মা ও তার ছেলে

                        মা ও তার ছেলে

#মা তোমার ছেলে আজ বড় হয়ে গেছে

৮ বছরের শিশুটির নাম আরিফ। মা-বাবার সবচেয়ে আদরের একমাত্র সন্তান..। সেই ছোট্ট ছেলেটা একদিন তার মাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো সামনে তো আমার জন্মদিন তুমি আমাকে কি উপহার দিবে….?

তার মা তাকে বলবো আমার বাবাকে একটা সবচেয়ে সুন্দর আর দামি একটা উপহার দিবো আমার ছোট্ট সোনাটাকে। তখন সেই ছোট্ট ছেলেটা বলে আমার সবচেয়ে ভালো আর সুন্দর মা। তার মা বলবো হে আমার সোনা পাখিটা ……

কয়েক দিন পর হঠাৎ করে সেই ছোট্ট ছেলেটা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে । তখন তার মা -বাবা খুব চিন্তায় পড়ে যায়। কারণ অনেক ডাক্তার দেখানো হচ্ছে কিন্তু তার অবস্থা কোনো মতে ভালো হচ্ছে না। আর তার মা তার পাশে বসে সারা রাত মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে….।

কিছু দিন যাবার পর একজন ভালো চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করা হয়। আর তাকে অনেকেগুলো পরীক্ষা করানো হয়। তার পর ডাক্তার বলবো আরিফের দুইটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে তাকে আর বাঁচানো যাবে না। যদি তাকে কেউ কিডনি না দেওয়া হয়। তখন তার মা বললো না আমি বেঁচে থাকতে আমার সোনাকে মরতে দিবো না ডাক্তার আমার ছেলের কিডনির বদলে আমার কিডনি টা নিয়ে নেন।

ডাক্তার বলে তাহলে আপনি বাচবেন কি করে আমার বাঁচা দিয়ে কি করবো আমার বয়স হয়ে গেছে আমি আর কত দিন বাঁচববো আমার সোনা বয়স অনকে কম তার সারা জীবন সামনে পড়ে আছে । আমার থেকে আমার সোনাটার বাঁচা বেশি জরুরি। ডাক্তার না করবেন না। অবশেষে ডাক্তার অপারেশন করতে রাজি হলেন…।

আমার ছেলে আমার কাছে একটা আবদার করেছিলো। মা তুমি আমাকে আমার জন্ম দিনে তুমি আমাকে কি উপহার দিবে। আমি না আমার সোনাটার জন্য আমার জীবনটা উপহার হিসেবে দিয়ে দিলাম ।

পরের দিন শএুবার তার মা জুম্মা নামাজ আদায় করে বলে আল্লাহ তুমি আমার জীবনের বিনিময়ের আমার ছোট্ট ছেলেটার জীবন বাঁচিয়ে দাও আর তুমি ওরে সুস্থ করে দাও। অপারেশন করানো কথা ছিলো শনিবারে..

পরের তার অপারেশন করানো হয় আর সেই আপারেশনে তার ছেলের জন্য তার দুইটি কিডনি তার ছেলেকে দান করে দিয়ে তার জীবনে বলি দিয়ে দেয়। আর কয়েক দিন পরে আরিফ সুস্থ হয়ে ওঠে।

আর তার মা তাকে কিডনি দিয়েছে যে এই বিষটা গুপন রাখতে বলা হয়। আর সেই ছোট্ট ছেলেটা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো মা তুমি কাদছো কেনো মা। তার মা বলে বাবা তুমি যে সুস্থ হয়ে গেছো সেই খুশিতে কাঁদছি। না মা আর কেঁদো না আমি তো ভালো হয়ে গেছি….।

আর তার মা জানতো সে আর বেশি দিন বাঁচবে না। সেই ভাবনায় সে আর তার ছেলেকে আর দেখতে পারবে না। সে বলে বাবা আমি যদি তোমার কাছে আর কোন দিন না থাকি তাহলে তুমি কি করবা.? ছেলেটা বলে আমি জানি তুমি আমাকে ছেড়ে তুমি কোথাও যাবে না। কি বলো যাবে.? মা তাকে ভুলানোর জন্য বলে আমার বাবাকে রেখে আমি কোথাও যাবো না…….।

এই বলে সে তার সন্তান কে চুমু দিয়ে তাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু পরের দিন আরিফ আগে উঠে গেছে কিন্তু তার মা আর জানি কেনো উঠে না সে কতো বার মা মা বলে ডাকছে কিন্তু কোনো উওর আসছে না

কিছু ক্ষণের মধ্যে সারা বাড়িতে সারা পড়ে গেলো আর তার মাকে বাহিরে শুয়ে রাখা হলো। সেই ছোট্ট ছেলেটা পাশে বসে কাঁদছে আর মা বলে ডাকছে মা উঠো না কেনো মা আমার খিদে লাগছে আমাকে খেতে দিবা না ওই মা খেতে দাও না চোখ খুলো মা….?

ওই মা চোখ খুলো তুমি কি আমারে আর সোনা জাদু বলে ডাকবা না.? আমাকে কি আর স্কুলে নিয়ে যাবে না.? ওই মা উঠো না তুমি কি আমাকে প্রতিদিন সুন্দর করে গোসল করিয়ে তোমার হাতে কাপড় পড়িয়ে দিবে না..? তুমি কি আমারে আর তোমার হাতে খাওয়াবা না..?

