হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করে আসছে। প্রথম প্রথম মানুষ আকারে ইঈিতে ভাবের প্রকাশ ঘটাতো। যেমন হ্যাঁ বা না বোঝাতে হলে মাথা নাড়ালেই হয়ে যায়। তেমনিভাবে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গের ব্যাবহার যেমন রাগ, আনন্দ,আতঙ্ক, বিষ্ময় কিংবা অন্য যে কোনো ধরনের ভাব বোঝানোর ক্ষেত্রে মানুষের মুখের পেশি নানাভাবে ব্যবহার করতো। এছাড়াও হাসি, মুখবিকৃতি তুলে তাকানো এসবও ভাবপ্রকাশের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ।
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষ প্রতীকী ভাষার আশ্রয় নিল কিন্তুু সেখানেও বিপওি দেখা দিল। কারণ সব রকম ভাব প্রকাশ সম্ভব হচ্ছে না তাতে। এ সমস্যা সমাধানে মানুষ প্রতীকী ভাষায় বদলে উদ্ভাবন করলো কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ। মানুষ কন্ঠস্বরের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণে উপকার পেল।বিভিন্ন রকম শব্দ করে মনের ভাব প্রকাশ করতে থাকলো মানুষ। কণ্ঠস্বরই সৃষ্টি করলো শব্দ। মনের ভাব প্রকাশে ভাষাই শ্রেষ্ঠ পথ-এ উপলব্ধি টের পেল মানুষ অনেক পরে। কণ্ঠস্বর থেকে শব্দ, শব্দে শব্দে বাক্য-অর্থাৎ কথ্য ভাষাই তখন মানুষের সঙ্গি হলো। এত কিছুর পরও যেন মানুষের ভাব প্রকাশ পুরোপুরি হলো না। ফাঁক থেকেই গেল। কথা বলার পাশাপাশি যদি বাক্যগুলোকে ধরে রাখা যেত!
কবে থেকে প্রথম লেখার প্রচলন হয়েছিল তা জানা না গেলেও চিন্হ বা ছবি আঁকার জন্য আদিম মানুষ আবিষ্কার করেছিল চক, কয়লা,পাতার নির্যাস থেকে তৈরি জিনিসপত্র। এছাড়া আরো কিছু উপকরণ তারা আবিষ্কার করেছিল,যা দিয়ে সমতল ভূমিতে আঁকা হতো নানা ধরনের চিন্হ। গুহাচিত্র সে কথারই সত্যতা প্রমাণ করে।
গুহামানবদের আবিষ্কৃত ছবি ও চিন্হ আঁকার উপকরণ ছিল উন্নতমানের। হাজার বছরের পুরনো গুহাচিত্র আজও উজ্জল বৈশিষ্ট্য বর্তমান। গুহাচিত্রে দেখা যায় – গুহামানব তাদের সময়কালে সংঘটিত নানারকম ঘটনা, কাহিনীর চিত্র বর্ণনা করে গেছেন। এসবের মাধ্যমে নানা ভাবনা,চিন্তা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা ছিল বোঝা যায়। ভাষা বিজ্ঞানিদের ধারনা, গুহাচিত্রই ছিল লেখা শুরুর প্রথমিক চিন্তা ভাবনা। প্রাচীন মানুষ গুহাচিত্রের মাধ্যমে তাদের অব্যক্ত কথা ও ভাবকে মেলে ধরতে চেষ্টা করেছিল পরবর্তী সময়ের মানুষের জন্য।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে আরো দেখা যায় এসব গুহা চিত্র। গুহাচিত্রে প্রায় তিন হাজার বছর ধরে প্রাচীন মিশরীয়রা লেখালেখির সূক্ষ্ম পদ্ধ আবিষ্কার করেছিল। এ পদ্ধতি তথ্য প্রকাশ বা গল্প বলার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। এই পদ্ধতিই শেষ পর্যন্ত প্রতীক বা চিহ্নে রুপান্তরিত হয়েছিল। প্রাচীন মিশরের এসব চিহ্ন লিখনকে বলা হতো ‘হায়রোগ্লিফিকস’ অর্থাৎ ‘পবিত্র লিখন’। হায়রোগ্লিফিকস প্রথমে তাঁবু, মন্দির ও স্মারক স্তম্ভে ব্যবহার করা হতো। এরপর থেকে অবশ্য পৃথিবী জুড়েই শুরু হয়েছিল লেখালেখির যাত্রা। বর্তমানে খুব সহজেই মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। বর্তমানে আমরা প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই লেখালেখির সাথে জরিত। কিন্তুু প্রাচীন কালে মানুষ প্রতিকি ভাষার আশ্রয় নিয়েছিল কিন্তু তারা সেখানে বিপওি দেখলো। তারপর এ সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ প্রতীকি ভাষার বদলে কন্ঠস্বরের মাধ্যমে ভাষা প্রেরন করতে লাগলো। কণ্ঠস্বর থেকে সৃষ্টি হলো শব্দ- শব্দ থেকে বাক্য অর্থাৎ কথ্যভাষার উৎপওি হলো। এভাবেই কালের বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে লেখালেখির উৎপত্তি হয়েছে। বর্তমানে আমরা লেখালেখির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। লেখালেখির ওপর আমরা অনেকাংশে নির্ভরশীল।