এক গ্রামে বাস করতো এক মুরগি চোর। সে সবারই বাড়িতে মুরগি চুরি করে বেড়াতো। তাকে সবাই এক নামেই চিনত। তার নাম মুরগি চোরা। সবাই এই নামেই ডাকে তাকে। তাহলে তোমরা বলতে পারো, একে সবাই গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয় না কেন? আসলে সে যে মুরগি চুরি করে, তার প্রমাণ বা সাক্ষী নেই। সবাই জানে সে চুরি করে। কিন্তু যখন চুরি করে তখন কোনো প্রমানই ছেড়ে যায় না। বা কেউ তাকে চুরি করতে দেখে না। সে এমনভাবে চুরি করে যে কাক-পক্ষিটিও তার চুরি করার দৃশ্য দেখতে পায় না।
গ্রামের লোক তাই তার এই চুরি করার জন্য ভালোভাবে মুরগি পালতেই পারে না। ফলে অনেকের মুরগি পালার ইচ্ছাই চলে যায়। তারা সকলে তখন গ্রামের মোড়লের কাছে যায়। যে করেই হোক এর একটা বিহিত করতেই হবে। কিন্তু সকলে মিলে আলোচনা করেও কোনো সমাধানের পথ মিলল না।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে একজন চালাক কৃষক উঠে দাঁড়ালো। আর বলল, “আমার কিছু বলার আছে”।
সবাই তাকে বলার সুযোগ করে দিলো। কৃষকটি বলল, “আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। মোড়ল মশায় আপনি বাজার থেকে দামী কয়েকটা মুরগি কিনে আনেন। কিনে আনার সময় ওই মুরগি চোরের বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে মুরগিগুলোকে আনবেন। ফলে ওই মুরগি চোর আপনার এতো দামী মুরগিগুলোকে দেখে আর লোভ সামলাতে পারবে না। সে প্রাণ-পণে আপনার মুরগিগুলো চুরি করার চেষ্টা করবে।
এরপর আপনি বাসায় আসবেন। আর মুরগিগুলো আপনার ওই যে বড় খাঁচাটা আছে না, ওইটার ভিতরে রাখবেন। আমিও ওই খাচার এক কোণে লুকিয়ে থাকবো। যেই ওই মুরগি চোরা মুরগি চুরি করতে আসবে, অমনিই আমি খপ করে তাকে ধরে ফেলব। আপনারা সকলে চারপাশে লুকিয়ে থাকবেন। যদি কোনো মতে আমার হাত থেকে ওই মুরগি চোরা বেঁচে যায়, তাহলে আপনারা সকলে তাকে হাতে-নাতে ধরতে পারবেন।”
এই প্রস্তাব সকলের কাছে খুবই দারুণ লাগলো। সবাই এই কৃষককে সাব্বাসি দিতে লাগলো।
পরের দিন। গ্রামের মোড়ল মশাই বাজার থেকে বড় বড় ৫-৬ টা দামী মুরগি কিনে নিল। প্ল্যানমতো মুরগি চোরার বাড়ির পাশ দিয়ে ভ্যানে করে মুরগি নিয়ে যাচ্ছিলো। মুরগি চোরা এতো বড় আর দামী মুরগি দেখে লোভ সামলাতে না পেরে পথের মধ্যেই মোড়ল মশাইকে জিজ্ঞাস করলো, “এতো বড় বড় মুরগি আপনি কিনলেন, মোড়ল মশাই?” মোড়ল মশাই তাকে দেখে আরও বেশী বেশী করে মুরগিগুলোর প্রশংসা করতে লাগলো।
মুরগি চোরা এই সুযোগটাই কাজে লাগাল। সে মোড়লের সাথে খোশ-গল্প জুড়ে দিলো আর তার বউকে ইশারায় মুরগিগুলো খাঁচা থেকে বের করার জন্য হুকুম দিলো। মুরগিগুলো ছিল বিদেশি। তাই কোনো চিৎকারই করলো না।
কাজ শেষ হলে, মুরগি চোরা মোড়লকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দিলো। বোকা মোড়ল কিছুই বুঝতে পারল না। সে মনে করলো, রাতে চুরি করতে যাবে বলে মুরগি চোরা তাকে ধন্যবাদ দিয়েছে।
সে তো মহা-খুশি। তার বাড়িতে সবাই এতক্ষনে চলে এসেছে। কিন্তু মোড়ল আসতেই, মোড়লকে অবাক করে দিয়ে সবাই বলে উঠল, “মোড়ল মশাই, মুরগি কই!”