শরীর ও মন ভালো রাখার মহাঔষধ সম্পর্কে জানুন, হাসির উপকারিতা

মানুষ প্রথম কথা বলার আগে থেকেই হাসেহাসি ছাড়া কোনো মানুষ স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকতে পারে না।সবাই হাসে।পার্থক্য শুধু এক জায়গাতেই “কেউ হয়তো বেশি হাসে আর কেউ না কম”।

একটা শিশু জন্মের পর থেকেই হাসে।তখন সে না কিছু বুঝে না কিছু বলতে পারে।কিন্তু সে হাসি টিকই দিতে পারে।
এর কারণ কি?

গবেষণায় দেখা গেছে শিশুরা সাধারণত জন্মের কিছুদিন পর থেকেই নিঃশব্দে হাসতে শুরু করে এবং ৩মাস বা তার কিছুদিন পর থেকে সশব্দে হাসতে শুরু করে।  শিশুরা আপনার আমার মতো কোনো ফানি ভিডিও দেখে বা কথা শুনে হাসে না।
তারা মন থেকে হাসে।
কখনও বা অন্যের হাসি দেখে বা অন্যেরা কি করে তা দেখে শিশুরা হাসে।তাদের হাসির কারণ যাই হোক না কেনো তাদের হাসি দেখলে যে কারো মন ভালো হতে বাধ্য। তাহলেই বুঝেন হাসির কি এমন পাওয়া!

হাসি একটা সংক্রমিত বিষয়।ধরুন আপনার বন্ধু কোনো একটা বিষয় নিয়ে প্রাণ খুলে হাসছে,আপনি সে কারণ জানেন না তাও তার হাসি দেখে না হেসে কোনোভাবেই থাকতে পারবেন না।হাসি পরোক্ষণেই অন্যের মুখে হাসি ফুটাতে সক্ষম। গবেষকরা নানাবিধ গবেষণা করে দেখেছেন যে হাসি নানা দিক দিয়ে আমাদের শরীরের গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

হাসির নানাবিধ উপকার রয়েছে। যেমনঃ

১.টেনশন দূর করে এবং মনকে প্রশান্তি দেয়ঃ

হাসলে মানসিক চাপ কমে যায় এবং মনকে প্রশান্তি দেয়।হাসলে মানসিক চাপ কমে যায় এবং মনকে প্রশান্তি দেয়।হাসলে আমাদের শরীরে ‘এন্ডোরফিন‘ নামক এক হরমোন নিঃসৃত হয় যা ‘কার্টিজেল‘ হরমোনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় বহুগুণে(কার্টিজেল হরমোন কে স্ট্রেস হরমোনও বলা হয় কারণ,এটি মানসিক চাপ ও দুচিন্তা দূর করতে সাহায্য করে)।যার কারণে মানসিক চাপ দূর হয়ে যায় এবং মন প্রাশান্তিতে ভরে যায়। এরজন্যে বলবো মন খুলে হাসুন।

২.হাসি রাগ-অভিমান কমাতে সাহায্য করেঃ

হাসি রাগ ও অভিমান কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে আর সেটা খুব দ্রুত।বলা হয় যে,হাসির মত কোনো কিছুই এত দ্রুত রাগ কমাতে পারেনা।কোনো সমস্যার নেগেটিভ দিকটা অবহেলা করে পজিটিভ দিকটায় মজার বিষয়গুলোয় নজর দিলে উক্ত সমস্যা র সমাধানও বের হয়ে যেতে পারে।তাই সব পরিস্থিতিতেই মন খারাপ করে হতাশ হয়ে বসে না থেকে সেই পরিস্থিতিতেও কোনোভাবে হাসির চেষ্টা করুন এতে করে হাসির জন্য নিসৃত হরমোন আপনার দুচিন্তাকে দূর করে আপনার মাথাকে এবং মনকে সঠিক উপায় দিবে সে পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার। কথাগুলো অবাক লাগতে পারে অনেকের কাছে।কিন্তু ভাই কথাগুলো আমার না,হাসি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য এগুলো।

