আসসালামুআলাইকুম আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমাদের পরিচয় আমাদের মুখ। মুখ দেখেই আমরা একে অন্যকে চিনতে পারি। সেই মুখের অবস্থায় যদি হয় খারাপ তাহলে নিজেদের কাছে খারাপ লাগে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে যা দিয়ে যেমন ভাবে পাঠিয়েছে আমরা তা নিয়ে খুশি কিন্তু যত্নের অভাবে আমাদের মুখ টক গুলো আরো বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সঠিক ভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করতে পারলে আমাদের উস্কোখুস্কো অনুজ্জ্বল ত্বক আরো বেশি উজ্জলতা লাভ করবে। মুখের উজ্জলতা বাড়াতে বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। নিম্নে সকল পদ্ধতি গুলো দেয়া হলো:
১. ওটমিল ও দারচিনি
- ওটা মিলে এমন একটি উপাদান যা আমাদের ত্বককে পরিষ্কার করে এবং ত্বকের রুক্ষতা দূর করে। দারুচিনি আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী এটি আমাদের ত্বকের বলিরেখা দূর করে এবং বিভিন্ন ইনফেকশন হতে মুক্ত করে।
- উপকরণ:
দুই চামচ ওটমিল, ১/২ চামচ দারুচিনির পাউডার, এক চামচ দুধ। - পদ্ধতি:
ওটমিল, দারচিনি পাউডার ও দুধ ভালো করে মিশিয়ে, মুখে ৪-৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে ১ সপ্তাহের মধ্যে এর উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। এই মিশ্রণটি শুধু মুখের জন্য নয় এটি শরীরের যেকোনো জায়গায় লাগানো যেতে পারে এবং এর ভালো উপকারিতা দেখা যাবে।
২. বেসন, দুধ ও হলুদ
- বেসন, দুধ ও হলুদ এই তিনটি উপাদানের মিশ্রণে তৈরি ফেসপ্যাক হল সব থেকে বেশি জনপ্রিয়। এর নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বকের রুক্ষতা, শুষ্কতা দূর করে। মুখের সাথে সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের রুক্ষতা দূর করতে এই মিশ্রণ সমান ভাবে উপকারী।
- উপকরণ:
কাঁচা হলুদবাটা ২ চামচ ও বেসন ৩ চামচ, দুধ পরিমাপ মতো। - পদ্ধতি:
কাঁচা হলুদবাটা ও বেসন পরিমাপ অনুযায়ী দুধের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই পেস্টটি মুখে বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে মাখুন। ১৫-২৫ মিনিট পরে হালকা গরম পানি হাতে নিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন। আপনার ত্বকের মসৃণতা আপনি নিজে ছুঁয়েই বুঝতে পারবেন।
৩. পেঁপে
- পেঁপে আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।আমাদের ত্বকের মসৃণতা বাড়িয়ে তুলতে পাকা পেঁপে অত্যন্ত বেশি মাত্রায় কার্যকরী।পেঁপেতে হাত বা পায়ের রুক্ষতা দূর করে মসৃণ করে তুলে।
- উপকরণ:
৩ বা ৪ টুকরো পেঁপে, ১টি কলা, ২ চামচ মধু। - পদ্ধতি:
পেঁপে ভালো করে বেঁটে নিন। এবার তার সাথে মধু ও কলা মিশিয়ে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন ১০ মিনিট ধরে। ১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ভালো ফল পেতে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন এই ভাবে ম্যাসাজ করুন।
৪. পুদিনা পাতা
- পুদিনা পাতা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা ও গুণ বলে শেষ করা যায় না। আমাদের ত্বকের অবাঞ্চিত দাগ, ছোপ, ব্রণ বা যেকোনো রকম সমস্যা দূর করে ও ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে মসৃণ ও নমনীয় করে তোলে।
- উপকরণ:
১২-১৩ টি পুদিনা পাতা, ২-৩ চামচ দই। - পদ্ধতি:
পুদিনার পাতা ভালো করে বেটে তাদের সাথে ভাল করে মিশিয়ে নিন। পুদিনা পাতা ও দইয়ের মিশ্রণ মুখে মেখে ১৫ মিনিট পর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
৫. মধু
- মুখ ও ত্বক সতেজ রাখার অন্যতম একটি উপাদান হল মধু। মধুর উপকারিতা ও গুণ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। মধু আমাদের ত্বককে আরও বেশি উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তোলে।
- উপকরণ:
২-৩ চামচ মধু, ১ টি ডিমের সাদা অংশ। - পদ্ধতি:
মধু ও ডিমের সাদা অংশ ভলো করে একসাথে মিশিয়ে নিন। ভালো করে মুখে মেখে ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে তারপর ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১ বার করে দেখুন, ১ মাসের মধ্যেই আপনি পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
এই ঘরোয়া উপাদান গুলো ছাড়াও বেশকিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনাদের ত্বককে আরও বেশি মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তুলতে পারেন। যেমন,
- ১) প্রতিদিন বেশি করে পানি পান করতে হবে একজনের জন্য দৈনিক দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত।
- ২) বেশি রাত পর্যন্ত না জেগে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে এবং সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠার অভ্যাস করতে হবে।
- ৩) রাতে ঘুমানোর আগে ভালো করে মুখ ধুতে হবে এবং মুখে ডিম অথবা বডি লোশন মেখে ঘুমালে ত্বক আরও বেশি মসৃণ ও সতেজ হবে।
- ৪) প্রতিদিন বেশি বেশি ফল খেতে হবে ফল আমাদের ত্বকের সতেজতা রক্ষা করে।
- ৫) জাঙ্ক ফুড ও তৈলাক্ত খাদ্যগুলো এড়িয়ে চলার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
এই সকল পদ্ধতি গুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা আমাদের ত্বককে সতেজ ও মসৃণ ও মোলায়েম করে তুলতে পারি। অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য।
আল্লাহহাফেজ।
ঘরোয়া উপায়গুলি কিন্তু কাজের হওয়ার সাথে সাথে আপনার ত্বকের কোনোরকম ক্ষতি করে না। তাই আজকের বলা যেকোনো একটি বা দুটি উপায় আপনি আপনার মুখ ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মসৃণতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে দেখতেই পারেন। কিছুদিনের মধ্যেই আপনার প্রিয়জন আপনাকে বারবার স্পর্শ করার ছুতো খুঁজবে, কথা দিচ্ছি!