মৌচাক কাটার সঠিক সময় ও নিয়ম

মৌচাক কাটার সঠিক সময় ও নিয়ম। মৌচাক হল মৌমাছির আবাসস্থান। মৌমাছিগণ তাদের পেটের নিচে অবস্থিত গ্রন্থি থেকে বের হওয়া মোম দিয়ে মৌচাক তৈরি করে। মৌমাছিরা মৌচাক তৈরি করে সেইসাথে কলোনি বানিয়ে বাস করে। এছাড়াও শীতকালে মৌচাকে মধু কম থাকে। তাই মৌমাছিরা গ্রীষ্মকালে মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে শীতের সময় তাদের শরীরের প্রয়োজনের পূর্ণতা করতে পারেন। প্রতিটি মৌচাকে অন্তত ১০,০০০ মৌমাছি থাকে, এর ফলে তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর মধুর প্রয়োজন হয়। আজকের এই পোষ্টে  মৌচাক কাটার সঠিক সময় ও নিয়ম বিস্তারিত তুলে ধরবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক।

মৌচাক কাটার সঠিক সময় ও নিয়ম

চাক থেকে মধু সংগ্রহের আগে কিছু ধাপ রয়েছে।

শুরুতে মধু সংগ্রহকারীরা এক ধরনের পিণ্ড তৈরি করে যা খড় জড়ো করা হয়।

এই পিণ্ডগুলি কিছু এলাকায় “বুন্দা” বলা হয়। মৌয়াল বা মগডালে স্থাপিত ভবনের কার্নিশে চাকের কাছাকাছি গিয়ে খড় জড়ো করা এই পিণ্ডগুলিতে আগুন ধরানো হয়।

যখন সে আগুনে সৃষ্ট ধোঁয়া চাকের আশপাশে সংগ্রহকৃত মধু উড়তে থাকে, তখন মৌমাছিগুলি চাকের নিকটবর্তীতে উড়ে যায়।

মৌচাক কাটতে গাছে বা কার্নিশে ওঠার আগে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

গাছে বা ভবনে ধীরে ধীরে উঠার কৌশল অর্জন করা উচিত। চাক মধুতে পূর্ণ হয়েছে কি না, সেটা বোঝার উপায়ও জানা দরকার।

তার মতে, বেশিরভাগ মৌচাকে মধু উপরের অংশে থাকে।

যখন মৌচাকটির উপরের দিক ভারী এবং নিচের দিক সরু হয়ে যায়, তখনই সেটি মধুতে পূর্ণ হয়ে যায়।

নিয়মিত মধু সংগ্রহ করার লোকেরা এটি বুঝে।

মৌচাক কাটার মন্ত্র

মৌচাক কাটার জন্য কোনো বিশেষ দুআ নেই।

তবে কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, সেজন্য শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হবে।

পূর্ণ বিসমিল্লাহ পড়ে কাজটি শুরু করুন। যদি আপনার কোনো ভীতিকর অবস্থা হয়, তবে লাইলাহ ইল্লাল্লাহ পাঠ করুন।

কারণ হাদিসে এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়, তখন লাইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে হবে।

আর পূর্ণ সচেতনতা এবং কৌশল প্রয়োগ করা উচিত।

এবার চাক কাটার নিয়ম শিখি। কিছু সরিষার তেলে রসুন পেষণ করে, মন্ত্রটি একটি নিঃশ্বাসে তিনবার পড়ে ফুঁ দিয়ে হাত, পা, মুখ এবং মাথা সহ সারা শরীরে লাগাতে হবে। এরপর একটি মুষ্ঠি ধূলা নিয়ে মন্ত্রটি তিনবার পড়ে ঐ ধূলায় নিজের শরীরের কিছুটা মেখে বাকি ধূলায় চাকটি লক্ষ্য করে ছুড়ে দিতে হবে। তারপর পূর্বে উল্লিখিত নিয়মগুলি অনুসরণ করে কাজ করতে হবে রাতের বেলায়।

মৌমাছিরা মৌচাক তৈরি করে কীভাবে ?

মধু পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি খাদ্যের নাম। এটি পূর্ণতঃ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় মৌমাছি নামক একটি প্রাণীর প্রচুর পরিশ্রমের তৈরি হয়। মধু একটি মিশ্রণ যা গ্লুকোজ, পানি, তেল এবং বিশেষ প্রকারের এনজাইম সংমিশ্রণে উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াটি মৌমাছি কয়েকটি ধাপে পূর্ণ করে।

প্রথম ধাপে, কর্মী মৌমাছিরা মৌচাতে চলে যায় এবং ফুলের মধুগ্রন্থি থেকে মধু সংগ্রহ করে।

