মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা মানুষের বহুদিনের। মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে চলছে দীর্ঘদিনের চুলচেরা বিশ্লেষণ ।
লাল গ্রহের স্বপ্ন পূরণ
পৃথিবীর বাইরে গিয়ে ভিন্ন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধানে নানান ধরণের পরীক্ষা-নীরিক্ষা,গবেষণা ইত্যাদিরও কমতি রাখছে না মানুষ। প্রতিনিয়তই চলছে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা।
চালিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ মঙ্গলের সন্ধান।
পৃথিবী থেকে প্রায় ৪৭ কোটি মাইল দূরের এই গ্রহে মানুষের অনুসন্ধান শুরু হয় ১৯৬০ সাল থেকে।
তখন থেকেই শুরু হয় একের পর এক অভিযান।
প্রতিনিয়তই পরীক্ষা – নীরিক্ষা, ব্যর্থতা সফলতা নিরলস প্রচেষ্টায় খুঁজছে প্রাণের অস্তিত্ব। স্বপ্ন দেখছে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহটিতে বসতি স্থাপনের।
আগামী এক দশকের মধ্যেই মঙ্গলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে মানুষ। কিন্তু প্রশ্ন একটাই কয় দিন সেখানে বাঁচবে মানুষ।
নানামুখী এসব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটানোর জন্যই মঙ্গল গ্রহে ঘটেছে নাসার অভিযান।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এই অভিযানটি সফলভাবে চালায়। কয়েকদিন আগেই লালগ্রহে সফলভাবে অবতরণ করেছে এর নতুন মহাকাশযান “পারসিভিয়ারেন্স রোভার”।
এই মহাকাশযানটি মঙ্গলের ‘জেজেরো ক্রেটার’ এলাকায় অবতরণ করে। আর পৃথিবীবাসী রহস্যের চাদরে ঘেরা লালগ্রহের প্রথম ছবিটি দেখে।
মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায় কিনা তা আগামী দুই বছর ধরে খতিয়ে দেখবে “পারসিভিয়ারেন্স রোভার”।
এই মহাকাশযানটি আগামী ৯ বছর ধরে মঙ্গলের মাটিতে অবস্থান করবে বলে জানিয়েছে নাসার বিজ্ঞানীরা।
মঙ্গলের ৩০ ধরণের পাথর এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করবে নাসার ‘পারসিভিয়ারেন্স রোভার ‘ মহাকাশযানটি। রোভার ফিরে এলে উন্মোচিত হতে পারে মানুষের দীর্ঘদিনের সপ্ন ,মঙ্গলে বসতি স্থাপন।
অবাক করার বিষয় হলো ২০২৩ সাল নাগাদ মঙ্গল গ্রহের অভিযানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নেদারল্যান্ডস এর কোম্পানি ‘মার্স ওয়ান’।
আর ইতোমধ্যে এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে টিকিট বিক্রি ও শুরু করে দিয়েছে কোম্পানিটি।
মজার বিষয় হলো এই পর্যন্ত দুই লাখেরও বেশি মানুষ আবেদন করেছে। দুই লাখ আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৫৮ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছে তারা। তালিকাভুক্ত ৫৮ জনের মধ্য থেকে প্রথম ৪০ জনকে নির্বাচন করা হবে।
পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাত্র চার জনকে বাছাই করবে কোম্পানিটি। আগামী ২০২৩ সালে চার নভোচারীর প্রথম দলটি লালগ্রহের মাটিতে পা রাখবে। প্রতি দুই বছর পরপর তাদের সঙ্গে যোগদান করবে নতুন দল।
কিন্তু মঙ্গল গ্রহে পৌছানো অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই প্রতিনিয়তই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষামূলকভাবে গবেষণা করছেন লালগ্রহে পৌছানোর সময় কমানোর জন্য।
নাসা লালগ্রহে যে মহাকাশযান পাঠিয়েছে সেগুলো পৌছাতে সময় লেগেছে ১২৮ দিন থেকে ৩৩৩ দিন।
এখনকার রকেটচালিত যানে মানুষের মঙ্গলে পৌছাতে সময় লাগবে প্রায় ৯ মাস।তাই মঙ্গলে যাওয়ার সময় তিন মাস বা তারও নিচে নামিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন নাসাসহ নানান প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা।
মার্কিন রকেট নির্মাতাকারী প্রতিষ্ঠান এইবার এক ধরণের ইন্জিন তৈরি করার কাজ শুরু করেছে যাতে চড়ে মানুষ মাত্র ৩৯ দিনেই লালগ্রহে পৌছাতে পারবে বলে দাবি করেছেন মার্কিন গবেষকরা।
কিন্তু সমস্যা হলো এতে মানুষকে সেকেন্ডে ১১ কি.মি. গতি সামলানোর সক্ষমতা অর্জন করতে হতে পারে।
তবে মার্কিন গবেষকদের হিসাবমতে, মঙ্গল গ্রহে তৈরি করা অবকাঠামো ও প্রতিকূল পরিবেশ বিবেচনায় নিলেও মাত্র ৬৮ দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে পড়তে পারে মানুষ।
এই সতর্কতা জানিয়েছিলেন ২০১৪ সালে ম্যাসাচুয়েটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ( এমআইটি ) গবেষকরা।
উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে থেকেই বিজ্ঞানীরা মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান শুরু করেছেন।
বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা মঙ্গলের মাটি, পাথর , এমনকি গ্রহের গঠনশৈলী জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা ।
২০১৬ সালের ২২ শে নভেম্বর নাসা ঘোষণা করেছিল যে তারা মঙ্গল গ্রহে ভূগর্ভস্থ পানির সন্ধান পেয়েছে ।
নাসা গ্রহটির ‘প্লাটিনিয়া ইউটোপিয়া’ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ বরফের সন্ধান পায় । নাসা জানায় বিপুল পরিমাণে পানির সন্ধানও পাওয়া গিয়েছিল সেখানে।
মঙ্গলকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই । পৃথিবীর সাথে তুলনামূলক ভাবে লালগ্রহটির মিল থাকায় আগ্রহ যেন আরো বেশি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা , পৃথিবীর সাথে গ্রহটির অনেক মিল থাকায় সেখানে পাওয়া যেতে পারে প্রাণের সম্ভাবনা ;
যা জ্যোতির্বিজ্ঞান সবচেয়ে আগ্রহের বিষয়। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে কোন প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়নি ।
গ্রহটিতে যে জীবন আছে তাও নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না । তবে এ নিয়ে চলছে জোড় কদমে গবেষণা ।
মানুষ স্বপ্ন দেখছে হয়তো একদিন মঙ্গলে বসবাস করতে সক্ষম হবে । হয়তো পৃথিবীর মতো সেখানেও বসতি গড়বে।