নিউজিল্যান্ড বনাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট আমরা ইনিংস ব্যাবধানে হেরেছি।এর পরেও বলবো এই সিরিজ থেকে আমাদের প্রাপ্তি অনেক।
প্রথম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়,ইবাদত, জয়,তাসকিন দের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং সর্বশেষ আজকে লিটন দাসের দুর্দান্ত একটি সেঞ্চুরি। আমি বাজি ধরে বলতে পারি এই সিরিজ শুরুর আগে আমরা এতো গুলো প্রাপ্তি নিয়ে আমরা সিরিজ শেষ করবো তা কেউ চিন্তাও করতে পারে নি।
আজ অবশ্য আমি লিটন দাস এর এই অনবদ্য সেঞ্চুরি নিয়েই শুধু বলতে চাই। আমার ব্যক্তিগত ভাবে লিটন দাস বাংলাদেশের সবচেয়ে ট্যালেন্টেট ব্যাটসম্যান। এমন কোনো শট নাই সে খেলতে পারে না।এবং তার ব্যাটিং এর আরও একটা বিশেষত্ব হলো সৌন্দর্য।তিনি যেদিন ছন্দে থাকেন মনে হয় তার ব্যাটিং দেখে যে চোখের শান্তি পাওয়া অন্য বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান দের থেকে পাওয়া একপ্রকার বিরল ঘটনায় বলা চলে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কেন জানি ধারাবাহিক হতে পারছিলেন না।অবশেষে ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ফর্মেটে তিনি জানান দিচ্ছেন তার সামর্থ এর।
আজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস এর ব্যাটিং এর সময় সেট হয়ে টপ অর্ডারদের যাওয়া আসার মিছিলে আরেকটি ম্যাড়মেড়ে ইনিংস হারেরই হাতছানি দিচ্ছিল।
ইয়াসির রাব্বী আউট হওয়ার পর উইকেটে ছিলেন লিটন আর সোহান।দু’জনের প্রতি নিজের কিছুটা পক্ষপাতদুষ্টতায় একটু গা ঝাড়া দিয়েই উঠেছিলাম!
এরপর আমার লিটনকাব্য অবলোকনের পালা শুরু।বোল্ট,ওয়াগনার,জেমিসন,কেউই পার পাচ্ছেন না।গা বরাবর শর্ট বলগুলোকে অনায়াসে ব্যাট দিয়ে শাসন করছেন এক বঙ্গসন্তান।হতাশ হয়ে ফুলার লেন্থে বল করলেন সামনের পায়ে কি অবলীলায় ড্রাইভ করছেন!আর অফস্ট্যাম্পের বাইরে স্কয়ার অব দ্য উইকেটে কাট তো তার ডান হাতের নিয়মিত খেল।
যতই সময় এগিয়েছে সলিড লিটন আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়েছেন।সম্ভবত ইনিংসের প্রথম ভুল শট খেলে পঞ্চাশ অতিক্রম করলেন!এরপর শান্ত লিটন যেন অশান্ত হয়ে উঠলেন।না,ভুল বললাম,লিটন শান্তই ছিলেন।তার ব্যাট ই বোধ হয় অশান্ত হয়ে গেছিল।বল আসছে,লিটন আলতো করে আরামসে ব্যাটকে বলের দিকে চালাচ্ছেন!এই তো অফ ড্রাইভ,পরেরটা মারলেন স্কয়ার ড্রাইভ,এর মাঝে তার ক্ল্যাসিক অন ড্রাইভ দেখা যেন ইনিংসের সামান্য অপূর্ণতাও ঘুচিয়ে দিল।বাদ যায়নি আপার কাট মেরে ছক্কাও।
যখন সোহান আউট হলেন, লিটন সম্ভবত ৭৩ এ ছিলেম।মনের কোণে ভয় জাগল,সেঞ্চুরি করার সুযোগ পাবেন তো লোয়ার অর্ডারকে সাথে নিয়ে?এমন ব্যাটিং করে যদি সেঞ্চুরি না পায়,তবে তো তার নয়,সেঞ্চুরিরই দুর্ভাগ্য!না,লিটন সেটা হতে দেন নি।কেবল ই সপাটে চালিয়েছেন।মাঝে মিরাজ আউট হলেও লিটনের ব্যাট থামে নি।প্রথম সেঞ্চুরির মতোন নার্ভাস নয়,পুরো ইনিংসে ডোমিনেট করা ব্যাটার ডোমিনেটিং স্টাইলেই শতক তুলে নিলেন।
বাংলাদেশে রাতভোর হতে সকালে পর্যন্ত মাঝের কিছু মুহূর্ত তার ব্যাটিংয়ের প্রেমে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিলেন!কমেন্টেটর রা বার বার বলেন,’ক্লাসি” “ক্লাসি”!লিটন হয়তো ক্যারিয়ারে আরও অনেক বড় বড় ইনিংস,খেলবেন।কিন্তু কিউই কন্ডিশনে অন্য প্রান্তে ব্যাটারদের যাওয়া আসার মিছিলের ফাঁকে এমন দাপুটে প্রশান্তিময় ব্যাটিংয়ের প্রেমানুভূতি কোনোদিনও ম্লান হবে না।
লিটন,আপনার ব্যাটিং আসলেই ” সুন্দর”….
ওই ফ্রন্টফুট পুলগুলো, কাভার ড্রাইগভগুলো, স্ট্রেইট ড্রাইভটা, স্কয়ার কাটগুলো- প্রত্যেকটা দেখার জন্য প্রেমিকার সাথে একটা করে ডেট মিস দেয়া যায়! তার এমন ব্যাটিংয়ের গুনমুগ্ধ হয়েই ইয়ান বিশপ বলেছিলেন, “আপনি মাঠে মোনালিসা আঁকেন!” আমার ধারণা, প্যারিসের ল্যুভরে মহান কোন আর্ট, স্কালপচার দেখে ওই সৌন্দর্য অনুভব করবো না,
সত্যি এমন মুগ্ধকর ইনিংস বাংলাদেশি ব্যাটার খেলছেন, এই অনুভূতিটা দিতে পারবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!
লিটন দাসের কাছে ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা ছিল। টেস্টে গত বেশ কিছুদিন ধরেই সেটা করছেন। এখন এই টেম্পারামেন্টটা সাদা বলের ফরম্যাটেও টেনে নিয়ে যান প্লিজ!
অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।