণও ইদানিং তাকে গুরুত্ব দেওয়া শরু করে দিয়েছে।

তারপর যখন ক্লাস এইটে উঠলো তখন সে হয়ে গেলো ক্লাসের ফার্স্টবয়। তখন সে নাবিলাকে দেখতে পেলো অন্য এক ভঙ্গিতে। যেই নাবিলা তাকে পাত্তাই দিত না সেই নাবিলা এখন কেমন যেন তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। নাবিলার এই অবস্থা দেখে নাবিল বুঝে গেলো এটাই সুযোগ নাবিলাকে প্রোপোজ করার। একদিন নাবিল তার মনের কথাটা নাবিলাকে বলে দিল। তখন নাবিলাও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো। তখন নাবিল মনে মনে মহা আনন্দিত হল এই ভেবে যে, প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি অবশেষে তার সাথে সম্পর্ক করতে রাজি হয়েছে।

ঘটনা-০৪: এখন নাবিল ইন্টারমিডিয়েটে অধ্যয়নরত। দশম পর্যন্ত নাবিলার সাথে তার ভালই সম্পর্ক জমে উঠেছিল। কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে ইন্টারমিডিয়েটে দুইজনকে ভিন্ন ভিন্ন ভর্তি হতে হয়েছে। কিছুদিন ফোনে কথাবার্তা ভালোই চলল। কিন্তু নাবিল ইদানিং লক্ষ করছে, নাবিলা তাকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না। এটা নিয়ে নাবিলার সাথে মাঝে মাঝে ঝগড়াও বেধে যাচ্ছে। নাবিল তখন চিন্তা করলো নাবিলা অন্য কারও সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে কি না? যেহেতু নাবিলা দেখতে খুবই সুন্দরী তাই যে কেউ তার প্রেমে পড়তেই পারে। এই চিন্তা করে নাবিল তার বন্ধুদেরকে লাগিয়ে দিল এর অনুসন্ধানে। অনুসন্ধানে দেখাগেলো নাবিলা তাদের কলেজের ফার্স্টবয়ের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েছে। কারণ সে নাবিলেরও চেয়েও মেধাবী এবং দেখতেও খুব স্মার্ট। তাই নাবিলা এখন নাবিলকে আর পাত্তা দিচ্ছে না।

উপসংহারঃ উপরোক্ত ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে বলা যায়, মানুষের মনের সন্তুষ্টি তার সামর্থ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যেই ফাহিম নিজেকে একসময় গরীব মনে করতো, তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কারণে সে একসময় নিজেকে ধনী ভাবতে শুরু করেছে। অপরদিকে নাবিল একসময় পিছিয়ে থাকার কারণে উপেক্ষিত হলেও পরবর্তীতে তার মেধার কারণে নাবিলার মন জয় করতে পেরেছিল।

এমনকি এই একই পরিবেশে তাদের দুইজনকে আজীবন রাখা গেলে দুজনেই একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকতো। কিন্তু নাবিলা যখন দেখতে পেল নাবিলের চেয়েও মেধাবী এবং স্মার্টবয় আছে এবং সে তার সাথে সম্পর্ক করতে চায়, তখন থেকে সে নাবিলকে উপেক্ষা করতে থাকলো। তাই বলা যায় সামর্থের মধ্যে সেরাটা পেলেই মানুষের মন তৃপ্ত হয়। তবে অল্পেতুষ্ট মানুষেরা নিজেদের স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যেই তৃপ্ত থেকে সুখ অনুভব করতে পারে। কারণ সুখ থাকে মনে, সম্পদ বা পারিপার্শ্বিকতা শুধুই উপলব্দির কারণ মাত্র।

Related Posts

15 Comments

মন্তব্য করুন