সুখ বিষয়টি সাধারণত আপেক্ষিক; যা ব্যক্তি বিশেষে ধরা দেয় ভিন্ন-ভিন্ন রূপে। কোন একটি বিষয় কিংবা মাধ্যম হতে পারে আপনার জন্য আনন্দের উপলক্ষ; তবে ঠিক সে একই বিষয় অন্যের কাছে হতে পারে- নিরানন্দের অন্যতম হেতু।
যেমন ধরুন- পৃথিবীতে এমন অনেকেই আছেন যারা বন্ধু-বান্ধব ছাড়া চলতেই পারে না; তাদের সহচার্যেই খুঁজে পায় আনন্দের সীমাহীন ফোয়ারা। অপরপক্ষে এই ধরণীতে- বন্ধু মহল থেকে নিজেকে আড়াল রাখার মত লোকের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়।
আপনার প্রকৃত সুখ তথা সন্তুষ্ট জীবন ঠিক কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করবে; তার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা কিছুটা মুশকিল হলেও, আপনার দৈনন্দিন কাজে কিছু পরিবর্তন আপনাকে সুখের সংস্পর্শে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে নিঃসন্দেহে।
প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন
১. মনখুলে হাসুন
সাধারণত আমরা যখন কোন বিষয়ে খুশি হই কিংবা আনন্দ পাই, তখনই আমাদের মুখে হাসি ফুটে উঠে। তবে মজার বিষয় হল- আমরা যত বেশি আনন্দে থাকবো অর্থাৎ যত বেশি হাসি-খুশি থাকবো আমাদের মস্তিস্ক থেকে তত বেশি ডোপামিন নিঃসরণ হবে। ডোপামিন হল এমন একটি হরমোন যা যত বেশী নির্গত হয়; আমাদের সুখের অনুভুতি হয় ঠিক ততটাই বেশি।
তবে মাত্রাতিরিক্ত ডোপামিন নিঃসরণ হিতে বিপরীত হতে পারে; এক্ষেত্রে আপনি ক্ষুদামন্দাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে পারেন। আর তা হয়ে থাকে সাধারণত যে সব কাজ করে আমরা নেশাগ্রস্ত বা অভ্যস্ত হয়ে যায়। সেটা মাত্রাতিরিক্ত গেম খেলার কারণেও হতে পারে।
অপরপক্ষে খুসী থাকার অর্থ এই নয় যে সারাক্ষণ আপনাকে মুখে কৃত্রিম হাসি কিংবা নকল হাসি জড়িয়ে ঘুরতে হবে। যা করবেন মন থেকে করবেন। এক্ষেত্রে প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনি হাসির প্র্যাকটিস করতে পারেন, এতে সংশ্লিষ্ট কাজে আপনি উপকৃত হবেন বহুগুণে।
২. ব্যায়াম
ব্যায়াম শুধু আপনার শরীর গঠনের জন্য প্রযোজ্য নয় বরং নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক চাপ, উদ্বেগের অনুভূতি এবং বিষন্নতার উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে; যা আপনার আত্মসম্মান এবং সুখ বৃদ্ধি করে।
এই ব্যায়াম শুরু করুন কিছু নিয়ম মেনে:
* প্রতি রাতে খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ আপনার বাড়ির মধ্যে বা চারপাশে হাঁটুন।
* ৫ মিনিট স্ট্রেচিং দিয়ে আপনার দিন শুরু করুন।
প্রতিদিন আরও কিছু সহজ উপায়ে ব্যায়াম করে শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি আপনি আপনার মনও চাঙ্গা রাখতে পারেন নিঃসন্দেহে।
৩. পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান
বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন প্রায় ৭ বা ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। মনে রাখবেন, পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে সারাদিন হাসি-খুশি রাখার ক্ষেত্রে অন্যতম চাবিকাঠি।
৪. স্বাস্থ্যকর ও সহজে পরিপাক হয়- এমন খাবার গ্রহণ করুণ
আমরা সবাই জানি যে, পুষ্টিকর ও পছন্দনীয় খাবার আমাদের সামগ্রিক শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। আবার কিছু খাবার রয়েছে যা আমাদের মনের অবস্থাকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই খাবার খাওয়ার সময় পছন্দনীয় খাবারটি উপভোগের সাথে গ্রহণ করুণ। পাশাপাশি সহজে পরিপাক হয়, এমন খাবার বেশি বেশি খাওয়ার অভ্যাস করুন। যেমন- শাক-সবজি, পেঁপে, লাউ ইত্যাদি।
৫. বুকভরে নিঃশ্বাস নিন
গবেষণায় দেখা গেছে যে, কঠিন কিংবা জটিল বা উত্তেজনাপূর্ণ কোন কাজ করার আগে বুকভরে নিঃশ্বাস নিলে সে কাজের সফলতার হার বেড়ে যায় বহুগুণে। উদাহরণ হিসেবে খেলোয়ারদের প্রসঙ্গ আনা যায়- তারা সাধারণত পেনাল্টি কিকের পূর্বে এমনটা করে থাকে। আর কাজে সফলতা আপনার মনে প্রশান্তির বয়ে আনার অন্যতম হাতিয়ার।
এছাড়াও, আরও কিছু ছোট খাটো অভ্যাস যা আপনি রপ্ত করে, আপনার জীবনের আনন্দঘন মুহূর্তকে বাড়িয়ে নিতে পারেন কহুগুণে। যেমন:
• সৃষ্টিকর্তাকে বেশি-বেশি স্মরণ করুন।
• কেউ কোন ভালো কাজ কেরলে তার যিথেষ্ট প্রশংসা করুন।
• মানুষের প্রতি সর্বদা সু-আচরণ ও ভালো ব্যবহার করুন।
• মানুষের বেশি বেশি ভুল না ধরে, তার গঠনমুলক সমালোচনা করুন।
• যে সকল লোককে অপছন্দ করেন, তাদেরকে সতর্কতার সহিত এড়িয়ে চলুন।
• আপনি যাদেরকে পছন্দ করেন, তাদের সঙ্গে বেশি বেশি সময় অতিবাহিত করুন।
• সৎ ও ভালো বন্ধুর সংখ্যা বাড়ান।
• রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু সময়ের জন্য ভাবুন, পারলে পরবর্তী দিনের কাজ-কর্মের রুটিন নির্ধারণ করে রাখুন।
• ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
• আর সবথেকে বড় কথা, দুঃসময়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখুন, ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলান। তবেই আপনি- অবিলম্বে ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে, সুদিনের ভেলায় পাড়ি জমাতে সক্ষম হবেন।