এই সংগৃহীত মধু তাদের দেহে একটি বিশেষ থলিতে সংরক্ষণ করে।

সংগ্রহ শেষে, কর্মী মৌমাছিরা মৌচার মাধ্যমে সংগৃহীত ফুলের মধুটি মৌচাতে রেখে দেয়।

পরবর্তীতে, মৌচা থেকে সংগৃহীত মৌমাছিগুলি তাদের শরীর রস সহ বিভিন্ন প্রকারের এনজাইম যোগ করে এবং এই রসটি মৌচাতে সংগৃহীত করে রাখে। এই পদার্থগুলি মধুর মধ্যে মিশে যাওয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য ধারাবাহিকভাবে রসায়ন ঘটায়।

এভাবে কিছুদিন পর এই বিশেষ রসটি গভীর মধুতে রূপান্তরিত হয়।

 মধু  সংগ্রহের সময়

মৌমাছির বাসা থেকে দুইবার মধু সংগ্রহ করা যায়।

চন্দ্র মাস / আরবী মাসের শুরুতে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে ওই মধু কিছুটা খেয়ে রাখে এবং বাকি মধুটা বাসায় সংরক্ষণ করে। এইভাবে জমিয়ে জমিয়ে পূর্ণিমা রাতের আগের রাত পর্যন্ত সম্পূর্ণ মধু সংগ্রহ করে এবং পূর্ণিমার রাতে সংগৃহীত মধুটি পাহাড়া দেয়।

এরপরে আরেকটি রাত থেকে বেশিরভাগ মধু খেয়ে কিছুটা রেখে দেয়।

এরপর পাঁচ-ছয় দিন পর অমাবস্যা রাতের আগের রাত পর্যন্ত আবার সংগ্রহ করে এবং অমাবস্যার রাতে পাহাড়া দেয়। লোকেরা এই দুইটা সময়ে মৌমাছির বাসা থেকে একবার বা দুইবার মধু সংগ্রহ করে সেটা কাজে লাগিয়ে থাকে।

কোন মধু সবচেয়ে সুস্বাদু এবং উপকারী

কোনটি সবচেয়ে ভালো মধু বা কোনটি সবচেয়ে উপকারী ফুলের মধু, এটি নির্ধারণ করা কিন্তু কঠিন।

প্রকৃতিপক্ষে সব ফুলের মধুর গুণাগুণ প্রায় সমান। আমরা সব ফুলের মধু থেকে প্রায় সমান উপকারিতা পাই।

তবে, মধু অবশ্যই খাঁটি এবং ভালো মানের হতে হবে।

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কি বোঝায় ভালো মানের মধু? ভালো মানের মধু বোঝায় মধুর গ্রেডিং, মধুর বয়স, মধু পরিষ্কারতা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য।

মধুর গ্রেডিং: মধুর গ্রেডিং মধুতে উপস্থিত পানির পরিমাণের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। মধুর তিনটি গ্রেড আছে, যথাঃ ‘এ’, ‘বি’, এবং ‘সি’।

যে মধুতে পানির পরিমাণ ১৮ থেকে ২০ শতাংশ সেটি এ গ্রেডের মধু হয়।
যে মধুতে পানির পরিমাণ ২১ থেকে ২৩ শতাংশ সেটি বি গ্রেডের মধু হয়।
এবং যে মধুতে ২৩ শতাংশের বেশি পানি থাকে সেটি সি গ্রেডের মধু হয়।

যে মধুতে পানির পরিমাণ কম থাকে, সেটি ভালো মানের মধু। প্রাকৃতিক মধুগুলো সাধারণত ‘বি’ এবং ‘সি’ গ্রেডে থাকে। খাদ্য উৎপাদন কর্মসূচিতে যে মধু উৎপাদন হয়, সেখানে চাইলে ‘এ’ গ্রেডের মধু উৎপাদন করা যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক মধুতে ‘এ’ গ্রেডের মধু খুব কম পাওয়া যায়, আর ‘বি’ এবং ‘সি’ গ্রেডের মধু বেশি পাওয়া যায়।

শেষকথা

আশা করি,মৌচাক কাটার সঠিক সময় ও নিয়ম জেনে গেছেন। মধু আমাদের আমাদের শরীরের জন্য খুবি উপকারী।

তবে বাজারে খাটি মধু সহজে পাওয়া যায় না।

মধুতে পানি,গুড়,চিনি বিভিন্ন উপাদান মিশ্রিত নকল মধু বেশি বিক্রি হয়।

তবে  খাটি মধু চেনার কয়েকটি উপায় রয়েছে। পরে এক সময় সেটা নিয়ে বিস্তারিত লিখবো।

নকল মধু আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

তাই সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার পরিচিত কারোর কাছ থেকে খাঁটি মধু কিনতে। আজকে এ পর্যন্ত। দেখা হবে আরো অন্য কনো টপিক নিয়ে। যদি কনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

14 Comments

মন্তব্য করুন