মানব জীবন একটি গতিমান যানবাহন। যে যানবাহনের কার্যপ্রণালী অত্যন্ত জটিল ও দূর্বদ্ধ। কারণ আজও পর্যন্ত এই মানব যানবাহনের স্বীয় চালিকা শক্তির দৃশ্যমান উৎস উৎঘাটিত হয় নি। এজন্যই একজন মানুষের ক্রিয়াকর্ম অন্য মানুষের কাছে দৃশ্যমান হয়ে ধরা পড়ে না। আজ আমি আপনাদের কে মানুষের গতিমান জীবনের রহস্য ও গতি মানবদের বৈশিষ্ট্য গুলো তুলে ধরার সর্বাত্বক চেষ্টা করবো।
যে সব মানুষ তার স্বীয় মানবিক বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্যুত হয়ে নিজের ভেতর যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে এই আর্টিকেলে তাদেরকে আমি “গতিমান মানবযন্ত্র” হিসেবে অবিহিত করেছি। অধিকাংশ মানুষ আজ স্বীয় মানবিক বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে নিজেকে গতিমান মানব যন্ত্রে পরিবর্তন করেছে। আধুনিকতার আকর্ষণীয় ছোঁয়া অধিকাংশ মানুষকে মানবিক অবক্ষয় বা নৈতিকতা বহির্ভূত জীবনের নিন্দনীয় স্বাদ এনে দিয়েছে। আকর্ষণীয় এই আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রপাতির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও অশোভনীয় প্রয়োগ মানব জীবনকে অশুভ গতিমানবে পরিণত করেছে।
এমন একদিন ছিলো মানুষ তার জীবনের প্রকৃত স্বাদ স্বীয় কর্ম সঠিকভাবে স্বহস্তে বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্জন করেছে। পাশাপাপাশি মানবিক তৃপ্তি লাভ করেছে। আর এখন মানুষ তার ছোট থেকে ছোট কাজ করতেই বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মুখাপেক্ষী হচ্ছে ও মানবীয় বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্যুত হয়ে উক্ত কাজের সুমিষ্ট তৃপ্ত অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন কিছু কাজ যেমন লেখাপড়া, যেটা করতে হবে পাঠ্যপুস্তকে, মোবাইলে নয়।এখন অনেক শিক্ষার্থী নিজের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া মোবাইলে বা স্মার্টফোন ব্যবহার করে সম্পূর্ণ করতে চাই বা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভুক্তভোগী স্মার্টফোনী পাঠককে নিরপেক্ষ বিচার বিশ্লেষন করে দয়া করে আমাকে বলুন তো এতে আপনার লেখাপড়ার পূর্ণতা অর্জিত হয়?
জানি সবাই বলবেন না, কারণ মোবাইল দিয়ে পড়ালেখা করলে আপনি হবেন মোবাইল প্রেমী, বই প্রেমী নয়। শিক্ষা জীবনের পূর্ণতা মোবাইল বা স্মার্টফোনে নয়, বরং পাঠ্যপুস্তকে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকের সাথে সম্পর্ক না রেখে যান্ত্রিক উপায়ে তাদের অপূর্ণ লেখাপড়াকে চালিয়ে নিতে গিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কারণ মোবাইলে নিজস্ব লেখাপড়া ছাড়াও আরো অনেক কিছুর কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। যখন ঐ একই মোবাইল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে যাবেন তখনই লেখাপড়া নামক কার্যক্রমটি অন্যান্য কার্যক্রম এর ভিড়ে হারিয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনি মোবাইল প্রেমিক হতে পারেন কিন্তু পাঠ্যপুস্তক প্রেমে হতে পারবেন না। এটি একটি উদাহরণ দিলাম ও প্রমাণিত হলো যে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যান্ত্রিক জীবনে পরিবর্তিত হচ্ছে।
অনুরূপভাবে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করলে আমরা এটি দেখতে পাই যে, এক মাইল বা দুই মাইল দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য এই সভ্য সমাজের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম সেরা উপহার যানবাহন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। পায়ে না হেঁটে উক্ত স্থান অতিক্রম করে অথচ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে পায়ে হাঁটা বা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ রাখা যায়। বিষয়টা আমরা অনেকে আন্তরিকতার সাথে মেনে চলতে পারি না বরং যান্ত্রিক উপায়ে আমাদের দূরত্ব গমনের সমস্যার সমাধান করে থাকি। এর দ্বারা নিজেরা শারীরিকভাবে অনেক বড় ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয় সেটা আমরা চিন্তা করি না। তারই প্রতিচ্ছবি আজকের সমাজে অহরহ দেখা যায়।
এমন একদিন ছিল মানুষের ডায়েবেটিস, হাইপারটেনশন হার্ট ডিজিজ, ব্রেন স্ট্রোক, লিভার ডিজিজ, কিডনি ডিজিস এই সমস্ত ডিজিজ এর সাথে মানুষের পরিচিত ছিল না। কিন্তু এই ধরনের রোগী এখন আমাদের সমাজে অহরহ অভাব নেই। এর একটাই কারণ আমরা আমাদের আলোসতা কে প্রাধান্য দিয়ে যান্ত্রিক উপায়ে জীবন করছি। কায়িক পরিশ্রম না করার জন্য, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম না করার জন্য আমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছি। তাহলে এই উদাহরণের মাধ্যমেও প্রমাণিত হলো যে আমাদের জীবন মানবিক বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তিত হয়েছে এবং আমরা গতিমান মানবে পরিণত হয়ে যাচ্ছি।
সর্বশেষ আরো একটি উদাহরণ দিয়ে এই আর্টিকেলটি লেখা শেষ করবো।
মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিচেক্ষণতা বৃদ্ধি পায় অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। এখন মানুষ অধ্যাবসায়ের মাধ্যম হিসেবে অনলাইন জগতের মতো রঙিন জগত কে পছন্দ করে বেছে নিয়েছে। অথচ কোনো একদিন এই মানুষ অধ্যাবসায়ের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক, বড়দের শরণাপন্ন হওয়া, পরামর্শ করা, ট্রেনিং করা সহ বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করত। কিন্তু এই বর্তমান মানুষ তাদের মস্তিষ্কের অধ্যাবসায় কাজে না লাগিয়ে অনলাইন জগত কে পঙ্গপালের মত রঙিন জগত হিসেবে বেচে নিয়ে নিজেকে রঙিন জগতের অধিবাসী হিসেবে নিযুক্ত করেছে। এর দ্বারা তার নৈতিক,আর্থিক, শারীরিক, অবক্ষয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবনতি ঘটছে। আমাদের রীতিনীতি, আন্তরিকতা বিনষ্ট হয়ে মস্তিষ্কের সুস্থ গঠন বিকৃত হয়ে অসুস্থ গঠনে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। অসুস্থ সাংস্কৃতিক মস্তিষ্ক তৈরি হওয়ার দ্বারা ব্যক্তিগত, সামাজিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে আমাদের চরিত্রের অবক্ষয় চরম পর্যায়ে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।
আসুন নিজেদের জীবনকে যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্যুত করে মানবীয় বৈশিষ্ট্যে ফিরিয়ে আনি তাহলে আমরা আমাদের সম্পাদিত কাজে মানবিক তৃপ্তি লাভ করতে সক্ষম হবো। আর তখনই আমাদের মানব যানবাহনে ” জানের ” অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে।
( ইদ্রিস আলী )
Wow
Nice
Thank you
Nice
Right
Right
nice
দারুণ
Nice
nice
Nice
nice post
নতুন জানলাম
ok