৩.রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়ঃ

হাসি ‘এন্ডোরফিন‘ হরমোন নিঃসৃত করার ফলে মানবদেহের স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন এবং কার্যকারীতা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয় এবং রোগপ্রতিরোধকারী উপাদান ‘শ্বেত রক্তকণিকার’ উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
তাই বলি বেশি বেশি হাসুন।হাসি আমাদের জন্যে ঔষধস্বরূপ।

৪.উচ্চরক্তচাপ কমায়ঃ

হাসি উচ্চরক্তচাপ কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।কেননা,হাসার ফলে শরীরে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায় যার ফলে রক্তনালিগুলো প্রসারিত হতে থাকে এতে শিরা-ধমনীর উপর চাপ খুবই কম পড়ে।আর তাই উচ্চরক্তচাপ তুলনামূলক ভাবে অনেক কমে যায়।

৫.সুসম্পর্ক গঠনে ভূমিকা রাখেঃ

একজনের হাসি দেখলে অন্যজন না হেসে থাকতে পারে না আর তাই দুটো মানুষ যদি একসঙ্গে হাসে তাহলে একজনের প্রতি আরেকজনের অনুরাগ বেড়ে যাবে এবং দুজনের মাঝে মনোমালিন্য হওয়ার চান্স অনেক পরিমাণে কমে যাবে।এতে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে।
আর প্রত্যেকটা মানুষই চায় কেউ থাকে হাসাক,আনন্দ দিক।

৬.মনোবল বাড়ায়ঃ

কোনো একটা কঠিন কাজ অনেক চেষ্টা করেও পারছেন না?আপনার মন খারাপের জন্যে সঠিকভাবে পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছেন না?কোনো বিষয় নিয়ে হতাশ?
তাহলে শুনুন এই সবগুলোর ঔষধ একটাই।তা হলো হাসি।
একটু প্রাণ খুলে হেসেই দেখুন না আপনার সব গ্লানী, বিরক্ত, হতাশ কোথায় পালায় এবং মনোবল শক্ত হয় ফলে যেকোনো কাজে অফুরন্ত মানসিক শক্তি আসে।
তাই মনখুলে হাসতে শিখুন।

৭.একঘেয়েমি দূর করেঃ

আপনি সন্ধ্যা থেকেই একটানা পড়ছেন এবং এখন আপনার আর ভাললাগছেনা পড়তে,একঘেয়েমি লাগছে।অথচ আপনার পড়তেই হবে।
এমথাঅবস্থায় আপনি যা করতে পারেন,
পড়াা থেকে বেশ কিছুক্ষণেরর জন্যে বিদায় নিয়ে বন্ধুদের সাথে বা পরিবারের কারো সাথে গালগপ্পে জড়িয়ে জান এবং গল্প করতে করতে হাসুন তারপর দেখবেন আপনার ভিতর পূর্ণ মনোশক্তি চলে এসেছে এবং সাথে আত্ববিশ্বাসও।তারপর আবার অফুরন্ত জীবনীশক্তি নিয়ে পড়তে বসবেন।

অবশেষে এটাই বলবো হাসি এমন এক মহাঔষধ যা তৎক্ষনাৎভাবে আপনার মন থেকে হাজার গ্লানি, বিরক্তি,হতাশা,দুচিন্তা বের করে দিয়ে অপনাকে সজীবতা এবং প্রফুল্লতা দিবে। হাসি সুখ,আনন্দ ও সুস্থতার প্রতিকস্বরূপ।

জীবনকে ভালোভাবে উপভোগ করতে হলে বেশি বেশি হাসুন, হাসতে শিখুন এবং অন্যকেও হাসান। সবটা পড়া জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম। 

Related Posts

11 Comments

মন্তব্য করুন