Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

রবিন জামান খান এর ‘ব্ল্যাক বুদ্ধা” বইয়ের রিভিউ।

🎉 Get ৳10000 Bonus!

১.বই পরিচিতিঃ
বইয়ের নামঃ ব্ল্যাক বুদ্ধা
লেখকের নামঃরবিন জামান খান
প্রচ্ছদ শিল্পীঃডিলান
জনরাঃ হিস্টরিকাল থ্রিলার
প্রকাশনীঃবাতিঘর
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
পৃষ্ঠাঃ৪৭৯
মুদ্রিত মূল্যঃ৫২০ টাকা

রবিন জামান খান এর হিস্টরিকাল সিরিজের ২য় বই ব্ল্যাক বুদ্ধা। সিরিজের প্রথম বই সপ্ত রিপু এর মতো এখানেও অতীত আর বর্তমান একসাথে পাশাপাশি রেখে লেখক ঘটনা সাজিয়েছেন। বইয়ের নাম আর প্রচ্ছদ দেখেই মূলত বইটি পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগে।

২.কাহিনী সংক্ষেপঃ(অতীত) ১৮০ খৃস্ট পূর্বাব্দে মৌর্য সাম্রাজ্যের তৎকালীন সম্রাট বৃহদ্রথ কে তার সেনাপতি পুশ্যমিত্র খুন করে শুঙ্গ সাম্রাজ্যের পত্তন করার মাধ্যমে ভারতবর্ষ থেকে মৌর্য সাম্রাজ্যের শাসন ঘুচিয়ে দেয় চিরতরে। সেই সাথে সে ঘোষনা দেয় ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধ দের চিরতরে দূর করে দিবে এবং যেখানেই বৌদ্ধ দের পাওয়া যাবে তাদের কে খুন করা হবে এবং প্রতিটি কর্তিত বৌদ্ধ মস্তকের জন্য স্বর্ণ মুদ্রা প্রদান করা হবে। সম্রাট বৃহদ্রথ বৌদ্ধ হয়েও একজন ব্রাহ্মণ কে সেনাপতি করেছিলো কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন নি এই সিদ্ধান্ত তার জন্য কাল হতে পারে। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতবর্ষ যখন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যায় মত্ত ঠিক তখনই তিব্বতের সবচেয়ে বড় মঠের প্রধান ” ডুকপা লামা” অপহৃত হন তার দ্বিবার্ষিক সফরের মধ্য থেকে।

তাকে উদ্ধার করতে ভারতবর্ষে পা রাখেন তিব্বতের সবচেয়ে সেরা যোদ্ধা ” শামান” ইতিহাসে যিনি লাল চুলের যোদ্ধা নামে পরিচিত । তিব্বত থেকে দূর ভারতবর্ষের মাঝখান এ যেতে হয় শামানকে সঙ্গী বিধুকে নিয়ে। সেখানে” কননোর ” এর বনভূমিতে দেখা হয় শাক্য এবং থারু বংশের লোক দের সাথে। পূর্বে শোনা অনেক কথাই সেখানে গিয়ে নতুন ভাবে শুনে শামান আশ্চর্য হয়ে যায়। শুরু হয় তার শাক্যদের হারানো এলাকা ফিরে পাওয়ার এবং ডুকমা লামাকে উদ্ধার করার অভিযান। একের পর এক বাঁধা , বুদ্ধির মারপ্যাচ, বিশ্বাসঘাতকতা , ধর্মীয় ক্রোধ, গোত্র এই সবকিছু ছাপিয়ে শামানের সফলতার পথে যাওয়ার গল্প এই ব্ল্যাক বুদ্ধা। কিন্তু সবচেয়ে রহস্য পূর্ণ বিষয়টি হলো বুদ্ধের অন্ধকার অবতার যার জন্য এতো কিছু।

অন্যদিকে বর্তমান সময়ে “পুলিশ ইনভেস্টিগেশন বুরোর”ক্রিটিকাল এনালিসিস উইং এর সিনিয়র অফিসার তানভীর কে জরুরী তলবে দেশে ফিরে আসতে হয় স্পেশাল ট্রেনিং শেষ না করেই। সে এসে শুনে শাবিপ্রবির এক শিক্ষক যিনি ডক্টর মিতায়ন আহমেদ নামে পরিচিত আসাম থেকে এক আরকিওলজিকাল রিসার্চ শেষে দেশে ফেরার পথে তার পুরো টিম সহ গায়েব হয়ে যায়। এই ঘটনার উত্তর খোঁজার জন্যই তাকে সিলেট পাঠানো হয় পিবিআইয়ের এনালিসিস উইং এর প্রধান পাশা স্যার এর নির্দেশে। একদিকে সিলেট শহরের সাথে জড়িয়ে থাকা অতীতের দুর্বিষহ স্মৃতি , অন্যদিকে ফিল্ডে একোবারেই নতুন। এই দুই ঘটনাকে সঙ্গী করেই তার সিলেটের অভিযান শুরু হয়। সে ফিল্ডে নতুন হওয়ার পরও তার টিমমেট সুলতান, জালাল, ইকবাল, টমি এদেরকে নিয়ে একে একে অনেক ঘটনার সূত্রই আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় কিন্তু সে জানতো না কি পরিমাণ বিপদের কাটা বিছিয়ে রাখা হয়েছে তার জন্য। একের পর এক আ্যামবুশ আর বিশ্বাসঘাতকতায় বিপর্যস্ত তানভীর এক পর্যায়ে অনুভব করে এই গায়েব হয়ে যাওয়ার এবং আর্টিফ্যাকট উদ্ধার এর চেষ্টার মাধ্যমে ব্ল্যাক বুদ্ধার রহস্য ভেদ করতে হলে তাদেরকে আগে ইতিহাসের এক ভয়ংকর তম অধ্যায়ে ডুব দিতে হবে। এই গল্প একজন সৎ, সাহসী পিবিআই এজেন্টের । এখানে আরো উঠে এসেছে মূর্তি চোরাচালান এর কথা, লোভের জন্য বিশ্বাস ভাঙতেও যারা দ্বিধা করে না তাদের কথা।

মোট কথা এই পুরো বইটিই ইতিহাস আর বর্তমান মিলিয়ে দুর্দান্ত এক আখ্যান।
৩.পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ অবশেষে শেষ করলাম রবিন জামান খানের হিস্টরিকাল সিরিজ এর ২য় বই ” ব্ল্যাক বুদ্ধা। ইতিহাস আমার বরাবরই প্রিয়। ইতিহাসের সাথে বর্তমান মিলিয়ে লেখা বইটি পড়তে আমাকে কোথাও খেই হারাতে হয় নি। কারণ গল্পের প্লট গুলোই খেই হারাতে দেয় নি। এই বইটি পড়ার মাধ্যমে ইতিহাসের অনেক বিষয় ও আমি জানতে পেরেছি। মৌর্য পরবর্তী সময়টা সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারনা ছিলোনা, কিন্তু এই বইয়ের মাধ্যমে আমি কিছুটা হলেও ধারনা পেয়েছি। তাছাড়া জীবন সম্পর্কে খুব সুন্দর সুন্দর কিছু উক্তিও রয়েছে যা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে । তাছাড়া কর্মফল এর ব্যাপার গুলো আমাকে পুরোপুরি ইমপ্রেস করেছে।

৪.লেখার মানঃলেখকের গল্প বলার ধরন,বাক্যের বিন্যাস, প্লট নির্বাচন সবই ভালো লেগেছে। কাহিনীর এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পাঠক খুব ভালোভাবেই বইয়ের সাথে লেপ্টে যেতে পারবেন। শেষ পৃষ্ঠা পরযন্ত আপনাকে আটকে রাখবে এই বই।
৫.প্রোডাকশন কোয়ালিটিঃ সার্বিক ভাবে বিবেচনা করে বলতে গেলে বইয়ের কোয়ালিটি ভালোই ছিলো।হার্ড কাভার, লেখার ফন্ট , পেজ সবকিছুই ভালো ছিলো। আর ৪৭৯ পেজের বই হিসেবে দাম টাও ভালোই ছিলো।
৬. পার্সোনাল মতামত/সমালোচনাঃ সব জিনিসেরই ভালো খারাপ দিক রয়েছে। এই বইটি পড়তে গিয়েও আমাকে ২ ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। গল্পের বুনন আমাকে যতটা আকৃষ্ট করেছে ঠিক তেমনই বানান ভূলের ব্যাপারটা আমায় হতাশ করেছে। বানান ভূল না বলে প্রিন্ট মিসটেক বলাই ভালো। যেমন রাজা হেমচন্দ্র অনেক সময় হেমচন্দ হয়ে গেছে। তাছাড়া এক জায়গায় ” ডুকমা লামার ” বদলে রাজা মানরুর নাম লেখা হয়েছে।
তথ্যগত ভূল ১ টার বেশি চোখে পড়ে নি, সেটা হলো ২০০১ সালে নেপালের রাজ পরিবারকে খুন করেছিলো ” দীপেনদ্র ” কিন্তু বইয়ে লেখা হয়েছে” গ্যানেন্দ্র “। এটা সঠিক করে দিলেই ভালো পরবর্তী সংস্করণে। আর সবাইকে বলবো বই পড়ার সাথে সাথে ম্যপ টাও দেখার জন্য।

৭.রেটিংঃ৪.৫/৫
সবশেষে এটাই বলবো খুবই উপভোগ্য একটি বই এটি। আপনারা চাইলে পড়ে দেখতে পারেন। বইয়ের কাহিনী অনেক বিসতৃত তাই রিভিউটাও বড় হওয়াই স্বাভাবিক । সবাই একটু ধৈর্য নিয়ে পড়বেন। আর ভূল গুলো ক্ষমা করে দিবেন।
ধন্যবাদ।

Related Posts

4 Comments

Leave a Reply