তার বাবা তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে বাবা তর মা তরে আর কোনো দিন তরে জাদু বলে ডাকবে না…। তর মা যাবার আগে তর জন্য একটা চিঠি লেখে গেছে । তুমি না বলছিলা বাবা তোমার জন্ম দিনে আমি তোমাকে কি উপহার দিবো..? আমার কাছে সব চেয়ে বড় উপহার হচ্ছো বাবা তুমি। তাই তোমার জন্য আমার দুইটা কিডনি তুমাকে দিয়ে গেলাম….।

তুমি তোমার খারাপ মা টাকে মাপ করে দিও ,। তোমার জন্য আর ভালো কোনো উপহার দিতে পারলাম না.? তুমি ভালো থেকে বাবা..।

সেই ছোট্ট ছেলেটা কাঁদতে শুরু করলো আর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো ওই মা আমার আর কোন উপহার লাগবো না । তুমি আমার কাছে চলে আসো না মা ওই মা চোখ খুলো না…? ওই মা তোমার মতো করে আমাকে রাতে গল্প শুনাবে কে…?

পরে তার মাকে গোসল করিয়ে সাদা কাপড় আর নাক কানে তোলা পড়ানো হলো। সেই অবুঝ বাচ্ছাটা বলতে লাগলো ওই তোমরা আমার মাকে নাকে কানে এইসব দিছো কেনো.. ? মা তুমি উঠো না দেখো না ওরা কতো খারাপ তোমাকে এই কাপড় পড়াইছে আর তুলা দিয়ে দিছে.। তুমি সবাইকে ওঠে বকে দাও মা ।. ওই আমার মা আমার সাথে কথা বলে না কেনো? তার বাবাকে প্রশ্ন করে। আব্বু তুৃমি আমার মাকে এনে দাও না…?

বাবা তাকে কোলে নিয়ে বলে বাবা তুই চুপ কর আমি আর সহ্য করতে পারবো না.. .। বাবা আমি তো আছি .? তার পর তার মাকে সবাই মিলে নিয়ে যাওয়ার সময় ও পেছন থেকে ডাকতে থাকে আর বলে তোমরা আমার মাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ? সেই ও সবাই পিছনে দৌড়াতে শুরু করে। কিন্তু তার নানি তাকে তাদের সাথে যেতে দেয় নি। ও চেচিয়ে কাঁদতে থাকে আমার মাকে আমার কাছে রেখে যাও….?

সে ছোটো ছেলেটা তার বাবা আর নানা – নানীর কাছে বড় হয়েছে। সে আজ একজন সফল ব্যবসায়ী তার আজ সম্পদের অভাব নেই। শুধু তার কাছে একজন নেই সেটা হলো তার মা….। কয়েক দিন পর

সে তার মায়ের কবরের দোয়া করতে যায়। সে তার কবরের পাশে যায়। আর বলে মা তুমি আমাকে একা রেখে তুমি একা এইখানে শুয়ে আছো..?

দেখো মা আজ তোমার সেই ছোট্ট আরিফ আজ বড় হয়ে গেছে..? মা তুমি দেখো যে কিনা তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারতো না কোথায় গেলে কান্না করতো আজ সে একা থাকতে শিখে গেছে..? মা দেখো আজ আমি নিজের হাতে খেতে শিখেছি যখন আমি খেতে পারতাম তুমি খাইয়ে দিতে..? মা তুমি দেখো আজ আমি হাঁটতে শিখে গেছি…?

মা যখন আামার শরীর খারাপ হতো তুমি আমার পাশে বসে আমার যত্ন করতে. আজ আর মা তোমার মতো কেউ আমার পাশে বসে আদর করে না.. । তোমার মতো সোনা বলে একটা ডাক দেয় না। মা আমি আজ বাবা হয়েছি দেখো .? আমি এখন সব দায়িত্ব নিতে শিখে গেছি..। পারলাম না শুধু মা তোমার দায়িত্ব নিতে..।

তুমি তো আমাকে ছোট থাকতে এতিম করে চলে গেছো। আমার জীবনের বাঁচানোর জন্য কিডনি দুইটা দিয়ে তোমার জাদু টার জীবন বাঁচিয়েছো। আজ মা চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে মা তোমাকে আমি খুব খুব ভালোবাসি.. । তোমাকে খুব মিস করি মা তুমি যেনো পরকালে ভালো থাকো…।

পৃথিবীতে সব চেয়ে স্বাথপর হলো মা যে হাজারো কষ্টের মধ্যে থাকলে ও ছেলের মুখে দিকে তাকিয়ে বলে আমি ভালো আছি। নিজে না খাইয়ে সন্তাকে খেতে দেয়। পৃথিবীতে সব চেয়ে বড় ছায়া হলো মা যার মা আজ দুনিয়ার মধ্য নেই তার ছায়াটা আজ নেই

যার মাকে হারিয়েছে তারাই বুঝে মা যে কি জিনিস। যার মা দুনিয়ার মধ্যে বেঁচে আছে তাদের খেদমত করার তৌফিক দান করুক। (আমিন)

আমি ও আমার মাকে খুব ভালোবাসি। তাই সবার উচিত যার যার মার দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করা..।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন